হুলহুমালে দ্বীপের হোটেল থ্রি-ইনের সামনে নেমে পিছন ঘুরে দেখি বাংলাদেশ হাই-কমিশনের অফিস; বুঝলাম, এই দ্বীপের স্ট্যাটাস অন্যরকম! এটি একটি আর্টিফিশিয়াল দ্বীপ; মূলতঃ আবাসিক ভবন ও বড় বড় অফিসিয়াল কর্মকান্ডের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে।
মালে যেমন অতি ব্যস্ত শহর, এখানে মোটেই তেমন নয়; এটি একেবারে শান্ত। আমার মতে, মালে হচ্ছে আমাদের গুলশান আর হুলহুমালে হচ্ছে আমাদের বারিধারা।
আরেকটি বিষয় ভালো লাগলো; এই হোটেল থেকে এক বিল্ডিং পরেই হুলহুমালে বীচ। দুপুর একটায় হোটেলে এন্ট্রি নিলাম; যথারীতি সব বাংলাদেশী স্টাফ! দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে বীচে চলে গেলাম; খুব সুন্দর এই বীচের পানি।
ঘন্টাখানেক ঝাঁপিয়ে হোটেলে ফিরে এবার জাকির ভাইয়ের ভাতের হোটেল খুঁজতে বের হলাম। মোটামুটি ১০ মিনিট হেঁটে পাওয়া গেল; খুব সুন্দর আয়োজন তাদের, নানান ধরনের তরকারি পাওয়া যায়। মাফুশি থেকে এখানে খাবারের খরচ কম; ৪৫ রুফিয়া করে নিলো।
এরই মধ্যে একটি দূর্ঘটনা ঘটে গেছে! আমার এজেন্ট আমাকে হোয়াটসএপ করেছে, আমার আগামীকালের মালে থেকে কলম্বো ফ্লাইট একদিন পিছিয়েছে, কারণ, পরের দিন কলম্বো থেকে ঢাকা ফ্লাইটটি ক্যানসেল হয়েছে!
বিপদ তখনো আঁচ করে উঠতে পারিনি; এজেন্ট জানালো, এই একদিন হুলহুমালেতে থাকার খরচ পুরোটাই আমাকে বহন করতে হবে! এই অঞ্চল হলো বারিধারা; এখানে ১২০ ডলারের নীচে ফ্যামিলি রুম মেলে না! ফলে, ফেসবুক বন্ধু আমিনুল ভাইয়ের শরণাপন্ন হলাম; তিনি ইতোপূর্বে ৬ বছর মালদ্বীপে ছিলেন।
ওনার পরিচিত এক ভাইয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা হলো; ৭০ ডলারে একটি ফ্যামিলি রুম মিলেছে, সব মিলিয়ে ১২ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে, এমন মানসিক প্রস্ততি নিয়ে নিলাম।
রাতে এক মালিদিভিয়ান রেস্টুরেন্টে দুনিয়ার অখাদ্য খেয়ে যখন সেই হোটেলে বুকিং মানি দিতে গেলাম; বাংলাদেশী ম্যানেজার বলল, ভাই, আপনার মালে থেকে কলম্বো ফ্লাইট কিন্তু ক্যানসেল দেখাচ্ছে না! আমি তখন তাকে কাল সকাল পর্যন্ত আমাকে সময় দেবার অনুরোধ করলাম; সে রাজি হলো।
এই পরিস্থিতিতে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিলাম; কালকে ভোরে এয়ারপোর্টে যাব, ফ্লাইট যেহেতু ক্যানসেল এখনো হয়নি, গিয়ে দেখি কি হয়! উল্লেখ্য, একটি ওয়েবসাইট আছে, মালদ্বীপে ওঠানামার সব ফ্লাইটের স্ট্যাটাস এখানে দেখা যায়। যদি কলম্বো যেতে পারি, তাহলে তো গেলাম, না যেতে পারলে এসে নতুন হোটেলে উঠব।
সারারাত বলতে গেলে ঘুম এলো না; আসার কথাও না! ভোরে আমার হোটেল থেকেই একটা ট্যাক্সি ডেকে দিল; ৮৫ রুফিয়া ভাড়া নিল। এয়ারপোর্টে যেখান দিয়েই যাচ্ছি, এন্ট্রি মিলছে, আমার ফ্লাইট নাম্বারও চেক-ইন দেখাচ্ছে!
ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম; চেক-ইন কাউন্টারে পৌঁছালে আমাদের পাসপোর্ট চেক করে শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স এর অফিসার জিগ্যেস করলেন, স্যার, আপনি কি এমন কোন মেইল পেয়েছেন যে আপনার ফ্লাইট ক্যানসেল হয়েছে? কলিজাটা ছ্যাঁত করে উঠল!