স্পিডবোট চড়ার প্রতি ভীতি অনেকেরই আছে, তবে এটি আসলে আমাদের দেশের খোলা স্পিড বোট নয়; এটিকে বরং ইয়ট বলা ভালো, ভিতরে বসার সুন্দর ব্যবস্থা আছে, চড়তে খুবই ভালো লাগে।
স্পিডবোট স্পিডবোটের গতিতেই এগিয়ে চলল, পাশ দিয়ে তীব্র বেগে পানি কেটে কেটে যাচ্ছিল। কয়েকমিনিট চলার পরেই এটি স্টপেজ ধরল মালে’তে; এখান থেকে কিছু প্যাসেঞ্জার নিয়ে মাফুশি’র দিকে যাবে। মোট ৫০ মিনিট মত সময় লাগলো; ২৭ কিমি পথ। আর সরকারি ফেরিতে লাগে ১০০ মিনিট, এটুকুই পার্থক্য।
বোট থেকে নামতেই সানরাইজ বীচ হোটেলের রিপ্রেজেন্টেটিভরা আমাদের রিসিভ করল; ছোট একটা পিকআপে করে লাগেজ যাবে আর আমরা হেঁটে যাবো, ৫ মিনিট লাগবে। দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি মূহুর্তে উবে চলে গেল মাফুশি দ্বীপের রাস্তার দু’পাশের সৌন্দর্য দেখে।
এর মধ্যেই বামে তাকিয়ে দেখি, অনেকেই নিজেদের মত গোসল করছে, ওয়াটার রাইড চড়ছে, প্যারাসেইলিং করছে আর সাদা চামড়ার বিদেশীগুলো গোসল সেরে প্রায় উলংগ অবস্থায় হাঁটতে হাঁটতে হোটেলে যাচ্ছে; আমরা অন্য দিকে তাকিয়ে এসব না দেখার চেষ্টা করছি।
রিপ্রেজেনটেটিভদের দলে একটি মেয়ে আছে, দেখতে ইন্ডিয়ানদের মত; সে সা’দের হাত ধরে হাঁটছে আর তাদের মধ্যে নানান ধরনের বাতচিত হচ্ছে। সানরাইজ বীচ হোটেলটি একেবারে শেষ মাথায় যেখানে পূর্ব বীচ আছে।
এই হোটেলের বিশেষত্ব হলো, এর সামনে একটি বিশাল খোলা প্রান্তর আছে এবং ডানে বাচ্চাদের খেলার পার্ক আর তার পাশে এক্সারসাইজ জোন আছে। আর এর পরে আছে সীমাহীন এক মহাসাগর যার ঢেউ কূলে আছড়ে পড়ছে নিরন্তর। সম্ভব হলে আপনারা এই হোটেলের বীচ ভিউ রুম নিবেন, পয়সা উসুল হয়ে যাবে।
হোটেলের ফর্মালিটি শেষ করে গোসল করতে বেরিয়ে গেলাম। প্রথমেই গেলাম যে বীচটা দেখে এসেছিলাম সেখানে; পানি অতি লবণাক্ত। আমাদের কক্সবাজারের পানি যতটা লবণাক্ত, সোনাদিয়া বীচের পানি তার তিনগুন বেশী লবণাক্ত; এখানে সোনাদিয়ার মত অবস্থা।
তার উপর পানির নীচের উইডগুলো খড়কূটো আকারে ভেসে পাড়ে আসছে। এখানে কিছুক্ষণ গোসল করে পাশের এলাকায় যেতে উদ্যত হলাম; যাব্বাবা, এটাই তো সেই বিকিনি বীচ! মার্ডার কেস; বউ ছেলেদের নিয়ে ঢুকে পড়েছিলাম, পড়ি কি মরি করে ফিরে এসে অন্য পথ ধরলাম।
সর্বশেষ আশ্রয় নিলাম আমাদের হোটেলের সামনের পূর্ব বীচে; সত্যি বলতে, গোটা মাফুশিতে এই জায়গার পানির মত পরিষ্কার আর স্বচ্ছ পানি অন্য কোথাও নেই। সাধ মিটিয়ে গোসল করে হোটেলে ফিরে লাঞ্চ করতে বের হলাম।
এখানে লাঞ্চ করার জন্য চারটি বাংলাদেশী হোটেল আছে; জহির, আসলাম, শিপন ও রুবেল এই চারজন এগুলো চালায়। বলে রাখা ভালো, গোটা মালদ্বীপে এমন কোন হোটেল, রেস্টুরেন্ট, দোকান, বোট নেই যেখানে বাংলাদেশী নেই; মালদ্বীপ আসলে চালায়ই বাংলাদেশীরা।
আজকের গন্তব্য জহির ভাইয়ের হোটেল; এই হোটেলের নাম বন্ধু, দেখতে আহামরি কিছু নয়, হোটেল ছালাদিয়া টাইপের। আমরা যখন গিয়েছি তখন দুপুর আড়াইটা বাজে; কিছু বাংলাদেশী শ্রমিক ভাইরা খাচ্ছিলেন আর একটা বাংলাদেশী ট্যুরিস্ট পরিবার ছিল।
খাবারের সিস্টেম প্রথমে ধরতে পারিনি; বিল দেবার সময় ধরলাম। মূল সিস্টেম হলো, এখানে ভাত আর ডাল ফ্রি; সাথে একটি কারি নিতে হবে। যদি সেটি গরু, চিংড়ি বা অন্য মাছের হয় তবে বিল আসবে ৬০ রুফিয়া আর যদি খাসি দিয়ে খান তবে আসবে ৮০ রুফিয়া।
এর বাইরে আপনি অন্য যে কোন ভাজি বা ভর্তা নেন, এক্সট্রা ৫০ রুফিয়া করে দিতে হবে। এখানেই ধরাটা খেয়েছি; মনের আনন্দে বীফের সাথে মিষ্টি কুমড়া, এটা সেটা নিয়ে খাওয়া কমপ্লিট, বিল দেবার সময় বলল, সামান্য একটু মিষ্টি কুমড়ার ভাজি ৫০ রুফিয়া বা ৪০০ টাকা!
যাই হোক, লার্নিং হলো, জহির ভাইকে বিদায় দিয়ে বের হলাম এবং খানিক রেস্ট নিব বলে হোটেলে ফিরলাম।
ইতোমধ্যেই আমি স্পিডবোট চার্জ পে করেছি ৯০ ডলার; আমার কাছে ১০০ ডলারের একটি নোট ছিল। আর দেশ থেকে ৭.৮ টাকা করে রুফিয়া নিয়ে গিয়েছিলাম ৫০০০ এর উপরে।
সেখানেই কথায় কথায় জানলাম, যদিও সরকারি রেটে ১০০ ডলারে ১,৫৪২ রুফিয়া পাওয়ার কথা তবে অনেক দোকানেই, ইন ফ্যাক্ট সানরাইজ বীচ ছাড়া আর সব জায়গায় রেট পাওয়া যায় ১৭০০-১৭৫০ রুফিয়া! বুঝলাম, ধরা আমি এক জায়গায় খাইনি, জায়গায় জায়গায় খেয়েছি!