মালদ্বীপ-শ্রীলংকা | এক টিকেটে দুই ছবি (পর্ব ০৩)

মালদ্বীপ-শ্রীলংকা | এক টিকেটে দুই ছবি (পর্ব ০৩)

মালদ্বীপ ১১৯৬ টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত যার মধ্যে মাত্র ২০০টিতে মানুষের পদচারণা আছে। এর মধ্যে মাত্র তিনটি দ্বীপে সড়কপথে যোগাযোগ আছে; মাঝখানে আছে হুলহুলে দ্বীপ, যেখানে আছে ভ্যালেনা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট আর এই দ্বীপের দুই পাশে একটি ব্রীজ দ্বারা কানেক্টেড দুটি দ্বীপ আছে যাদের নাম মালে ও হুলহুমালে।

এর মধ্যে মালে হলো রাজধানী যেটি অত্যন্ত ব্যস্ত শহর আর হুলহুমালে হলো আবাসিক ও হাই-কমিশনের মত অফিসে ঠাসা, যেটি খুবই শান্ত ও গর্জিয়াস; আমার মতে, মালে হলো আমাদের গুলশান আর হুলহুমালে হলো বারিধারা!

এয়ারপোর্ট থেকে যখন বেরিয়েছি, তখন সাড়ে দশটা বাজে; আমাকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে, বিকেল তিনটায় সরকারি ফেরি যাবে মাফুশি আইল্যান্ডে, খরচ মাত্র ২ ডলার! গনগণে সূর্য, বাতাসে প্রচুর আর্দ্রতা; খুব কষ্ট হচ্ছিল। এর মধ্যে এক লোক এসে ইংরেজিতে জিগ্যেস করল, তোমরা কোথায় যাবা? বললাম, মাফুশি।

তিনি বললেন, যদি স্পিড বোটে যেতে চাও, তবে এভাবে ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকলেই যেতে পারবে না; তোমাকে পিছনে গিয়ে কিছু রিপ্রেজেন্টেটিভ আছে, তাদের সাথে দেখা করতে হবে, তারাই তোমার বোট ঠিক করে দিবে। লোকটাকে দালাল ভেবে তার কথায় সায় না দিয়ে একটা কাউন্টারে গেলাম; এখানে অনেক কাউন্টার আছে যারা রিসোর্ট আইল্যান্ডকে রিপ্রেজেন্ট করে।

কাউন্টার থেকেও একই কথা বলা হলো। সেই মোতাবেক কাউন্টারের সাইডে গিয়ে দেখি, এক মেয়ে কিছু হোটেলের নাম সম্বলিত বোর্ড হাতে নিয়ে লোকদের ডাকছে; এর অর্থ, এই হোটেলে যারা যাবে, তারা এই মেয়েটার নির্দেশিত বোটে উঠবে। আমি বললাম, আমি সানরাইজ বীচ হোটেলে যাব, সে বলল, তাহলে তোমাকে ঐ লোকটার সাথে যেতে হবে।

আমি দাঁড়িওয়ালা এক লোকের হাতে পড়লাম; সে বলল, তুমি ১১ঃ২৫ এ এখানে আসবা, সাড়ে এগারোটায় তোমার বোট ছেড়ে যাবে। খরচ এডাল্ট ২৫ ডলার করে আর বাচ্চার জন্য ১৫ ডলার। হিসেব করে দেখলাম, আমাদের চারজনের জন্য দিতে হবে ৯০ ডলার, যা ১২০ টাকা করেও যদি ধরি, তাতে হয় প্রায় ১১,০০০ টাকা!

আর যদি সরকারি ফেরিতে যাই, তাহলে খরচ হবে ২২ রুফিয়া করে ৮৮ রুফিয়া, সর্বোচ্চ ৮ টাকা করে ধরলেও ৭০০ টাকা! এই দুই হিসেবের মধ্যে সামঞ্জস্য করা কঠিন। বাজে ১০ঃ৪৫ মিনিট, স্পিড বোটে যাবার সিদ্ধান্ত নেবার জন্য হাতে সময় আছে ৪৫ মিনিট। এই সময়টায় ট্রলি নিয়ে চলে গেলাম সমুদ্রের পাড়ে, হাঁটতে হাঁটতে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।

ভাবলাম, এইসব লাগেজ নিয়ে মালে গিয়ে আগামী চার ঘন্টা কোথায় ঘুরব, কোথায় খাবো, এই গরমে কিভাবে সময় পার করব? তারও চেয়ে বড় কথা, তিনটায় রওনা দিয়ে সরকারী ফেরি যদি পাঁচটায় পৌঁছায় তাহলে তো দিনটাই মাটি হয়ে গেল; হোটেলে যেতে যেতে সন্ধ্যা হলে আজকে আর সমুদ্রস্নান হবে না, নামেই কেবল মাফুশিতে থাকা হবে।

এই ভাবনাটাই সিদ্ধান্ত নিতে সহজ করে দিল, আমরা স্পিডবোটে মাফুশি চলে যাব এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম; মূলতঃ সময়টাকে টাকা দিয়ে কিনে নিলাম, কারণ, জীবন থেকে আমি জানি কখনো কখনো সময়কে টাকা দিয়ে কিনে নিতে হয়।

Scroll to Top