ভ্রমণসংক্রান্ত পাগলামির শুরু আমার ২০০৫ সালে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পাগলামিটা করেছিলাম ২০০৭ সালে; টেকনাফ থেকে কক্সবাজার মোট ১০০ কিমি পথ হেঁটে গিয়েছিলাম সমুদ্রের পাড় ধরে। এটি সে সময় ছিল কল্পনার চেয়েও বেশী কিছু।
হটাৎ করেই দেখলাম ‘জাগো বাংলাদেশ’ নামে এক প্রতিষ্ঠান আহ্বান করছে, কারা কারা এই হন্টনে যোগ দিতে চায়। এক প্রাক্তন আর্মি অফিসারের নেতৃত্বে এই সংগঠন কাজ করছিল। অনলাইনে আবেদন করার পর নাম এসেছে; চাঁদা দিতে হয়েছে ৩,৫০০ টাকা, তাও আবার কক্সবাজার পর্যন্ত নিজের খরচে যেতে-আসতে হবে।
যাই হোক, ২০০৭ এর ২৩ শে মার্চ যাত্রা শুরু করি টেকনাফ থেকে, সাথে আছে নানান বয়সী নারী পুরুষ; যায়গায় যায়গায় ভলান্টিয়াররা পানি আর কোল্ড ড্রিঙ্কস নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমি প্রথমদিন সকালেই ক্যাপ হারিয়ে ফেলি; তারা তিনটি গেঞ্জিও দিয়েছিল তিনদিনের জন্য; বড় স্পন্সর ছিল গ্রামীনফোন, প্রথম আলো এরা।
দুই রাত থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল, সমুদ্রের পাড়ে তাঁবুতে। দুটি তাঁবুতে মোট ৫০০ জন, কলেরা হাসপাতালের মত বেড, একটি করে কাঁথা আর একটি করে বালিশ; সবাই হয়ে গেছিল বন্ধুর মত। খাবার আসত গাড়িতে করে, পরোটা আর মুরগীর গোস্তের শুকনা পিস, সেই খাবারে বালু ঢুকে যেত; সে এক কান্ড! তবে, পানি আর ড্রিঙ্কস এর কোন অভাব ছিল না।
মার্চ মাসের তীব্র গরমের আমার দুটি হাত ও মুখ পুড়ে গেছিল, পায়ের নীচে বিশাল ফোসকা পড়ে গেছিল। ফোসকার জন্য শেষ ১০ কিমি হাঁটতে পারিনি, টহলরত গাড়ি আমাকে তুলে নিয়ে এসেছিল। অফিসে ফেরার পর আমাকে লোকেরা দেখতে আসত, এমন হয়েছিল চেহারার অবস্থা! আমার হাত ও মুখের চামড়া খসে গিয়ে নতুন চামড়া উঠেছিল।
এই প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য ছিল সারা পৃথিবীকে আমাদের বীচ সম্পর্কে জানান দেয়া, সে সময় আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমেও এটি প্রচারিত হয়েছিল। আর প্ল্যান ছিল ২৫ শে মার্চে কক্সবাজার এসে ২৬ শে মার্চ উপলক্ষ্যে একটি গেট টুগেদার করা। সম্ভবতঃ কনসার্টেরও আয়োজন হয়েছিল। ককবাজার এসে দেখি, আলী যাকের অপেক্ষা করছেন আমাদের রিসিভ করার জন্য, ওনার প্রতিষ্ঠানও সম্ভবতঃ স্পন্সর ছিল।
আমি বেশী দেরি না করে, কোনরকমে সৌদিয়ার গাড়িতে চড়ে সে রাতেই ঢাকায় ফিরেছি। পিছনে রেখে এসেছিলাম, তিনদিন তিনরাতের স্মৃতি! মনে পড়ে, আমরা যেখানেই একটু রেস্ট নেয়ার জন্য বসতাম, সমুদ্রপাড়ের মানুষ আমাদের ঘিরে ধরত; ভাবত, এই আজব চিড়িয়ারা কোথা থেকে এলো! টানা তিনদিন ধরে কিনারাহীন সমুদ্রের একই দৃশ্য দেখতে অবাক হয়ে যেতাম আর ভাবতাম সৃষ্টির বিশালতার কথা।