২০০৪ সালে আমি যখন ট্রলারে করে রোজার ঈদের ছুটিতে প্রথম সেন্টমার্টিন যাই, সে দিনের স্মৃতি মনে পড়লে আজো বুক কেঁপে ওঠে! নাফ নদী পার হবার পর প্রতিটি ঢেউ যখন আসছিল, মনে হচ্ছিল এই বুঝি শেষ! নৌকার যাত্রীরা আধামরা হয়ে গিয়েছিল, বমি করে ভাসিয়ে দিয়েছিল নৌকার গলুই, কেবলমাত্র হারুন মাঝি ছিলেন নির্বিকার; আমি মাঝির পাশে দাঁড়িয়ে পুরো পথ পাড়ি দিয়েছিলাম বুকে দুরু দুরু ভয় নিয়ে!
২০০৪ সাল, তখনও বিয়ে করিনি; নানান কারনে জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম! সেবারই প্রথম নিজ বাড়ির বাইরে ঈদ করার প্রস্ততি নিলাম; সেই মোতাবেক অফিস ছুটি হলে একা একা চলে গেলাম কক্সবাজার। তখনও পিতা-মাতাকে ফেলে বাড়ির বাইরে গিয়ে ঈদ করার কালচার গড়ে ওঠেনি; একটু একটু করে শুরু হচ্ছিল, আমি তার প্রথম সময়ের সহচর।
মনে পড়ে, কক্সবাজার পৌঁছলাম ঈদের একদিন আগে; হোটেল রুচিতে ৩০০ টাকায় একটি রুম নিয়েছিলাম। তখন একটি মাত্র জাহাজ, কেয়ারি সিনবাদ সেন্টমার্টিন যেত; কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানলাম, এই জাহাজ ঈদের সময় তিনদিন বন্ধ থাকে। আগে কোনদিন সেন্টমার্টিন যাইনি, ফলে কিভাবে যাওয়া যায় এর উপায় বের করতে খোঁজ লাগালাম; জানা গেল, পরদিন একটি ঘাটে গেলে ট্রলার পাওয়া যাবে।
পরদিন সময়মত ঘাটে গিয়ে দেখলাম ট্রলার আছে, ৫০ টাকা করে ভাড়া বলে হাঁক ডাক দিচ্ছে; উঠে পড়লাম। দেখলাম, এক নবদম্পতি আছে, দুই বন্ধু আছে, এমন আরো অনেকেই আছেন যারা বাড়ির বাইরে ঈদ করার সংকল্প করেছেন। সংগী পেয়ে আমার মন ভালো হয়ে গেছে। গল্প করতে করতে এগিয়ে চললাম; সবাই নৌকার দুই পাশে বসেছে। নাফ নদীতে নৌকা দুলকি চালে চলছে, ঝিরিঝিরি বাতাস গায়ে নাচন তুলে চলে যাচ্ছে। এভাবে এক ঘন্টায় নাফ নদীর শেষ সীমানায় চলে এলাম।
খেলা শুরু হলো এর পর; বঙ্গোপসাগরে ট্রলার পড়তেই বিরাট বড় ঢেউয়ের মুখোমুখি হলো! একেকটা ঢেউ ট্রলারকে উলট-পালট করে দিতে লাগল; প্রতিটি ঢেউ এমনভাবে আসে, মনে হচ্ছিল এবারই ট্রলারটাকে ডুবিয়ে দিবে। এই অবস্থায় সবাই হুড়মুড় করে নেমে গেছে নীচে, যেখানে সাধারণত মাছ রাখা হয়; আর আমি চলে গেলাম নৌকার গলুইয়ে, মাঝি ভাই’র কাছাকাছি।
তখন সিগারেট খেতাম, প্রিয় ব্র্যান্ড ছিল বাংলা ফাইভ; প্যাকেট থেকে দুইটা বের করে একটা মাঝির দিকে এগিয়ে দিলাম আর একটা নিজে নিলাম। মাঝির নাম হারুন, সেন্টমার্টিনেই বাড়ি-ঘর; এসব ঢেউ তার কাছে নস্যি মনে হলো। বিকারহীনভাবে তিনি ঢেউ সামলে যাচ্ছেন; একটা টেকনিক হারুন মাঝিকে এডাপ্ট করতে দেখলাম, তা হলো, যখনই একটা ঢেউ আসছে, তখনই তিনি ঢেউটাকে মুখোমুখি সামলাচ্ছেন! বুঝলাম, এই ঢেউ যদি নৌকার সাইড থেকে আঘাত করত, তবে এই নৌকা বাঁচানো যেত না।
ট্রলার যত সাগরের গভীরে যেতে লাগলো, ঢেউয়ের উচ্চতা আর তীব্রতাও বাড়তে লাগলো; ফলে, নীচে যারা ঢুকে গিয়েছিল, তারা মোটামুটি অনেকেই বমি করে নৌকা ভাসিয়ে দিল। এর মধ্যে একজন উঁকি দিয়ে আমাকে জিগ্যেস করল, ভাই, আর কতক্ষণ? আমি নিজেই চিনি না, কিভাবে বলব কতক্ষণ?
হারুন মাঝিকে জিগ্যেস করলাম, ভাই আর কতক্ষণ? উনি বললেন, ঐ যে দেখেন, দূরে ছোট একটা জায়গা দেখতে পাচ্ছেন? আমি বললাম, না। উনি বললেন, ওটাই সেন্টমার্টিন! আমি নীচের লোকদের সান্তনা দেয়ার জন্য বললাম, ভাই, আর ২০ মিনিট লাগবে! ভয়ে কেউ মাথা তুলছে না নৌকার উপরে; আছি কেবল আমি আর হারুন মাঝি।
বঙ্গোপসাগরের দুই ঘন্টার তান্ডব শেষে একসময় পৌঁছে গেলাম স্বপ্নের দ্বীপ সেন্টমার্টিন। ৫০০ টাকা দিয়ে একটা রুম নিলাম; রাতের খাবারের জন্য কিছু বাড়তি নিয়েছিল তারা, মনে পড়ে ছোট ছোট সামুদ্রিক মাছ দিয়ে খাইয়েছিল। এর আগে বিকেলে পুরো সেন্টমার্টিন একবার ঘুরে এসেছিলাম, তখনো এখনকার মত এত কমার্শিয়াল হয়নি; এক অদ্ভুত ভালোলাগা ভর করে ছিল। রাতে খেয়েদেয়ে ঘুমাতে গেলাম, পরদিন ঈদ-উল-ফিতর; জানি না কি করব কালকে!
পুনশ্চঃ আমি কাউকেই কখনো সাপোর্ট করব না ট্রলারে সেন্টমার্টিন যেতে; এটি একরকম মৃত্যুর সাথে পাঞ্চা! অনেক জাহাজ আছে, যে কোন একটাতে যান; কিন্তু জাহাজ বন্ধ থাকলে ট্রলারে কেন যেতেই হবে? সতর্ক থাকুন, জীবন বাঁচান আর সেই সাথে পরিবেশ বাঁচান। ধন্যবাদ।
Your article helped me a lot, is there any more related content? Thanks!
Can you be more specific about the content of your article? After reading it, I still have some doubts. Hope you can help me.
He is such a kind and caring man buy priligy usa
Thanks for sharing. I read many of your blog posts, cool, your blog is very good.
ddzc6u
Ищите в гугле
cknoha