ঢাকার আশেপাশে ঘোরার জায়গা: রাতের তাজমহল দেখতে কেমন লাগে, তা দেখার শখ ছিল, সেই শখ পূরণ হয়েছে; পরিবার নিয়ে গিয়েছিলাম গত পরশুদিন। ঢাকার আশেপাশে একদিনে ঘুরার মত যে সব স্পট আছে, তার মধ্যে এটি সেরা; আমার মতে দ্বিতীয় স্থানে আছে সাফারি পার্ক-নূহাশ পল্লী এবং তৃতীয় স্থানে আছে জিন্দা পার্ক।
সোনারগাঁও (Sonargaon)
সোনারগাঁওয়ে নতুন গেছি, তা নয়, তবু অনেক কিছু নতুন লেগেছে; বিশেষতঃ জয়নুল যাদুঘর পেরিয়ে যে পিছনে এত খোলামেলা জায়গা আছে, তা বোধকরি এই প্রথম আবিষ্কার করলাম।
আছে ১৫০ টাকা দিয়ে ৫ জনের জন্য আধাঘন্টা নৌকা চালানোর ব্যবস্থা; প্রায় সবাই নিজেরাই নৌকা চালায়, আরো আছে বাচ্চাদের জন্য তিন ধরনের রাইড, সাথে নাগরদোলা।
সোনারগাঁওয়ের প্রবেশমুখেই পড়বে পুকুর পাড়ে দুটি ঘোড়সওয়ারসহ বিখ্যাত দৃশ্যটি, তার সাথেই লাগোয়া যাদুঘর; এটিতে প্রবেশ করতে ১০০ টাকা লাগে। সোনারগাঁওয়ে প্রবেশ টিকেট মূল্য ৫০ টাকা, এই টাকাতেই বিখ্যাত জয়নুল যাদুঘর দেখা যায়। জয়নুল যাদুঘরের আগে রয়েছে সুন্দর মনোরম সবুজ গালিচা, অবশ্য গোটা এলাকা জুড়েই রয়েছে সবুজের সমারোহ; শীত এসে গেলে হয়ত আর তা থাকবে না।
জয়নুল যাদুঘরে ২০০ বছর আগেকার অনেক জিনিসের নিদর্শন আছে; নকশী কাঁথা, সিন্দুক, পালকি, বাদ্যযন্ত্র, ঘটি, থালা, চালনি, হাতির দাতের অলংকার, মাটির তৈরি জিনিসপত্রসহ আরো অনেক কিছু।
যাদুঘর থেকে বেরিয়ে ডানে গেলে পাওয়া যাবে লেকে নৌকা চালানোর ব্যবস্থা, সেই লেকে টিকিট কেটে মাছও ধরা যায়। আরো সামনে এগিয়ে গেলে পাওয়া যাবে সবুজ মাঠের পাশে বাচ্চাদের রাইড। লেকের উপর দিয়ে অনেক বাঁশের সাঁকো আছে।
সামনে এগিয়ে একটি পুল পেরোলে পাওয়া যাবে আরেকটি লেকের পাশে বেশকিছু দোকান, যেখানে বেতের ও মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে।
তার পাশেই আছে বিভিন্ন ধরনের আচার, কদবেল ও পেয়ারা মাখা বানানোর দোকান। আরো সামনে এগিয়ে গেলে পাওয়া যাবে এক বিরাট মাঠ এবং এর চতুর্দিকে বসানো অজস্র দোকান; নানান ধরনের আকর্ষণীয় পণ্যের সমাহার আছে সেখানে, দোকানগুলোর রয়েছে বাহারী নাম, ধানসিঁড়ি, মধুমতি, হাস্নাহেনা, সন্ধ্যামালতি ইত্যাদি। এর পছনেই রয়েছে ভালোমানের পাবলিক টয়লেট, তবে কোন টাকা লাগে না।
বিশাল আয়তনের এই অপূর্ব সুন্দর জায়গাটিতে অনেকেই খাবার নিয়ে যায় এবং লেকের পাড়ে বিছানাচাদর বিছিয়ে খাবার খায়। বাচ্চাদের সাথে নিয়ে গেলে অবশ্যই খেলার সামগ্রী নিয়ে যাবেন; ফুটবল, ব্যডমিন্টন ইত্যাদি খেলতে পারেন সেখানে।
পানামনগর (Panam Nagar)
এখানে উল্লেখযোগ্য সময় পার করে আমরা গিয়েছিলাম পানামনগরে; বাচ্চাদের দেখিয়েছি ১২ শতকের স্থাপত্য, এটি সত্যিই বিস্ময়কর একটি অভিজ্ঞতা। পানাম নগরের শেষ মাথায় রয়েছে একটি পুকুর, তার ওপারে দেখা যায় একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ।
সেখান থেকে দ্রুত বেরিয়ে চলে গেলাম বাংলার তাজমহল দেখতে, প্রথম গিয়েছিলাম নয় বছর আগে। এটি একটি অনিন্দ্যসুন্দর স্থাপনা; দেখলে মন ভালো হয়, যদিও শেষ পর্যন্ত অরিজিনালটি দেখার অতৃপ্তি থেকেই যায়।
এখন এর কাছেই পিরামিডের রেপ্লিকা তৈরি হয়েছে, তাজমহলের মালিকই করেছেন; এক টিকিটে দুই ছবির মত ১৫০ টাকার এক টিকিটে তাজমহল আর পিরামিড দেখার ব্যবস্থা রেখেছেন। পিরামিডে যখন দেখতে ঢুকেছি তখন রাত নেমে গেছে; তাজমহলে যেমন আলোর বন্যা আছে, এখানে তেমনটি নেই।
তাই আলো আধারিতে পিরামিড দেখতে হলো। তবে এটিও বিরাট জায়গা নিয়ে করা হয়েছে, এখানে আছে একটি সিনেমা হল, কিছু পশুপাখি, বসার সুন্দর জায়গা ও অনেক ফুলের বাগান।
পিরামিডের ভিতরে ঢোকার সুযোগ আছে; এক দরজা দিয়ে ঢোকা ও আরেক দরজা দিয়ে বের হওয়ার নিয়ম। ভিতরে অনেক রাজা-বাদশার প্রতিকৃতি ও মমির রেপ্লিকা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আছে রাজারাণীদের পোষাক ও অলংকারের ছবি। জায়গাটা অন্ধকার বলে কারো কারো একটু ভয় লাগতে পারে।
পরামর্শঃ এই চারটি প্লেস একদিনে ভালোভাবে দেখতে চাইলে সকাল সকাল রওনা দিন, অবশ্যই দশটার মধ্যে সোনারগাঁও পৌছেঁ যাবেন। সম্ভব হলে খাবার রান্না করে নিয়ে যান, নতুবা গেটের বাইরে অনেক হোটেল আছে। সাথে বাচ্চা থাকলে খেলার সামগ্রী নিয়ে যাবেন আর একটা বিছানাচাদর বা বড় কোন কাপড় বসার জন্য। ঘাসের উপরও বসতে পারেন।