![রাঙ্গামাটির লাল পাহাড় 1 রাঙ্গামাটির লাল পাহাড়](https://shaheenstravelstory.com/wp-content/uploads/2023/08/rangamati.jpg)
গিয়েছি | খরচ | থেকেছি | অবশ্যই নিবেন |
---|---|---|---|
জন | /- | দিন |
সম্ভবতঃ নতুন করে একটি গান হিট হতে যাচ্ছে; ‘আই গোস্বা অইয়ুম, ভাত ন হাইয়ুম, আর মনত জ্বালা, বেগগুণের বউ সোন্দর সোন্দর, আর বউয়া হালা!’
এই গানটি যখন কানে এলো, আমি তখন সুবিশাল লেকের এক কোনায় সাঁতারে ব্যস্ত! সংগী-সাথীরা জুমঘরে ক্ষেতে বসেছে, এই ফাঁকে একটু সাঁতরে নিলাম। কাপ্তাই লেকে সাঁতরানোর স্বপ্ন ছিল, আজ পূরণ হলো; এতবড় লেক, কিছুটা ভয়ও লাগছিল। পাহাড়ের পাদদেশে যেসব লেক আছে, এগুলোর বৈশিষ্ট হলো হটাৎ করে গভীরতা বেড়ে যায়, এটিও ব্যতিক্রম নয়; সাঁতার না জানলে কাপ্তাই লেক ও নীলাদ্রী লেকে নামা মোটেই উচিত নয় লাইফ জ্যাকেট ছাড়া।
জুমঘরের লাঞ্চের তুলনা হয় না; ডালের স্বাদ জিহ্বায় থাকবে অনেকদিন। কাঁচকি আর চাপিলার ভাজিটাও ছিল অসাধারন। ব্যম্বো চিকেনটাও আমার ভীষণ ভালো লেগেছে, কলার মোচার ভর্তাও ছিল দারুণ। ১৫ বছর আগে রাঙ্গামাটি গিয়ে পেদা টিং টিং-এ খেয়েছিলাম; সেবারও এসব আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল।
রাজবন বিহার ও চাকমা রাজার বাড়ি পেরিয়ে যখন বৌদ্ধ বিহারে গেছি, দেখি ফলমূল ও নানান দোকানের বাহারি সমাহার। আনারস ১০ টাকা, ২৫ টাকা ও চল্লিশ টাকা, ডাব ৫০-৬০ টাকা। দেশী বরই দেখে এক চাকমা চাচাকে জিগ্যেস করলাম দাম কত? বলল, আশি টাকা; বেছে নিতে শুরু করলে বলল, ‘এবারিশ’ নিতে হবে! প্রথমে ধাক্কা খেলেও পরে বুঝলাম, এভারেজে নিতে হবে অর্থাৎ, কাঁচাপাকা মিলিয়ে নিতে হবে।
দুটি শাল কিনলাম চারশ করে আটশো টাকা দিয়ে আর ১২০ টাকা দিয়ে একটি মাফলার কিনলাম; মাফলার কেনার পরে কিছুটা কনফিউশন হচ্ছিল; মাফলার কিনেছি নাকি টেবিলের রানার!
জুমঘরে খেয়ে বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রিজে চলে গেলাম; এত বছর পরও একইরকম ভালোলাগা কাজ করছিল। ব্রিজ পেরিয়ে ওপারে চলে গেলাম পাহাড়ের উপর; আগে এত দোকান ছিল না, এখন বেড়েছে অনেক, রীতিমত নিউমার্কেট! ঝালমুড়ি থেকে শুরু করে খাবারের কোন অভাব নেই, নেই পাহাড়ি বোনা কাপড় ও ব্যাগের অভাব। লোকেরা হুড়মুড় করে কিনছে সেসব। শেষের দিকটায় বাচ্চাদের জন্য কিছু ফ্রি রাইড রয়েছে, যেমন দোলনা ও স্লাইড। ওখান থেকে কাপ্তাই লেক টা দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।
এরপর গেলাম পলওয়েল পার্কে; যতটা আশা করেছিলাম ততটা নয়। সুইমিং পুলে নামার প্ল্যান ছিল, কিন্তু এটা এত ছোট যে, আর নামতে ইচ্ছে হলো না। পাশের লেকে কায়াকিং করেছি, এটি আনন্দদায়ক ছিল। ছোট একটি ঘরে পাঁচটি হরিণ আছে, এর পরেই নামাজ ঘর। এখানে একটি ঝুলন্ত সেতু রয়েছে আর রয়েছে বিখ্যাত লাভ পয়েন্ট। এটি প্রায় মাজারের রূপ নিয়েছে; অনেকেই এখানে এসে তালা মেরে যায় সম্ভবতঃ প্রেম টেকানোর জন্য! এমন অপসংস্কৃতি কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো কে জানে; তবে সেখানে তালার অভাব নেই। এক দল দেখলাম শিক্ষা সফরে এসে লাভ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছে, কি শিখল কে জানে!
রাঙ্গামাটি আসলে বর্ষায় ঘোরার জায়গা, কিন্তু এই শীতেও এতটা ভালো লাগবে আশা করিনি। কেবল মাত্র শুভলং ঝর্ণায় পানি পাইনি, এই অপূর্ণতা ছাড়া আর সবই পেয়েছি; ভীষণ আনন্দে কেটেছে একটি দিন।
আমরা গেন্ডারি বা আখ খেয়ে তার উপরাংশ বা ছিলকা অবশ্যই লেকের পানিতে ফেলিনি; একটা ব্যগে ভরে রেখেছি। পাশের একজন ইউরো অরেঞ্জ খেয়ে বোতলটা পানিতে ফেলতে গেলে আরেকজন নিষেধ করায় পানিতে ফেলেনি। এভাবেই আমরা চাইলে পর্যটন স্পটগুলি পরিষ্কার রাখতে পারি। হ্যাপি ট্রাভেলিং।