টুইন টাওয়ারের দেশ মালয়েশিয়া 

টুইন টাওয়ারের দেশ মালয়েশিয়া 

পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের আরেক নাম কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টার বা KLCC. নিঃসন্দেহে এটি একটি আইকনিক টাওয়ার। এই টাওয়ারের নীচেই রয়েছে আমাদের বসুন্ধরার মত একটি মার্কেট। এই টাওয়ারটির ঠিক পিছনেই রয়েছে জনপ্রিয় KLCC Park. এটিতে প্রবেশ এবং সব ধরনের কার্যক্রম একেবারে ফ্রি! মালয়েশিয়ায় যেখানে ফ্লাইওভারে উঠলে টোল দিতে হয়, সেখানে এত সুন্দর আয়োজন ফ্রি রাখাটা দর্শকদের জন্য বাড়তি পাওনা।

এখানে বাচ্চাদের জন্য রয়েছে ওয়াটার পার্ক এবং ঝর্ণা; অসংখ্য ছোট ছোট বাচ্চা নিজের মত করে আনন্দে মেতে ওঠে। এখানে পানির উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করা হয় ফলে কোন বাচ্চার ডুবে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। আছে দোলনা, রাইড, বাগান, টিলা, পানির ফোয়ারা ইত্যাদি। এটি ক্লান্ত মানুষদের জন্য একটি চমৎকার বিশ্রামের জায়গাও। এখান থেকেই দেখা যায় অদূরে অবস্থিত বিখ্যাত মিনারা কেএল টাওয়ার।

এখান থেকে চার কিলোমিটার দূরে রয়েছে কুয়ালালামপুরের জাতীয় মসজিদ। ফেরার দিন অসুস্থ শরীর নিয়ে সেখানেও একবার গেলাম। মসজিদটি সুন্দর এবং অত্যন্ত পরিপাটি তবে এর নির্মানশৈলি জটিল নয়। যথারীতি এটারও একটি সুউচ্চ টাওয়ার আছে! মালয়েশিয়া একটি হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের শহর; উচুঁ বিল্ডিং বা টাওয়ার এখানে দুধভাত। অত্যন্ত সুন্দর ও গোছানো এই শহরে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে।

অসম্ভব সুন্দর, উন্নত ইনফ্রাস্ট্রাকচারসমৃদ্ধ এবং গোছানো এই রাষ্ট্রটিতে রয়েছে নিজের মত করে চলার স্বাধীনতা! এখানে একইসাথে মেয়েরা অত্যন্ত ছোট পোশাক পরে এবং পাশাপাশি বোরখা বা হিজাব পরে চলাফেরা করছে, মদের ব্যবহারে নেই কোন নিয়ন্ত্রণ, ক্যাসিনোগুলো চলছে স্বমহিমায়! পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সিগারেট টানছে, নেই কোন সংকোচ কিংবা বিধিনিষেধ, চাইলেই ফাইভস্টার হোটেলগুলির ছাদে আয়োজন করা যায় মদ-জুয়া আর কনসার্টের আসর। অনেক মসজিদ যেমন রয়েছে তেমনি মন্দির, মূর্তি আর বৌদ্ধ মূর্তিও রয়েছে অগণিত। 

সবকিছু মিলে এই দেশকে কিছুতেই ইসলামিক কান্ট্রি বলা যায় না; এমনকি মুসলিম অধ্যুষিতও মনে হলো না! সব ধর্মের সহাবস্থান এবং প্র্যাকটিস এখানে এতই শক্তিশালী যে, আযানের সময়টুকু ছাড়া বোঝার উপায় নেই এখানে মুসলমানরা আদৌ আছে! বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা হল বুকিত বিনতাং। যেসব এলাকা দেখব বলে প্ল্যান করে দিয়েছিলাম, অসুস্থতার জন্য তা সম্ভব হলো না। সিংগাপুরের মুস্তাফা সেন্টারের মত এখানেও দুটি জনপ্রিয় চেইন শপ আছে; একটি হলো Mydin, আরেকটি হলো Hanifa Center. ২০১৯ এর অক্টোবরে গিয়েছিলাম সেখানে অফিসের কাজে এবং সাথে ঘুরাঘুরির জন্য দুদিন ছিল। কিন্তু অফিসিয়াল কাজ ঠিকভাবে করার পর জ্বরে আক্রান্ত হই, ফলে খুব বেশী আর ঘুরতে পারিনি; ভবিষ্যতে পরিবার নিয়ে আবার এই সুন্দর দেশটি ঘুরতে যাব, সেই প্রত্যাশা রেখে বিদায় নিলাম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top