সান্দাকফু’র সূর্যোদয় – ১

সান্দাকফু’র সূর্যোদয় - ১

আজব এক রাস্তা ধরে যাচ্ছি; বামে নেপাল, ডানে ইন্ডিয়া, নেই কোন বর্ডার। আমরা বাংলাদেশীরা দুই পাশের যে কোন দোকানে বসে খেতে পারব, আড্ডা দিতে পারব কিন্তু নেপাল অংশের কোন হোটেলে থাকতে পারব না; থাকলে নাকি রাতে নেপালি পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাবে! 

রওনা দিয়েছি অফসিজনে; মনে দুরু দুরু ভয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা কি দেখা দেবে? আশার কথা কেবল ওয়েদার ফোরকাস্ট; সেই আশায় ভর করে ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রওনা দিয়ে দিলাম আমরা পাঁচজন। শ্যামলীর শিলিগুড়ি পর্যন্ত গাড়ির টিকেট কেটেছি; ২২০০ টাকা প্রতিজন। এই গাড়িতে গেলে বর্ডারে ভিআইপি সার্ভিস পাওয়া যায়।

সবার আগে শ্যামলী এন আর এর এই গাড়িগুলির প্যাসেঞ্জারদের ছাড়া হয়, এরপর অন্যরা। এটাই বুড়িমারি বর্ডারের নিয়ম দেখলাম। এপারে ছিল হুন্দাই, ওপারে পেয়েছি ভলবো; চমৎকার সার্ভিস। এই রাস্তা ধরে গিয়েছিলাম শেষ ২০০১ সালে। বর্ডার থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রাস্তাটুকু যেন বাংলাদেশের মাটি; একেবারে একইরকম গ্রামীন আবহ।

শিলিগুড়ি থেকে ড্রাইভার স্বদেশ আমাদের নিয়ে রওনা দিলেন মানেভঞ্জনের উদ্দেশ্যে; এটি সমতল থেকে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার ফিট উপরে। হোটেল গ্লোরি বুক করা ছিল, মালকিনের ছেলে উজ্জ্বল আমাদের রিসিভ করল, ততোক্ষণে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। 

চারিদিকে সুনসান নীরবতা, কোথাও কোন আওয়াজ নেই; গ্লোরির উল্টোদিকের দোকানের বুড়ি দোকান বন্ধ করবে করবে ভাব। বৌদ্ধদের আজ নববর্ষ বলে কেবল একটা আসরের সন্ধান পাওয়া গেল, যেখানে তারা আজ রাতে আনন্দ উৎসব করবে। 

রাতের খাবার রেডি করতে বসেছে উজ্জ্বলের মা; ভারতের পাহাড়গুলিতে খাবারের মোটামুটি একই সিস্টেম; থালি সিস্টেমের খাবার, ভাত, ডাল, সবজি আর সাথে পাঁপড় অথবা আলুর শুকনা ভাজি। আমাদেরকে সাথে ডিম ভাজি দিয়েছে।  

প্রচন্ড ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে এখানে; তাপমাত্রা ৭/৮ ডিগ্রির মত হবে। গিজার ছিল বলে আরামে গোসল করে নেয়া গেল। রুমে তারা হিটারও দিয়েছে। নামাজ পড়ে ঘুমের অতলে তলিয়ে গেলাম; ভোরে উঠে ফজর পড়ে বারান্দা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, একেবারে সামনেই নিজের বিশালত্ব জানান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি পাহাড়, তার চূড়ার একপাশে শুভ্র মেঘ জমে আছে,  বাসাবাড়িগুলো নীরব নিস্তব্ধ, প্রায় সব বাসাতেই অনেক ফুলের টব আছে; সেসব টব থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে নানান রঙের ফুল।   

5 thoughts on “সান্দাকফু’র সূর্যোদয় – ১”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top