![টংলু, মেঘমা - সান্দাকফু’র সূর্যোদয় - ২ 1 টংলু, মেঘমা - সান্দাকফু’র সূর্যোদয় - ২](https://shaheenstravelstory.com/wp-content/uploads/2023/09/টংলু-মেঘমা-1024x576.webp)
টংলু, মেঘমা (মেঘের মা; এখানে সবসময় মেঘ থাকে বলে এই নাম), চিত্রে, টুমলিং, গইরিবাস হয়ে তবে যেতে হয় সান্দাকফু; সব পাহাড়ী অঞ্চলেই একেক সিজনে একেকরকম সৌন্দর্য থাকে, এখানেও ব্যক্তিক্রম নয়। এখন শীতের শেষ বলে গাছাগাছালির পাতা ঝরে গেছে, ঘাসগুলো সব শুকিয়ে গেছে, তবে এখন পথঘাট শুকনো, ট্রেকারদের সুসময়।
টংলুতে কাঞ্চনজঙ্ঘা পাওয়ার উত্তেজনা কমে এলে আবার গিয়ে স্বদেশের গাড়িতে বসলাম। গত চারদিন এই গোটা অঞ্চলে সূর্য দেখা যায়নি, অতএব একটা উৎকণ্ঠা ছিলই, কাঞ্চনজঙ্ঘা আর এভারেস্ট এর দেখা পাব কিনা। সান্দাকফু’র মূল আকর্ষণের অন্যতম হলো, এখানে থেকে পৃথিবীর ৫ টি উচ্চতম পর্বতের চারটির চূড়া দেখা যায়। আর যেটি দেখা যায় না সেটি হলো K2 পর্বত।
পরের বিরতি দিলাম কালিপোখরিতে; ছোটখাটো একটি লেক এখানে আছে, বর্ষার পানি থাকলে দেখতে ভালো লাগতো, শীতে প্রায় শুকিয়ে গেছে। লেকের উল্টোদিকে গিয়ে এক বিস্ময়কর সৌন্দর্যের সন্ধান পাওয়া গেল; গভীর গিরিখাদের মত অনেক নীচুতে কিছু ট্রেইল বা রাস্তা ও গাছগাছালি দেখা যাচ্ছে, সেখান থেকে তীব্রবেগে ধেয়ে আসা মেঘ আমাদের গা কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে, কেটে মানে কেটে, একেবারে হিম করে দিয়ে যাচ্ছে!
গাড়িতে ফের উঠতে উঠতে বুঝলাম, এই পাহাড়ে বাতাসের যে গতিবেগ থাকবে বলে ফোরকাস্টে দেখেছিলাম, বাতাস সেরকমই থাকবে। গইরিবাসের পরের ১২ কিমি রাস্তা অত্যন্ত ধোইর্য না থাকলে পাড়ি দেওয়া কঠিন। তবে, বাস্তবতা হলো, আগে তো এই পথ ট্রেকিং করেই যাওয়া লাগতো, এখন বরং ভালো মানের বোলেরো গাড়িতে যাওয়া যায়, তাই অসন্তুষ্টির সুযোগ নেই।
সান্দাকফু যখন পৌঁছলাম, তখন দুপুর দেড়টা প্রায়; যেহেতু সেখানকার সেরা হোটেল সানরাইজ নেপাল অংশে পড়ার কারনে আমরা বাংলাদেশীরা থাকতে পারব না, তাই আমরা বুকিং দিয়েছিলাম দ্বিতীয় সেরা হোটেল ‘শেরপা চ্যালেট’। এটাও কম সুন্দর নয় কিন্তু ঐ যে, পৃথিবীব্যপী এখন বেনিয়াদের জয়জয়কার; এই হোটেলের দুটি অংশ, ভালো মানেরটি নেপাল অংশে এবং ট্রেকার্স হাটের মত রুগ্ন অবস্থারটি ভারতীয় অংশে, তিনি আমাদের দেখিয়েছেন নেপাল অংশের ডেকোরেশন কিন্তু আমাদের থাকতে হবে ভারতীয় অংশের রুগ্ন আয়োজনের হোটেলে! অথচ, তিনি জানতেন, আমরা বাংলাদেশ থেকে আসছি!
তীব্র ঠান্ডা এখানে বিরাজ করছে, প্রায় ৪/৫ ডিগ্রি, সাথে রয়েছে ঝড়ো বাতাস এবং সেই সাথে রুমের এই কন্ডিশন দেখে সবাই হতাশ। এই ফাঁকে আমাদের মুরুব্বী ষাটোর্ধ আহসান ভাই বলে বসলেন, চলেন ফিরে যাই! মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল; ২০ তারিখ সন্ধ্যা ৬ টায় রওনা দিয়ে ২২ তারিখ দুপুরে সান্দাকফু পৌঁছে সূর্যাস্ত না দেখে, পরেরদিনের সূর্যোদয় না দেখে কিভাবে ফিরে যাই! আহসান ভাইয়ের টেনশনের যউক্তিকত ছিল; উনি খুব বেশী শীতের কাপড় আনেননি, প্লাস এমন ঝড় হাওয়ায় রাতে আমরা টিকতে পারব কিনা, যেখানে কোন গিজার নেই, হিটার নেই, কিভাবে এই রাত পার করব, এই ছিল মূল টেনশন। তিনি এরই মাঝে ৫ জনের মধ্য থেকে একজনকে রাজি করিয়ে ফেলেছেন। আমি বেঁকে বসলাম; বলে দিলাম, আপনারা গাড়ি নিয়ে চলে যান, আমি কালকে যেভাবে পারি অন্য গাড়িতে ফিরে যাব, পরিস্থিতি থমথমে হয়ে গেল!
(চলবে)