![সান্দাকফু’র সূর্যোদয় - ৩ 1 সান্দাকফু’র সূর্যোদয় - ৩](https://shaheenstravelstory.com/wp-content/uploads/2023/09/makalu-everest-range-sandakphu.jpg)
মনে তীব্র অসন্তোষ নিয়ে আমরা শেরপা চ্যালেট ছেড়ে দিলাম; কর্তৃপক্ষ কিছু বলল না, আমরা গিয়ে জিটিএ ট্রেকার্স হাট এ উঠলাম। এটার অবস্থা ওটার মতই কিন্তু খরচ কম; খারাপ জায়গায়ই যদি থাকব, খরচ কেন বেশী দিব? এই ট্রেকার্স হাটগুলি সরকার পরিচালিত, এগুলি জায়গায় আছে যাতে করে ট্রেকাররা সহজে এবং কম খরচে থাকতে পারে।
এরই মাঝে শেরপা চ্যালেটেই খাবারের অর্ডার হয়েছে; খেতে হবে নেপাল অংশে গিয়ে। ট্রেকার্স হাটে বাথরুম ব্যবহার করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হলো, তা সারাজীবন মনে থাকবে; হাতে পানি নিয়ে দেখি হাত বরফ হয়ে গেছে। তাপমাত্রা দ্রুত কমছে, বাতাসের গতিবেগ বাড়ছে, এই পানি বরফের চেয়েও ঠান্ডা।
আমরা সেখানে যাবার সময় মানেভঞ্জন থেকে ৫ লিটার করে ১০ লিটার পানি নিয়ে গিয়েছিলাম; সেটা ভালো কাজে দিল; ওখান থেকে অল্প পানি নিয়ে ওযু সারলাম, এইখানকার জমানো পানি দিয়ে ওযু করা সম্ভব না।
ট্রেকার্স হাট কিছুটা নীচে; নামার সময় অসুবিধা হয়নি কিন্তু ওঠার সময় শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। কোনক্রমে উপরে উঠে শেরপা চ্যালেটে খেতে বসলাম; খাবার অত্যন্ত সুস্বাদু। সেখানে গতকাল তাদের নববর্ষ বলে যেসব খাবার বানিয়েছিল, তা একটা ঝুড়িতে রেখে দিয়েছিল; আমাদের সাথীরা অনেকেই খেয়েছে সেসব। জায়েয হবে না বলে আমি খেলাম না।
খাবার ডিম ভাজি দিয়ে; খরচ ২৫০ রূপি। রাতের ব্যবস্থা ডিম রান্না, সেজন ৫০ রুপি করে বেশী দিতে হবে। এখানে মুরগি পাওয়া যায় কিন্তু এটিও জায়েয হবে না বিধায় সবজি আর ডিমের উপর চালিয়ে গেলাম। শিলিগুড়ি যাওয়ার আগে আর মাছ গোস্ত পাওয়া যাবে না।
লাঞ্চ করার পর সানরাইজ হোটেলে গিয়ে বসলাম; উদ্দেশ্য সূর্যস্ত দেখা। সে আশায় যে গুড়েবালি তা একরকম নির্ধারিত হয়েই ছিল; আকাশে মেঘ ভর্তি, প্রচন্ড বাতাস, চারিদিকে অন্ধকার। কলকাতার একটা গ্রুপ ছবি দেখিয়েছে, আজ সকালে তারা চমৎকার সূর্যোদয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেছে। আশা আছে, কাল সকালেও তাই দেখা যাবে।
সানরাইজ হোটেলে এক কাপ লাল চা ৩০ রুপি, ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড দেয় তারা, বিনিময় ৫০ রুপি। আমরা ওয়াইফাই নিয়ে মোবাইল চালাতে চালাতে অপেক্ষা করছিলাম। এর মধ্যে কলকাতার একজন চিৎকার দিয়ে উঠলো, স্নো পড়ছে!
আমরা লাফিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম; স্নো পড়ছে কথা সত্যি কিন্তু সিরিয়াস কিছু নয়। মানে একেবারে ঝমঝমিয়ে নয়। কিছু গুড়ি পড়েছে, আবার বন্ধ হয়েছে। সে গুড়িগুলি গাড়ির উপর চিকচিক করছে।
আনন্দের সাথে বেদনা ভর করেছে; স্নো পড়ার মত শীত যেখানে আছে, সেখানে হিটার ও গিজার ছাড়া আজ রাতে যাবে কিভাবে? কি হবে রাতে, এমন শংকা নিয়ে এক বসায় মাগরিব ও এশা পড়ে আবার শেরপা চ্যালেটে ডিনার করতে গেলাম। গিয়ে দেখি, নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে তারা সবাই ওপেন মদের বোতল নিয়ে বসেছে।
এরই ফাঁকে যে মেয়েটি আমাদের খাবার পরিবেশন করেছে, সে বিএড করা, ভালো ইংরেজি জানে। হাইটে অনেক খাটো কিন্তু দেখতে সে অতি কমনীয়। আমরা ডিনার সেরে হাটে ফিরে যাবার প্রস্ততি নিলাম। কিন্তু আমাদের দুজন রয়ে গেলেন; যার একজন তাদের সাথে মদ খেয়ে মরার ব্যবস্থা করেছিল!
(চলবে)