ঈদের নামাজ পড়েই স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে টাটা সুমো গাড়িতে উঠে গেলাম; দীপেশ একটানে গাড়ি নিয়ে চলে গেল হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে। ২০০১ সালে, ঠিক ২২ বছর আগে এই এপ্রিলেই একবার এসেছিলাম স্টাডি ট্যুরে, তবে সে সময় ভালোভাবে এটি ঘুরতে পারিনি। এখানে মূলতঃ তিনটি জিনিস দেখার আছে; হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট, জুওলজিক্যাল পার্ক এবং অত্যন্ত সমৃদ্ধ এক যাদুঘর!
ইন্সটিটিউটি বন্ধ আছে, তবে তার সামনে কর্তৃপক্ষ একটি চমৎকার আয়োজন করেছে বাচ্চাদের জন্য; ট্রি টপ এডভেঞ্চার নামে ৫ স্টেপের একটি এডভেঞ্চার ট্রিপ চালু করেছে। নানান বয়সের ছেলেমেয়েরা ২১০ রুপির বিনিময়ে এটি ট্রাই করছে; এর শেষ স্টেপটি হচ্ছে একটি ছোট সাইজের জিপ লাইনিং। বড় ছেলে শায়ানকে টিকেট কেটে দিলাম এবং সে ভালোভাবেই স্টেপগুলি পেরিয়ে গেল।
এরপর দেখতে শুরু করলাম চিড়িয়াখানা; এখানে যে শত শত প্রাণী আছে, তা নয় কিন্তু আকর্ষণীয় বেশ কিছু প্রাণী এখানে আছে। এর মধ্যে স্নো লিওপার্ড, ব্ল্যাক প্যান্থার, রয়েল বেংগল টাইগার এগুলো উল্লেখযোগ্য, আর ফেরার সময় তো বিশালাকার ভালুক একেবারে কাছেই বসে বসে পান চিবুচ্ছিল!
তবে সবকিছু ছাপিয়ে, যেটি এবার আমার নজর কেড়েছে সেটি হলো, মিউজিয়াম বা HMI Museum. এই যাদুঘরটি অতুলনীয়; এখানে তেনজিং নরগে, যিনি ১৯৫৩ সালে নিউজিল্যান্ডের এডমুন্ড হিলারির সাথে যৌথভাবে প্রথম এভারেস্ট জয় করেছিলেন, তার সেই ট্রিপে ব্যবহৃত সব উপাদান ও কাপড় থরে থরে সাজানো আছে। এটি একটি রোমাঞ্চকর ব্যাপার! এ ছাড়াও মাউন্টেন ট্রেকিং এর জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান সাজানো আছে এবং অতীতে যেগুলো ব্যবহৃত হতো সেগুলোও আছে; পর্বত প্রেমীদের মাতোয়ারা হবার জন্য এইই যথেষ্ট।
তবে, তারও চেয়ে বেশী বিস্মিত হয়েছি গোটা হিমালয়ান রেঞ্জের রেপ্লিকা দেখে যেটি বিশাল জায়গা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং শত শত পর্বতের সবগুলোর উপর স্ট্যান্ডসহ বাতি দিয়ে নাম লিখে দেয়া হয়েছে। কাঁচের বাইরে সুইচ আছে, আপনি যে পর্বতটি দেখতে চান, সেই নাম লেখা সুইচে টিপ দিলে ঐ পর্বতের মাথায় বাতি জ্বলবে। এই রেপ্লিকাটি তৈরি করা মানে আমার কাছে মনে হয়েছে অসাধ্য সাধন করা।
হাত নিশপিশ করছিল ছবি তোলার জন্য, কিন্তু শক্তভাবে নিষেধ করা আছে এখানে কোন ছবি তোলা যাবে না; সিসি ক্যামেরা আছে ভেবে আর রিস্ক নেইনি। ভেবেছিলাম, গুগলে এটার ছবি পাব, অন্যসব ছবি পেলেও এই রেপ্লিকার ছবি পাইনি। এটি একটি দেখার মত জিনিস।
এই অঞ্চল থেকে বেরিয়ে গেলাম তেনজিং রক দেখতে; ৫০ ফুট উঁচু হবে এমন একটি ছোট পাহাড়কে তেনজিং রক নাম দিয়ে তাতে দড়ি দিয়ে ওঠা-নামার সুযোগ করে দিয়েছে পর্বতারোহীদের মত, ১০০ রুপি করে চার্জ। আমি এবং বড় ছেলে দুজনই দড়ি বেয়ে এই পাহাড়ে উঠলাম এবং নামলাম; এডভেঞ্চার হিসেবে এটি করা যেতে পারে।
এরপর গেলাম কাছেই এক টি গার্ডেনে; এখানে অনেক চায়ের দোকান আছে নাম্বারিং করা, আপনাকে ড্রাইভার যে নাম্বার বলবে, সেই নাম্বারের দোকান থেকেই আপনার চা-পাতা কিনতে হবে, এখানে এটাই সিস্টেম। তো প্রথমে চা বাগানে গিয়ে ছোট ছেলেকে লোকাল ড্রেস পরিয়ে কিছু ছবি তুলে ফেরার পথে আমাদের যে নাম্বার বলে দেয়া হয়েছে সেই নাম্বারের দোকানে গেলাম।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রথমে যে চায়ের প্যাকেটের দাম চাইল ১৫০ রুপি করে তার ৫ টা নিলাম ৬০০ রুপি দিয়ে হালকা দামাদামি করে। এরপর যে প্যাকেট চেয়েছিল ৪০০ রুপি করে, তার ৪ টা সাহস করে বললাম ৬০০ রুপি; দিয়ে দিল! বুঝলাম এরা রীতিমতো ডাকাতি করে! যেহেতু মানুষ অল্পসময়ের জন্য এখানে আসে, এই সুযোগটা তারা নেয়; গুলিস্তানের মত ১০০ টাকার জিনিস চেয়ে বসে ৪০০ টাকা, কত আর কম বলা যায় এই বিদেশ বিভূঁইয়ে, লজ্জা শরম বলেও তো একটা ব্যাপার আছে!