রোলার কোস্টারে চিনামাটির পাহাড় ও লেংগুরা টিলা! – বিরিশিরি

চিনামাটির পাহাড়

চিনামাটির পাহাড় ও লেংগুরা টিলা!

আপাতঃ মনে হতে পারে, রোলার কোস্টারে চড়ে যাচ্ছেন লেংগুরা টিলায়, কিন্তু একবার সেখানে পৌঁছে গেলে পিছনের কষ্ট আর মনে থাকবে না। খুব কম পাহাড়ে উঠেই আমার এতটা ভালো লেগেছে। এই টিলার আরেক নাম ‘মমিন টিলা‘। নেত্রকোনায় অবস্থিত এটি একেবারেই সীমান্ত ঘেঁষে; এখানে দাঁড়িয়ে যদি একবার সূর্যোদয় দেখতে পারেন, তবে সেটি মনে রাখার মত একটা কিছু হবে। এই শীতে একবার ঘুরে আসতে পারেন।

চিনামাটির পাহাড়

নেত্রকোনা থেকে এই লেংগুরা টিলার যে রাস্তা, এর মত খারাপ রাস্তা বোধকরি এই বাংলাদেশে আর নেই। আদৌ এগুলো কোনকালে ঠিক হবে কিনা কে জানে। তবু, লেংগুরা টিলার এমন আকর্ষণ, আবার যেতে বললেও আমি যাব।

সাত শহীদের মাজার

এখানে থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে সাত শহীদের মাজার, এ জায়গাটিও অনেক সুন্দর। এই শহীদেরা ৭১ এর ২৬ জুলাই সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন; এটি ‘ঐতিহাসিক নাজিরপুর যুদ্ধদিবস‘ হিসেবে পালন করা হয়। এর পাশ দিয়েই বয়ে গেছে গনেশ্বর নদী।

সোমেশ্বরি নদী

সোমেশ্বরি নদী

সকালের নাস্তা আগেই সেরে নিয়েছিলাম; লেংগুরা থেকে বিরিশিরি এসে হোটেল নিরালায় লাঞ্চ করে প্রথমেই গেলাম বিজিবি ক্যাম্পের পাশে বিখ্যাত সোমেশ্বরি নদীতে। এই জায়গাটি দেখতে বেশ সুন্দর, এখানে অনায়াসে সময় পার করে দেয়া যায়।

পর্যটকে গিজগিজ করছে গোটা এলাকা। আমি সোমেশ্বরীতে গোসল করার লোভ সামলাতে পারলাম না, বেশ কিছুক্ষণ সাঁতরে উঠে এলাম। নদীতে এখন স্রোত নেই, এমনকি গভীরতাও কমে এসেছে। এক মাঝি জানালেন, বর্ষয়া এখানে তারা ভয়ে নামেন না, এত বেশী স্রোত থাকে!

কমলা বাগান; আর ওয়াচ টাওয়ার

রোলার কোস্টারে চিনামাটির পাহাড় ও লেংগুরা টিলা! - বিরিশিরি

সেখান থেকে গেলাম কমলা বাগানে; সুন্দর একটি টিলা, আছে একটি ওয়াচ টাওয়ার; যদিও কমলার দেখা নেই। এখান থেকে চতুর্দিকের দৃশ্য দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। এই টিলার পাদদেশে নানান ধরনের পণ্যের কোন অভাব নেই; ইন্ডিয়ান চকলেট আর সাবানে বোঝাই প্রতিটি দোকান। 

সেখান থেকে গেলাম আকর্ষণীয় চিনামাটির পাহাড়ে! অদ্ভূত সুন্দর নীল পানির উভয় পাড়ে রয়েছে এই পাহাড়। বড় সুন্দর ও মনোরম এই পাহাড়গুলি। এখানে অনেকক্ষণ বসে থেকে সময় পার করে দেয়া যায়। পাহাড়ের কিনার থেকে লেকের উপর পা মেলে দিয়ে বসে রইলাম অনেকক্ষণ আর দেখলাম পর্যটকদের নানান স্টাইলের ছবি তোলা।

চিনামাটির পাহাড়

ধীরে ধীরে চিনামাটির পাহাড় থেকে নেমে এলাম, হেঁটে চলে গেলাম অটোর কাছে। অটো নামিয়ে দিয়েছে একটি ছোট বাজারে, সেখান থেকে মটর সাইকেলে চলে এলাম বিরিশিরি বাজারে। বংগঘুরির সাথে, দীর্ঘদিন স্মৃতিতে থাকার মত একটা ট্যুর হলো।

নানান কিসিমের লোক এখন ট্যুরে যাচ্ছে বলে চাইলেও স্পটগুলো পরিষ্কার রাখা যাচ্ছে না। আমরা সতর্ক থাকি যেন আমাদের কারণে কোন স্পট নোংরা না হয়। পাশাপাশি, যদি সম্ভব হয়, বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পটে ক্যাম্পেইন করা যেতে পারে, যাতে লোকজন সচেতন হয়। টিওবির মত বড় প্ল্যাটফর্ম এই উদ্যোগ গ্রহণ করতেই পারে। হ্যাপি ট্রাভেলিং।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top