থানকোয়াইন ও পালংখিয়াং – পাহাড়ি ঝর্ণার টানে – ১

থানকোয়াইন ও পালংখিয়াং - পাহাড়ি ঝর্ণার টানে - ১

থানকোয়াইন ও পালংখিয়াং ঝর্ণার পাদদেশে পৌঁছে যাব, এ স্বপ্ন ছিল, আশা ছিল না; কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে দুটি ঝর্ণাই দেখে, সেখানে অবগাহন করে ফিরতে পারলাম। জীবনের সেরা ট্যুরগুলির একটি সমাপ্ত করে এলাম ‘অলটিটিউড হান্টার’ গ্রুপের সাথে ট্যুর এডমিন রুদ্রের অসাধারণ নেতৃত্বে; আজ সেই গল্পই বলব আপনাদের।

নানান দিক থেকেই ব্যতিক্রম এই ট্যুর; এখানে টানা তিনদিন দুপুরে কেবল শুকনা খাবার খেয়ে থাকতে হয়েছে, সকাল-বিকাল রান্না করে খাইয়েছে ট্যুর এডমিন রুদ্র, ঝর্ণার পাশে ক্যাম্পিং করে থেকেছি এক রাত, বাসা থেকে প্লেট আর গ্লাস নিয়ে যেতে হয়েছে, খোলা আকাশের নীচে টয়লেট করতে হয়েছে, সেই টয়লেট চেপে রাখার জন্য ইমোটিল ক্যাপসুল পর্যন্ত খেয়েছি, ভোরের তীব্র শীতের মোকাবেলায় ঝর্ণার পাশে আগুন পোহায়েছি, পায়ে তীব্র ব্যাথা নিয়ে হেঁটেছি ঘন্টার পর ঘন্টা, ভোরের তীব্র শীতেও ঝর্ণার খুমে সাঁতার কাটতে ছাড়িনি, শেষমেশ ট্রাকে চড়ে ১৩ কিলো থেকে আলীকদম এসেছি; বুঝেছি, পাহাড় একবার যাকে ধরে, তাকে আর ছাড়ে না।

এস আলম পরিবহনের গাড়িতে চকরিয়া নেমে সেখান থেকে চান্দের গাড়িতে আলীকদমের পানবাজার। পানবাজারে হোটেল আল মনসুরে নাস্তা সেরে অটোতে করে টোয়াইন খাল বা তৈনখালের আমতলী ঘাটে পৌঁছেছি দুপুর বারোটার দিকে। সেখানে গিয়ে শুনি, আমাদের জন্য যে দুটি নৌকা রিজার্ভ থাকার কথা সেগুলি নেই! সাথে সাথেই এডমিন লেগে গেল নৌকা যোগাড় করতে। খালের পাড়েই লোকালয়ের শেষ মাথায় ছিল এক অতি সুন্দর মাচা; সেই মাচায় সবাই শুয়ে বসে বসন্তের বাতাস উপভোগ করতে লাগলাম। তখনো সবাই এক পরিবার হয়ে ওঠেনি, একটু একটু করে আইস ব্রেকিং হচ্ছে; আমার বন্ধু আছে তিনজন, স্কুলের বন্ধু সাজ্জাদ, কলেজের বন্ধু শামীম আর ট্যুরবন্ধু শিপু। মোট সদস্যসংখ্যা ১৪; তিনজন মেয়ে আছেন যাদের দুজন আবার ননদ-ভাবী। ননদ-ভাবীর সম্পর্ক যে এত আন্তরিক হতে পারে, এটি চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।

তৈনখাল দিয়ে নৌকা এগিয়ে চলেছে; খরস্রোতা এই খালে এখন কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও বা তার চেয়ে কম, মাঝে মাঝে নেমে যেতে হচ্ছে পানি কম থাকায়, সেটি বরং এক আনন্দের উৎস হয়েছে। মাথার উপরে সূর্য তেতে উঠেছে কিন্তু বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় সে সুবিধা করে উঠতে পারছে না, বসন্তের বাতাসও তার মোড়লপনা কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছে বৈকি!

খালের দু’পাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছি, দুপুর গড়িয়ে গেছে, পাহাড়িরা খালের অল্প পানিতেই গোসল করছে, বাচ্চারা দাপাদাপি করছে, কেউ কেউ মাছ ধরছে, বেশ কয়েকজনকে দেখলাম কাঠের স্তুপ ভেলায় ভাসিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, তামাক ক্ষেতের প্রাচুর্য চোখে পড়ে খুব, একজনকে দেখা গেল গরুর পাল নিয়ে যাচ্ছেন, থানকোয়াইন এর কাছাকাছি গরুর পাল দেখে কিছুটা অবাক হয়েছি। বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ রেইছা ঘাটে নৌকা থেকে নেমে হাঁটার প্রস্ততি নিলাম; এডমিন রুদ্র সবাইকে রেশন ভাগ করে দিল, এগুলো দিয়েই হবে আগামী তিনদিনের রান্না!

(চলবে)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top