যতই সামনে এগোচ্ছি, সুলতান সুলেমানিয়া মসজিদ ততই দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল; আল্লাহু আকবার, কি বিশাল এই মসজিদ! বাহিরের দিকের নির্মাণশৈলী অন্যান্য মসজিদের মতই বা আয়া সোফিয়া বা ব্লু মস্কের মত, কিন্তু এটি আকারে বৃহৎ, টোটাল স্থাপনার আয়তন অনেক বেশী। কেবল গেটের বাইরে থেকেই এটির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকা যায়!
গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই প্রথমে অনেকগুলো কবর চোখে পড়ল, এগুলোর এপিটাফ আরবীতে লেখা। কবরস্থান পেরোলেই সুলতান সুলেমানের কবরস্থান পড়ে আগে; তখনো কিন্তু মূল মসজিদের গেটের কোন দেখা নেই!
আমি প্রথমে সুলতান সুলেমানের কবরস্থানেই গেলাম; একইরকম জাঁকজমকপূর্ণ এটিও, উপরে মিনার আছে যার ভিতরদিকে যথারীতি নকশা করা। সুলতান সুলেমানের কবর ছাড়াও এখানে ওনার আরো বেশ কয়েকজন ঘনিষ্টজনের কবর রয়েছে; আলোকসজ্জা বরাবরের মতই দ্যুতি ছড়াচ্ছে।
এখান থেকে বেরিয়ে পিছনের গেটে চলে গেলাম; সেই গেট পেরোলে, এক অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য চোখে ভেসে উঠলো। একটি বিশাল চত্তর রয়েছে এখানে, সেই চত্তরের বামে রয়েছে বিখ্যাত সুলেমানিয়া মসজিদ আর সোজা তাকালে চোখ যায় সাগরে ভাসমান জাহাজের দিকে আর তার ওপারে গর্বভরে দাঁড়িয়ে থাকা ইস্তাম্বুল শহরের একাংশের দিকে। কেবল ভাবছিলাম, রাতে এই এলাকা না জানি কত সুন্দর দেখতে লাগে।
শীতকাল শুরু হয়েছে, আকাশ প্রায়ই মেঘলা থাকছে, ক্ষণে ক্ষণে সূর্যের কিরণ দেখা দিচ্ছে। আমি চত্তর পেরিয়ে শেষ সীমানায় গিয়ে দাঁড়ালাম, অনেক মানুষ এই দৃশ্য উপভোগ করছে। সেখান থেকে বামে ফিরে পিছনে তাকালাম; আপন ঐশ্বর্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে সুলেমানিয়া মসজিদ।
আমি ঢুকেছিলাম সুলেমানিয়া মসজিদের দক্ষিণ পাশ দিয়ে। ধীরে ধীরে সামনে এগোলাম, মেইন গেট পেরিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলাম; এ কয়দিনে যা মসজিদ দেখলাম, এটি তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর! অবাক হয়ে কেবল এর বিভিন্ন দিকে তাকাতে লাগলাম আর এর বিশালত্ব কল্পনা করতে লাগলাম।
বিস্ময়ের পালা শেষ হলে বেরিয়ে এলাম এবং আবার সাগরের পানে দৃষ্টি দিলাম; টোটাল পারিপার্শ্বিকতা এক ধরনের নেশা তৈরি করে। এরপর একই গেট দিয়ে বেরিয়ে বিখ্যাত গ্র্যান্ড বাজারের দিকে হাঁটা দিলাম।
গ্র্যান্ড বাজারে মোট ৫,০০০ দোকান রয়েছে; এটি পর্যটকদের জন্য কেনাকাটার স্বর্গ। সব ধরনের পণ্য এখানে পাওয়া যায়; সাদা চামড়ার ট্যুরিস্টরা খুব দামদস্তর করে না বলে যেমন খুশী প্রাইস ট্যাগ লাগিয়ে রেখেছে দোকানীরা।
হাঁটতে হাঁটতে আমার স্ত্রীর সাথে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলছিলাম, সে সময় পাশ থেকে ‘দেশী’ বলে বাংলায় একজন ডাক দিলো। কথা শেষ করে গেলাম, পরিচিত হলাম, তাঁর নাম আকবর, বাড়ি রংপুর, এখানে খাবারের দোকানে কাজ করছেন ৭ বছর হলো; এটি হলো ইস্তাম্বুলের একটি বিখ্যাত চেইন শপ।
আরেকজন বাংলাদেশী আছেন একই দোকানে, নাম কামরুল, তাঁর বাড়ি যশোর; তারা দুজন আমাকে খুবই খাতির করেছেন এবং এখান থেকে আমি বেশ কিছু খাবার আইটেম কিনেছি কিসমিস ও এলাচিসহ। তারা প্রাইস ট্যাগ থেকে আমাকে প্রায় ২৫% ডিসকাউন্ট দিয়েছিলেন।
সেখান থেকে আকবর ভাই আমাকে নিয়ে গেলেন এক দোকানে যেখান থেকে শো-পিস কিনেছি। সেই সেলসম্যান হলেন আফগানী, চমৎকার ইংরেজী বলেন। সেখানে দামাদামি করে বেশ কিছু জিনিস কিনলাম; কারুকায করা প্লেট, মগ, শো-পিস, বাটি, ফ্লাওয়ার ভেজ ইত্যাদি। বলে রাখি, এখানে আমাদের নিউমার্কেটের মত দামাদামি চলে!
আমার কেনাকাটার যা বাজেট ছিল, তা এই দুই দোকানেই শেষ হয়ে গেছে। কেনাকাটার আইটেম সব একসাথে করার পর দেখি অনেক ওজন হয়ে গেছে। এত ওজন নিয়ে হাঁটাচলা করা যাবে না, অতএব হোটেলেই ফিরে যেতে হবে।
মেট্রোতে করে সব মাল-সামানা নিয়ে হোটেলে ফিরলাম। রাতে ডিনার করার জন্য বের হলাম; কাছেই একটি রেস্টুরেন্ট পেলাম যারা ভাত এবং গরুর গোস্ত বিক্রি করে; আর কি দেরি করার যায়? সাথে এই প্রথম পেয়াজ পেলাম; আহ, ষোলকলা পূর্ণ হলো!