এমজি মার্গ – (নয়নাভিরাম দার্জিলিং-সিক্কিম ১০ | শেষ পর্ব)

MG Marg

বিকেল চারটা নাগাদ হোটেল স্যাম্ফেলে ফিরে আসা গেল; এরপর লাঞ্চ করে একটু রেস্ট নিতে গেলাম। সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ হোটেল থেকে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করলাম ২০০ রুপিতে; এখান থেকে এমজি মার্গ তিন কিলোমিটার।

এমজি মার্গ একটি জমজমাট জায়গা, আলোর ঝলকানি এখানকার সর্বত্র, লোকে লোকারণ্য এর পুরো অংগন জুড়ে; কথাবার্তা শুনে মনে হলো অর্ধেক লোক বাংলাদেশ থেকে এসেছে! এটি বলছি ২৬ এপ্রিলের কথা, চারদিন আগে ঈদ ছিল; ফলে অনেকেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক।

এমজি মার্গে প্রায় সব ধরনের আইটেমের শপ আছে; ছোটখাটো দোকান থেকে বড় বড় ব্র্যান্ডের দোকানও আছে। তবে, কাপড়ের দোকানগুলিতে বেশীরভাগই শীতের কাপড় বিক্রি হয়, যেমনটা দার্জিলিং-এ দেখেছি। আমরা মোটামুটি ৩০ মিনিট ধরে হাঁটছি আর দেখছি, ঠিক তখনই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো।

এই ট্যুরে সবই পেয়েছি বৃষ্টি ছাড়া; এটার দেখাও পেলাম, তবে এটি এই সন্ধ্যাটা নষ্ট করে দিল। যদিও সাথে পঞ্চো ছিল, তবুও এই ঝুম বৃষ্টিতে কোন দোকানে গিয়ে তো শান্তি পাওয়া যায় না কারণ, সব দোকান লোকে বোঝাই। আমি এর ফাঁকেই একটি ডাইন জ্যাকেট কিনলাম ৮০০ রুপি দিয়ে; শীতের কাপড় এখানে অনেক সস্তায় পাওয়া যায়।

বৃষ্টি থামলে আর ঘুরতে ইচ্ছে হলো না, অনেকেই দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু চকলেট কিনে হোটেলে ফিরে এলাম; আগামীকাল চলে যাব দেশে, যাবার আগে পাহাড়ের গায়ে আলোকচ্ছটাগুলো শেষবারের মত দেখে নিলাম, চোখ জুড়িয়ে গেল।

একদম ভোরেই রোশান দা’র গাড়িতে রওনা হলাম আমরা ৭ জন। বর্ডারে গিয়ে আমাদের গাড়ি আলাদা হবে; আমি যাব বুড়িমারি এক্সপ্রেসের স্লিপারে আর ওরা তিনজন কোন গাড়িতে যাবে এখনো জানে না, তবে তারা অর্গানাইজারদের সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, বরকত ট্রাভেলস-এ যাবে না। এই গাড়ি নাকি রিক্সার চেয়েও আস্তে চলে, এটা জয়ার ভাষ্য।

কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আর কি; বর্ডার ক্রস করার আগেই সঞ্জু-জয়ারা জানতে পারল, তাদের গারি বরকত ট্রাভেলস-ই এবং ওরা আরো ভেঙ্গে পড়ল যখন বাসে উঠতে গিয়ে দেখল আসার দিনের ড্রাইভারই এই গাড়ি চালাবে!

নানান ঘটনাধারার মধ্য দিয়ে গিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পরদিন সকাল ১০ঃ০০ টার দিকে আমি গাবতলী নামলাম; আর ওদিকে সঞ্জুরা ১১ঃ০০ টার দিকে ছিল টংগী ব্রীজের উপর, মোটামুটি ভালোই এসেছে ওরা।

এপ্রিলের ২৮ তারিখে দেশে ফিরেছিলাম, আজ মে মাসের ২৮ তারিখে বসে এই ট্যুরের শেষ পর্ব লিখছি; আপনাদের বোঝাতে পারব না, ৮ রাত ৭ দিনের এই দার্জিলিং-সিক্কিম ট্যুরের প্রতিটি ক্ষণ আমার প্রতিমূহুর্তে মনে পড়ছে। আমি কিছুতেই এটি ভুলতে পারছি না; এমনভাবে আবিষ্ট করে রেখেছে এর প্রতিটি মূহুর্ত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top