লাচুং থেকে ফিরে, এই ক্লান্ত শরীরে কিভাবে যে খেলাম আর কিভাবে নামাজ পড়লাম, নিজেই জানি না, তবু কাজগুলো করলাম। আগামীকাল ছাঙ্গু লেক (tsomgo lake) যাবার কথা; শুনেছি এটাও এক অসাধারণ জায়গা! রাতে ডাইনিং-এ এক বাংলাদেশী গ্রুপের সাথে দেখা হলো; তারা আজকে ছাঙ্গু লেক ঘুরে এসেছেন। জানালেন, এক্সট্রিম স্নো পেয়েছেন তারা সেখানে; আমি বুঝলাম, যে স্নো আমাদের ভিজিয়েছে, একই স্নো-ই তাদেরও ভিজিয়ে দিয়ে গেছে!
নাস্তা সেরে অপেক্ষা করছি ছাঙ্গু লেকের পারমিশনের জন্য; ড্রাইভার যথারীতি রোশান দা, তিনি মোট চারদিন থাকবেন আমাদের সাথে, আজ তৃতীয় দিন। আজকের গাইড হবে, অভিষেক; সে আমাদের জন্য চেক পোস্টে অপেক্ষা করছে।
রওনা দিলাম ছাঙ্গু উদ্দেশ্যে; পরিকল্পনা হলো, বিকেল ৩ঃ০০ টার মধ্যে ফিরে আসতে হবে, আজ বিকেলে এমজি মার্গে যেতে হবে, এ পর্যন্ত একবারও যাইনি। ছাঙ্গু লেকে যাবার রাস্তার মান অতি ভালো; দু’ধারের দৃশ্য একেবারে মন ভোলানো, পাহাড় বেয়ে বেয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে তিরতির করে উঠে চলেছে গাড়ি।
গ্যাংটকের উচ্চতা ৬,০০০ ফুট আর ছাঙ্গু লেকের উচ্চতা ১২,৩০০ ফুট। যেখান থেকে কেবল কার রওনা দেয়, সেটার উচ্চতা ১২,৯০০ ফুট আর কেবল কার যেখানে গিয়ে থামে সেটার উচ্চতা ১৪,৫০০ ফুট; এসব তথ্য সেখানকার সাইনবোর্ডেই দেয়া আছে।
ছাঙ্গু লেকের পাড়ে নেমেই বিহ্বল হয়ে গেলাম; এই ১২,০০০ ফুট উচ্চতায় এই অনিন্দ্য সুন্দর লেক কিভাবে সৃষ্টি হলো? আবার আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের অপার মহিমায় বিস্মিত হলাম। ইয়ামথাং ভ্যালির মতই, এই লেকের চারদিকে চার রকম দৃশ্য; এক পাশের কেবল বরফের পাহাড় যেখানে কেবল কার রয়েছে, তার উল্টোদিকে বরফের চাদরে মোড়া কালো রঙের পাহাড়।
লেকের পাড়ে সারি বেঁধে শুয়ে আছে বিশালাকার ইয়াক; এগুলোতে পয়সার বিনিময়ে চড়া যায়। আমাদের আগ্রহ ছিল না বলে দামটা জানা হয়নি; তবে অনেক নারী-পুরুষ আর বাচ্চারা চড়েছে এগুলোতে। প্রাথমিক বিস্ময়ের রেশ কেটে যেতেই আমরা সেখান থেকে বুট নিয়ে নিলাম ভাড়ায়; প্রতি জোড়া ১০০ রুপি করে।
এরপর ভিতরে প্রবেশ করে প্রথমে ছোট একটা বরফের পাহাড়ে উঠলাম আমি আর সা’দ; এরপর সেখান থেকে স্লাইডিং করে নেমে এলাম। তারপর হাঁটা পথ ধরে, বামে লেক আর ডানে বরফের পাহাড় রেখে এগিয়ে চললাম। এখানে একটা বিড়ম্বনা আছে; এই পথটি ইয়াকের পেশাব-পায়খানা দিনে ভরে থাকে, এর সমাধান হওয়া দরকার।
আবার, যে পথ দিয়ে মানুষ হেঁটে যায়, সেই পথেই ইয়াক আসা-যাওয়া করে; ইয়াকের জন্য ভিন্ন পথের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যাই হোক, সামনে এগিয়ে আরেকটি অনিন্দ্য সুন্দর পাহাড় পেলাম, অনেকেই উঠে গেছে তাতে; আমি আর সা’দও অনেকখানি উঠে গেলাম। পা বারবার দেবে যাচ্ছিল, তবু শেষ পর্যন্ত উঠতে পারলাম; একেকজন একেক ভঙ্গিতে ছবি তুলছে, সেটিও একটি দেখার মত দৃশ্য। এরপর গেলাম একেবারে লেকের কাছে; বাহ, কি সুন্দর শান্ত ও স্নিগ্ধ একটি লেক। ভাবতেই ভালো লাগলো যে, উইন্টারে এই লেকের পানি একেবারে বরফ হয়ে যায় আর সে সময় মানুশ এর উপর হেঁটে বেড়ায়; বিধাতার কি অপরূপ সৃষ্টি আর খেলা।
চোখের পলকে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে; জয়া আর ফাতেমার ছবি তোলা শেষ হচ্ছে না, এদেরকে পাওয়া গেল লেকের পাড়ে গিয়ে। এরপর এগোলাম ক্যাবল কারের দিকে; জনপ্রতি ৩৬০ রুপি করে টিকেট, তিন বছরের নীচে ফ্রি। আমরা চারটা টিকেট করে এগোলাম ক্যাবল কারের দিকে; জানি না কি বিস্ময় সেখানে অপেক্ষা করছে!