নয়নাভিরাম লাভাসা ও পুনে (Lavasa & Pune)

নয়নাভিরাম লাভাসা ও পুনে (Lavasa & Pune)
নয়নাভিরাম লাভাসা ও পুনে (Lavasa & Pune)
নয়নাভিরাম লাভাসা ও পুনে (Lavasa & Pune)
নয়নাভিরাম লাভাসা ও পুনে (Lavasa & Pune)
নয়নাভিরাম লাভাসা ও পুনে (Lavasa & Pune)
নয়নাভিরাম লাভাসা ও পুনে (Lavasa & Pune)
নয়নাভিরাম লাভাসা ও পুনে (Lavasa & Pune)

ভারতের পুনে শহর থেকে সড়কপথে ৬০ কিমি দূরত্বে, সমতল ভূমি থেকে ২,১০০ ফুট উঁচুতে এক নয়নাভিরাম পাহাড়ি অঞ্চলের নাম ‘লাভাসা’! ২০১৭ সালের জুলাইতে তিনদিনের এক ট্রেনিং প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম সেখানে; মেঘ, বৃষ্টি, ঝর্ণা আর পাহাড়ের এমন অপরূপ সম্মিলন বোধকরি জগতে খুব কমই আছে। ঢাকা থেকে প্লেনে কলকাতা গিয়ে, সেখান থেকে ইন্ডিগো এয়ারে আড়াই ঘন্টা জার্নি করে পুনে শহরে এবং পুনে থেকে ট্যুরিস্ট কোচে রাতের আঁধারে প্রায় চার ঘন্টা ধরে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা পেরিয়ে লাভাসা হিলে পৌঁছেছি। 

আধুনিক এক অতি উচ্চমানের হোটেলে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে; ঘুমাতে গিয়ে টের পেলাম একটানা শব্দ হচ্ছে দূরে কোথাও, তবু দীর্ঘ জার্নির ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে পর্দা সরিয়ে বারান্দায় গিয়ে যে দৃশ্য দেখলাম, তার জন্য প্রস্তত ছিলাম না; আমার বারান্দা পেরিয়ে যে রাস্তা, তার ওপারে দেখলাম এক পাহাড় আর সে পাহাড়া থেকে বেয়ে আসা ঝর্ণার পানির কলকল ধ্বনিই ছিল কাল রাতের সেই অজানা শব্দ! একইসাথে লক্ষ্য করলাম, সেই পাহাড়ের উপর জমে আছে মেঘ, বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার অপেক্ষায়। ভাবতেই ভালো লাগছিল যে, এই রুমটাতে তিনদিন থাকব।

লাভাসা লেক (Lavasa Lake)

নয়নাভিরাম লাভাসা ও পুনে (Lavasa & Pune)

দার্জিলিংয়ের গঙ্গামাইয়া লেক কিংবা মিরিক অথবা আমাদের বগালেকের মত এখানেও রয়েছে একটি মনোরম লেক, যেটিকে বলে লাভাসা লেক। বৃষ্টি এখানে বলে কয়ে আসে না, মনে হবে ক্ষনে মেঘ, ক্ষনে বৃষ্টি; কি এক অনাসৃষ্টি! বাস্তবে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটা একটা আদর্শ জায়গা। অনেক ট্যুরিস্ট দেখেছি প্রতিনিয়ত যাওয়া-আসা করছে সেখানে।

আমাদের আগেই বলে দেয়া হয়েছিল রেইনকোট বা ছাতা নিয়ে যেতে, এটা একটা অদ্ভুত জায়গা, এখানে রোদ বৃষ্টির কোন ঠিক ঠিকানা নেই; বিশেষভাবে যেদিন আমরা লেকে র‍্যাফটিং করেছি সেদিন দেখেছি; হয়ত পাঁচ মিনিট ধরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে তারপর হটাৎ করে বৃষ্টি থেমে সূর্য উঠে যাচ্ছে, দেখা গেল এর পাঁচ মিনিট পর আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেল, এরপর আবার ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এলো, আবার সূর্য উঁকি দিল! জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই চোর পুলিশ খেলা এখানে চলতেই থাকে।

প্রকৃতির এই অপরূপ খেলা তিনদিন ধরে দেখার পর ফেরার দিন ঘনিয়ে এলো; সিদ্ধান্ত হলো একরাত আমরা পুনে শহরে থাকব। ট্যুরিস্ট কোচ সর্পিলাকার পথ ধরে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করল; আসার দিন রাত হয়ে গেছিল বলতে বুঝতে পারিনি এ রাস্তা কত সুন্দর, আজ চার ঘন্টা ধরে চারিপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে চোখ দুটি জুড়িয়ে গেল।

পাহাড় থেকে নেমে পুনে শহরে প্রবেশ করতেই অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, বিপূল সংখ্যক নারী, পুরুষের পাশাপাশি মটর সাইকেল চালাচ্ছে এবং তাদের আশি ভাগের হাত এবং মুখ সম্পূর্ণ ঢাকা, শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে! এত নারী পর্দা করছে দেখে ভীষণ ভালো লাগল। কিন্তু আরেকটু আগাতেই মনে খটকা লাগল, হাতাকাটা জামা পরেও কেউ কেউ মুখে নেকাব লাগিয়ে মটর সাইকেল চালাচ্ছে! এমন হওয়ার কথা নয়; তবে কি যেটাকে আমি পর্দা ভেবেছি আসলে সেটা রাস্তার ধূলাবালি থেকে মুখের ত্বক রক্ষা করার চেষ্টা? 

হোটেল স্টাফদের কাছে কেনাকাটার পরামর্শ চাইতেই তারা পাঠিয়ে দিল Phoenix সিটি মার্কেটে। প্রচুর ডিসকাউন্ট চলছে তবু কাস্টমার নেই। সিকিউরিটি চেকের পর মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই পাশ দিয়ে ছোট হাফপ্যাণ্ট পরা এক লম্বা তরুনী সাথে দুজনকে নিয়ে গটগট করে হেঁটে গেল; চোখ নামিয়ে নেয়ার আগেই সে চোখ পেরিয়ে চলে গেল! 

অধিকাংশ পন্যের দাম এখানে আকাশছোঁয়া। পুনে শহরের স্ট্যান্ডার্ড আমাদের ঢাকার চেয়ে অবশ্যই পুওর, সেই হিসেবে এই দাম বেনানান। মার্কেট থেকে বেরোতেই অটোচালকরা ঘিরে ধরল, সবার আগে যিনি ডাকলেন তিনি পাজামা-পাঞ্জাবি আর টুপি পরা, তার অটোতেই উঠলাম। অটোচালকের নাম আফসার, দিল্লি থেকে এসেছেন; হিন্দি ছাড়া আর কোন ভাষা বোঝেন না! অগত্যা জীবনে প্রথম নিজেই হিন্দি বললাম; আমি যা বললাম আর আফসার ভাই যা বুঝল তা কেবল আমাদের মধ্যেই রইল।

লাভাসা একটি অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন শহর, যেখানে ময়লার কোন অস্তিত্ব নেই। অথচ, আমাদের পাহাড় আর ঝর্ণায় গেলে দেখা যায় স্তুপ করা ময়লা। আমরা সচেষ্ট থাকবে, আমাদের কারনে যেন দেশে বা বিদেশে কোন ট্যুরিস্ট স্পট যেন ময়লা না হয়। হ্যাপি ট্রাভেলিং।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top