ধূপপানি, তুমি সুন্দর! – Dhuppani Waterfall, Rangamati

ধূপপানি
ধূপপানি

কাপ্তাই থেকে ধূপপানি ঝর্ণা!

কাপ্তাই থেকে নৌকায় দুই ঘন্টায় বিলাইছড়ি এবং সেখান থেকে নৌকায় আরো দুই ঘন্টায় উলুছড়ি গিয়ে তারপর দুইঘন্টার ট্রেকিং এর পর ‘ধুপপানি’ নামক সুন্দরীর দেখা পাওয়া গেল। আগের রাতে বৃষ্টি হওয়ায় ভালো পানি পাওয়া গেছে; বলছি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের একদিনের ঘটনা। 

ধূপপানি, তুমি সুন্দর! - Dhuppani Waterfall, Rangamati
নৌকায় করে চললাম ধূপপানির দিকে!

ঝর্ণার নীচের ১০ ফুট চওড়া গুহা!

ধুপপানি ঝর্ণার বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে, এটাই একমাত্র ঝর্ণা যার নীচের দিকে পাহাড়ের গায়ে একটি ১০ ফুট চওড়া গুহার সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে পর্যটকরা বসে, শুয়ে, ধ্যানমগ্ন হয়ে ছবি তোলেন। এখানে যাবার আগে বুঝতে পারিনি কিভাবে ভিতর থেকে ছবিগুলো তোলে লোকেরা।

ধুপপানি ঝর্ণা
পাহাড়ের কোটরে ধ্যানমগ্ন আমি

এটাকে এক ধরনের রেস্ট প্লেসও বলা যায়, কিছুক্ষণ ঝর্ণার পানিতে ভিজে এসে রেস্ট নিয়ে গ্যাপ দিয়ে আবার ভেজা যায়।

ধূপপানি, তুমি সুন্দর! - Dhuppani Waterfall, Rangamati
ঘন্টাখানেক এই ঝর্ণার পানির নীচে…

ঘন্টাখানেক এই ঝর্ণার পানির নীচে বসেছিলাম; সেই অনুভূতি অবর্ননীয়। এটি আমার ৩৫তম ঝর্ণা দর্শন এবং এটি অন্যতম সেরা। যারা ঝর্ণা ভালোবাসেন, তাদের জন্য ধুপপানি ভ্রমণ মাস্ট।

উলুছড়ির পথে…

বিলাইছড়ির হোটেলে রাত কাটিয়ে যখন উলুছড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছি, তখন এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখলাম; কাশফুলের মত করে সারি সারি অনেক মেঘ জমে আছে অদূরের ঘন গাছপালার সামনে, দেখতে বড় ভালো লাগে। হটাৎ দেখলে যে কারোই কাশফুল ভেবে ভ্রম হবে। 

বিলাইছড়ি পার হবার পর দুটি আর্মি চেকপোস্ট আছে; একটি বিলাইছড়ি চেকপোস্ট, আরেকটি অলিংখিয়াং। দুই জায়গাতেই নৌকা থেকে নামতে হয় এবং সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে তারা ছবি তোলেন। এটা পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্যই করা হয়ে থাকে।

ধুপপানি ট্রেকিংকে অনেকেই কঠিন বলে থাকেন, তবে আমার তা মনে হয়নি। আমার মত ভোটকা-ভাটকা লোক যদি যেতে পারে, আর কেউ আটকাবে বলে মনে হয় না। 

বিদায় বেলায় ক্লান্তির ঘুম!

ধূপপানি, তুমি সুন্দর! - Dhuppani Waterfall, Rangamati
সারাদিনের ক্লান্তি আর প্রকৃতির মিশেল

ঝর্ণা ট্যুরের একটি মজার বিষয় হলো, সারাদিনের ক্লান্তির পর নৌকায় বসে খাবার খাওয়ার পর যখন পড়ন্ত বিকেলে ফিরে আসি, তখন এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে।

কখনো ক্লান্তিতে ঘুম চলে আসে, কখনো প্রকৃতি আমাদের বিদায় জানাচ্ছে সেই দৃশ্য দেখতে দেখতে চলে আসি, কখনো বা সন্ধ্যা হয়ে গেলে আকাশের তারাগুলো দেখতে থাকি।

এবার যেমন আকাশভরা তারার নীচে এক ঘন্টা শুয়েছিলাম নৌকার ছাদে; অনেক তারার ঝরে পড়া দেখেছি! সহসা মনে পড়ল, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এর গান;

‘কোথায় কখন কবে কোন তারা ঝরে গেল

আকাশ কি মনে রাখে,

মুছে যাওয়া দিনগুলি আমায় যে পিছু ডাকে’!

Dhuppani Waterfall

তন্ময় হয়ে ভাবছিলাম, এই যে বিশাল পাহাড়ের কোলে আমরা ক’জন ছিলাম, পাহাড় কি তা স্মরণ রাখে?

কিংবা জীবন থেকে হটাৎ হটাৎ আমরা যে ছিটকে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছি অতল গহবরে, আকাশ কিংবা এই পৃথিবী কি আমাদের মনে রাখে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top