ছাঙ্গু ক্যাবল কারের ওপারে – (নয়নাভিরাম দার্জিলিং-সিক্কিম: ৯)

ছাঙ্গু ক্যাবল কারের ওপারে - (নয়নাভিরাম দার্জিলিং-সিক্কিম: ৯)
ছাঙ্গু ক্যাবল কারের ওপারে - (নয়নাভিরাম দার্জিলিং-সিক্কিম: ৯)
ছাঙ্গু ক্যাবল কারের ওপারে - (নয়নাভিরাম দার্জিলিং-সিক্কিম: ৯)
ছাঙ্গু ক্যাবল কারের ওপারে - (নয়নাভিরাম দার্জিলিং-সিক্কিম: ৯)

ক্যাবলকার একসময় চলতে শুরু করল; প্রথমে পাত্তা দেইনি কারণ মালয়েশিয়ার লংকাউই’র ক্যাবল কার চড়ে এসেছি কিছুদিন আগে, এটা আর এমন কি হবে! আরিব্বাশ! এটাও তো দেখি অনেক খাড়া এবং কোন অংশেই কম এডভেঞ্চারাস নয়! দুই দিকে তাকালে কেবল শভ্র বরফের চাদরে মোড়া পাহাড় নজরে পড়ে আর একদিকে তাকালে নজরে পড়ে অনুপম সৌন্দর্যের ছাংগু লেক।

মেডিটেশনে যেমন বলে, মনে করুন আপনি নীল আলোর মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছেন এবং কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করছেন; তেমনই আমরা নীল আলো না হলেও ঝকঝকের সূর্যের রশ্মির নীচে কল্পনার মত করে তরতর করে উঠে যাচ্ছি। যেখান থেকে ক্যাবল কারে উঠেছি, সেটা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১২,৯০০ ফুট উঁচু আর যেখানে যাচ্ছি তা ১৪,৫০০ ফুট উঁচু; অর্থাৎ আমরা উঠব প্রায় ১,৬০০ ফুট। সেই হিসেবে এই ক্যাবল কার যথেষ্ট খাড়া ওঠে।

ধীরে ধীরে ছাংগু লেক ছোট হয়ে আসছে; এরপর দেখলাম, এতক্ষণ ছোট ছেলেসহ যে পাহড়গুলিতে উঠেছিলাম, সেগুলোও আমাদের নীচে পড়ে গেছে, কিন্তু ততক্ষণে সামনে হাতছানি দিয়ে ডাকছে আরেকটি বরফের চাদরে মোড়া পাহাড়। এ যেন বিস্ময়ের পর বিস্ময়।

ক্যাবল কার থেকে নামলাম, সামনে এগিয়ে যেতেই বিস্ময়ে মুখ একেবারে হা হয়ে গেল! পুরোপুর তুষারে ঢাকা একটি পাহাড় পিছন সাইডে রয়েছে যেটে বাম দিকে বিস্তৃত তবে সামনে ১০০ ফুট মত গেছে আর ডানে ২০ ফুট গিয়েই একটি গিরিখাদের মত রয়েছে। তার ওপারে আবার আরেকটি সাদা শুভ্র পাহাড় রয়েছে।

প্রাথমিক বিস্ময় কেটে যেতেই নেমে পড়লাম বরফের উপর, গতকালই তীব্র স্নো-ফল হবার কারনে বরফ এখনো নরম; পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ডেবে যায়। এর মধ্যেই সোজা হাঁটা দিলাম। এই পাহাড়ের একেবারে শেষ মাথায় গিয়ে থামলাম; ততোক্ষণে এক অদ্ভুত খেলা শুরু হয়ে গেছে, সহসা মেঘ এসে আমাদের সবাইকে ঢেকে দিয়েছে। ক্যামেরা জুম না করলে আমাকে দেখাই যেত না, যেমন আমি দেখতে পাচ্ছিলাম না আমার স্ত্রীকে।

সেখান থেকে ফিরে আসতেই দেখি সা’দের কাঁদো কাঁদো অবস্থা; সে আমার সাথে যেতে পারেনি বলে মন খারাপ! গতকাল জিরো পয়েন্টের বরফে আর আজকে ছাঙ্গুর বরফে খেলে সাহস বেড়ে গেছে; ওকে নিয়ে আবার গেলাম, তার আনন্দের কোন সীমা পরিসীমা নাই।

একসময় সব বিস্ময়ই স্বাভাবিক হয়ে আসে, সব ভালোলাগা তার রেশ হারায়! আলোছায়ার খেলার মাঝখানেই একসময় আবার ক্যাবল কারে চেপে বসলাম; ঘড়িতে তখন দুপুর দেড়টা। দ্রুতগতিতে ক্যাবল কার নীচে নেমে আসছে, ছাংগু লেক দৃষ্টিতে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে, ইয়াকগুলো চোখের সীমানায় ধরা দিচ্ছে; সমস্ত বিস্ময়কে সাথে নিয়ে একসময় নীচে নেমে এলাম।

ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম; কফি আর ম্যাগী নুডুলস খেয়ে কিছুটা তাজা হলাম। বাকি টিমমেটরা ফিরে এলে দ্রুত গ্যাংটকের হোটেলের দিকে রওনা হলাম। লাঞ্চ করে এমজি মার্গে যেতে হবে আজ। এত প্রশংসা যেই মার্কেটের, সেই মার্কেটে একবার না গেলে মান-ইজ্জত কি আর থাকে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top