১৩ কিলোমিটারের পাহাড়ে অন্ধকার নেমে এসেছে, টর্চ জ্বালানো হয়েছে। সংগীরা সব মেইনরোডে উঠে গেছে, আমি, সাজ্জাদ আর দু’একজন মাটি হাতড়ে উপরে উঠছি। ঠিক যখনই একটা জায়গায় এসে একটু জিরাবো ভাবছি, তখনই দেখলাম, সেই জায়গাটাই মেইনরোড! আনন্দে চিৎকার করে উঠেছিলাম। বন্ধু শামীম এসে জড়িয়ে ধরল, সে এক বিরাট প্রাপ্তি আর আনন্দের ব্যাপার বৈকি!
এর মিনিটখানেকের মধ্যেই ডাবল অনন্দ এসে ভর করল, যখন ভাবছি কিভাবে আলীকদম যাওয়ার জন্য একটা চান্দের গাড়ি পাব, ঠিক তখনই একটা খালি ট্রাক এসে গেল। রুদ্র কন্ট্রাক্ট করে ফেললে আমরা সবাই কোরবানির গরুর মত করে ট্রাকে উঠে গাদাগাদি করে বসলাম। ১০ কিলোমিটার নামক জায়গায় যে আর্মি চেকপোস্ট আছে, সেটাও অনায়াসে পার হওয়া গেল। আমাদের আনন্দ আর দেখে কে!
ঘন্টাখানেক পরে আবার হোটের আল মনসুরে রাতের খাবার খেতে বসলাম। গাপুস গুপুস করে খেয়েই আবার চান্দের গাড়িতে উঠে বসলাম; উদ্দেশ্য, চকরিয়া। সেখানে রাত ৯ঃ৩০ এ ঢাকার বাস। এতক্ষণ যার কথা একবারও বলা হয়নি, তিনি হলেন লক্ষ্মীচান, গত তিন দিন ধরে যিনি আমাদের গাইড হিসেবে ছিলেন। পালংখিয়াং থেকে ফেরার পথে তিনিই আমাকে পাহারা দিয়ে এনেছেন; কিছু বখশিশ তিনি পাওনাই ছিলেন।
চান্দের গাড়ি উড়ে চলেছে চকরিয়ার পানে; ড্রাইভার সাহেবকে বলা হয়েছে, দ্রুত না চালালে আমরা ঢাকার গাড়ি মিস করব। আমি ক্লান্ত শরীর নিয়ে বসে আছি, স্মৃতিতে বারবার আছড়ে পড়ছে লারমতি আর তার মামাত বোন প্রহেলিকার কথা, হাজীরামের বাড়িতে গেলে কেমন করে তিনি নিজের চেয়ার ছেড়ে দিয়ে উঠে গিয়েছিলেন সে কথা, রুদ্রের অসাধারণ ম্যানেজিং ক্যাপাবিলিটির কথা আর অতি অবশ্যই কষ্টকর পাহাড়ী জনজীবনের কথা!(সমাপ্ত)