দামতুয়া ঝর্ণার বিশালতায় – (Damtua Waterfall Alikodom)

দামতুয়া
দামতুয়া ঝর্ণা

দামতুয়া ঝর্ণার বিশালতায়

দামতুয়া ঝর্ণা: মারায়নতং থেমে নেমে নাস্তা করতে করতে দিনের কর্মসূচী নিয়ে আলাপ এগোলো; গোটা টিম দুইভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে, এক ভাগ যাবে ডিম পাহাড়, আরক ভাগ যাবে দামতুয়া।

মারায়নতং পর্যন্ত গিয়ে দামতুয়া ঝর্ণা না দেখে ফিরে আসতে ইচ্ছে হচ্ছিল না; তাই ঝর্ণাপ্রেমী হিসেবে আমি দামতুয়া যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। দেখলাম, যেতে দুই ঘন্টা লেগেছে, আসতে লেগেছে তিনঘণ্টা।

এটা একটা কঠিন ট্রেইল, ছোট বড় মিলিয়ে ৬/৭ টা পাহাড় ডিংগাতে হয়, তবে ঝর্ণা দেখার পর সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়! 

দামতুয়া যাবার কালে আমাকে ভিড়িয়ে দেয়া হয়েছে একটা গ্রুপের সাথে যেখানে দুজন মেয়ে আছে। আর্মি চেক পোস্টে গিয়ে তারা প্রশ্নের সম্মুখীন হলো; ছেলেদের সাথে তাদের কেবল বন্ধুত্বের সম্পর্ক, এর উপরে তাদের আর্মি যেতে দিতে চাইল না।

তারা বলল, আমরা আমাদের গার্ডিয়ানদের জানিয়ে এসেছি, চাইলে তাদের সাথে কথা বলতে পারেন।

যাই হোক, এরপর আর্মিরা শর্ত দিল, অবশ্যই বিকেল ৫ টার মধ্যে চেকপোস্ট ক্রস করতে হবে, নইলে আজকে তারা যেতে পারবে না; মেয়েরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিল।

আর্মি মোটামুতি নিশ্চিত ছিল, এই মেয়েরা দামতুয়া যেতে পারবে না; এদিকে মেয়েরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওখানে গিয়ে ছবি তুলে এসে আর্মিদের দেখিয়ে তবেই তারা আজ রাতে ঢাকা যাবে!

দামতুয়া ঝর্ণা
দামতুয়া

এরকম একটা পরিস্থিতিতে ট্রেকিং শুরু হলো এবং আমি বিপদে পড়ে গেলাম! মেয়েদের সাথে কেউ হেঁটেই পারছে না; এগুলোর সবগুলর বয়স ২৫-২৭, জোর কদমে হাঁটছে!

আমি এই ৪৫ বছর বয়সের ভারি শরীর নিয়ে তাদের সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা করছি; আমার দফারফা একেবারে সারা। এর জন্য মূলতঃ দায়ী আর্মিদের চ্যালেঞ্জ।

দামতুয়া

একসময় পোঁছে গেলাম! তখনো শীতের শেষ, এরপরও যে পরিমাণ পানি পেলাম তা আশাই করিনি। সেই পানিতে মনের সাধ মিটিয়ে গোসল করলাম; দামতুয়ার পানি যেখানে পড়ে সেখানে কোন ঠাই নেই, তবুও তার নীচে অনেকক্ষণ ভেসে রইলাম। এরপর এর খুমে সাঁতার কেটে ষোলকলা পূর্ণ করলাম।

Damtua

ফিরে আসতে সময় এক ঘন্টা বেশী লাগলো; লাগারই কথা, শরীর ছেড়ে দিয়েছিল। বিকেল সারে চারটার দিকে আমরা চেকপোস্টে গেলে আর্মিরা বেশ অবাক হলো। এরপর তাদের মধ্যে কি আলাপ হয়েছে তা আমার জানা নেই।

অতঃপর চান্দের গাড়িতে উঠে ফিরে এলাম ইয়াসিনের হোটেলে আর তৃপ্তি ভবে সন্ধ্যার আলো আধারিতে গোসল করে নিলাম সামনের পুকুরে। এরপর খাবার খেয়ে পরপূর্ণ তৃপ্তি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top