![সাজেকস্তান (সাজেক+গুলিস্তান) 1 সাজেকস্তান (সাজেক+গুলিস্তান)](https://shaheenstravelstory.com/wp-content/uploads/2023/09/25176.png)
৫ বছর আগে সাজেক থেকে ফিরে লিখেছিলাম, ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য সাজেক ভ্রমণ মাস্ট! যারা একবারও যাননি, তাদের জন্য হয়ত এখনো কথাটা সত্যি, কিন্তু তখন যেমন মনে হয়েছিল, এখানে বারবার আসা যায় এবার আর তা মনে হলো না। ফ্যামিলি নিয়ে গিয়েছিলাম, তারা খুব এনজয় করেছে, তবে আমার মনে কিছুটা অতৃপ্তি ছিল
প্রথম কারণ, সাজেকের কংলাক পাড়ায় উঠে ডান পাশের শেষ মাথায় গেলে গোটা সাজেকটা একসাথে দেখা যেত; সেটি ছিল একটি অতি সুন্দর দৃশ্য! এবার সেই জায়গায় যেতে গিয়ে দেখলাম একটি ছোট গেট করা হয়েছে এবং গেটটি বন্ধ! ভিতরে আগে দুটি রিসোর্ট ছিল এখন অসংখ্য।
গেট বন্ধ থাকার কারণ জানলাম, তারা পাহাড়ের এই অংশ পুরোটা নাকি লিজ নিয়েছেন, রিসোর্টের নাম দিয়েছেন রক প্যারাডাইজ, ভিতরে গেলে তাদের গেস্টদের অসুবিধা হয়, এ কারণে তারা গেট তালা মেরে রাখে। আমি কেবল অবাক হয়েছি শুনে, একটা পাহাড়ের দর্শনীয় জায়গা রিসোর্ট বানানোর জন্য লিজ দেয়া হয়েছে কিন্তু সেখানে দর্শনার্থীদের ঢোকা নিষেধ! এটা বাংলাদেশেই সম্ভব!
দ্বিতীয় কারণ, আগে সাজেকে দুটি হ্যালিপ্যাড ছিল; একটা রাস্তার বামে বাংলাদেশ সাইডে, আরেকটি রাস্তার ডানে মিজোরাম সাইডে। আপনারা সম্প্রতি যে অতি সুন্দর সাদা মসজিদটি দেখছেন, সেটি করা হয়েছে বাংলাদেশ সাইডের হ্যালিপ্যাডের জায়গায়। মসজিদটি নির্মাণাধীন থাকায় এখনো কেউ সেখানে যেতে পারছে না, কিন্তু এই হ্যালিপ্যাডটি আকারে বড় ছিল। আমি এই হ্যালিপ্যাডটি মিস করেছি; আমার মতে মসজিদটি বর্তমান যে ছোট মসজিদটি আছে, সেটি ভেঙ্গে করা যেত।
তৃতীয় কারণ, পাহাড়ীদের মধ্যে সারল্য আছে বলে যে সত্য আমরা জেনে এসেছি, সেটাকে বাণিজ্যিক রূপ দিয়েছি আমরাই; বাঙ্গালী দোকানদারের কাছ থেকে রাতে পান খেয়েছি ৫ টাকা করে, সকালে তার পাশের পাহাড়ী মহিলা এক খিলি পান চাইল ১০ টাকা! কাছাকাছিই দোকান; তবু ১০ টাকার নীচে সে দিল না। পরে কিন্তু একই পান বাঙ্গালী দোকানদারের কাছ থেকে ৫ টাকায় কিনেছি; কোথায় সে পাহাড়ী সারল্য?
কক্সবাজারের মত নিত্যদিন রিসোর্ট/হোটেল গড়ে উঠছে। একটা চারতলা হোটেল নির্মানাধীন; দেখলে মনে হবে কক্সবাজারে হচ্ছে! পাহাড়ী প্রকৃতি এসব ইট-কাঠ-পাথরে মার খেয়ে যাচ্ছে। আরো অনেক কিছুই আছে সব বলা এক আসরে সম্ভব নয়; বিকেলে রাস্তার পাশে যেসব নাস্তা তারা বানাচ্ছে, সেগুলোর সব ডাবল দাম এবং কাস্টমারের কোন অভাব নেই।
প্রশ্ন হলো, সবই কি খারাপ? ভালো কিছু নেই? আছে; সেবার পুরাতন মসজিদের ট্যাংকিতে ওযুর পানি পাইনি, এবার পেয়েছি। খাগড়াছড়ির এমপি সাজেকে একটি সুন্দর রিসোর্ট বানিয়েছেন, সেই উপলক্ষ্যে সাজেকে এখন বিদ্যুৎ এভেইলেবল!
সব মিলিয়ে অত্যধিক মানুষ, শত শত গাড়ি আর তার হর্ণ, শত শত রিসোর্ট, অজস্র খাবারের দোকান মিলিয়ে এটাকে বাজার বানিয়ে ফেলা হয়েছে, যেখানে প্রকৃতির রঙ অনেকখানিই মিইয়ে গেছে; যেমনটা বান্দরবানের গহীনে গেলে পাওয়া যায়, তেমনটা আর এখানে নেই। তবু, এটি এমন আকর্ষণনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে যে, এ থেকে মানুষকে বিরত রাখা কঠিন হবে। এতকিছুর পরও আমি বলব, একবার গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এবং সেই সময়টা হওয়া উচিত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর!