পাহাড়ি ঝর্ণার টানে – ৩

পাহাড়ি ঝর্ণার টানে - ৩
পাহাড়ি ঝর্ণার টানে - ৩
পাহাড়ি ঝর্ণার টানে - ৩

স্যুডুলস খেতে খেতে একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, বিপুল সংখ্যক পাহাড়ী নারী পুরুষ মাথায় অথবা কাঁধে করে নানান জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। জিগ্যেস করে জানলাম, এরা দুছরি বাজার যাচ্ছে এগুলো বিক্রি করার জন্য; আজ হাঁটবার, সপ্তাহে একদিন এই হাঁট বসে। আইটেমের মধ্যে কলা আছে, সবজি আছে, তবে সবচেয়ে অবাক করেছে যেটা তা হলো, আমরা যে ফুলের ঝাড়ু কিনি সেই ঝাড়ুর ফুলের স্টিক আছে অনেকের কাছে। বুঝলাম, এগুলো এ অঞ্চলেই জন্মায়। 

ধীরে ধীরে ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে নিলাম; আজকের গন্তব্য পালংখিয়াং ঝর্ণা, তবে সেখানে ক্যাম্পিং না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেজন্য আমরা প্রথমে হাজীরামপাড়ায় যাব, সেখানে এক পাহাড়ী ঘরে মাল-সামান রেখে খালি হাতে পালংখিয়াং যাব এবং ফিরে এসে সেই ঘরেই থাকব। থানকোয়াইন থেকে হাজীরামপাড়ায় যেতে সময় লাগে এক ঘন্টা এবং সেখান থেকে পালংখিয়াং যেতে সময় লাগে দুই ঘন্টা।

হাজীরামপাড়ায় আমাদের কুটিরের সামনের বরই গাছ থেকে বরই পেড়ে খেতে খেতে দুপুর বারোটায় পালংখিয়াং এর দিকে যাত্রা শুরু করলাম। বান্দরবানের আনাচে কানাচেতে যে ঐশ্বর্য ছড়িয়ে আছে, তা কেবল এ ধরনের ট্রেকিং ট্যুরে গেলেই দেখা যায়। পালংখিয়াং তেমনই এক সৌন্দর্য; এটির কথাও আমার ঝর্ণা পরিচিতিতে বলেছিলাম। এখানে যারা ক্যাম্পিং করে, তারা একটা হ্যামক ঝুলিয়ে রাখে আর এটাতে শুয়ে শুয়ে ঝর্ণার শব্দ শুনতে থাকে। এই ঝর্ণাতেও পানি ছিল, যদিও পানির ফ্লো ছিল কম।

পালংখিয়াং এর খুমের পানিতে গোসল করে ফিরতি পথ ধরলাম। ডান পায়ের হাঁটুতে এবং গোড়ালিতে তীব্র ব্যাথা শুরু হয়েছে; বেশী হাঁটলে এটা হয়। ব্যাথা নিয়েই পা’টাকে টানতে টানতে কটেজে ফিরলাম। এই পাড়ায় টয়লেটের ভালো ব্যবস্থা আছে, একটা দুশ্চিন্তা তাই কমে গেল। পায়ে মলম মালিশ করে, ব্যাথানাশক ট্যাবলেট খেয়ে আবার আজকের জন্য মুরগী জবাই করতে গেলাম। 

সকালে যার কলার ভার কাঁধে নিয়েছিলাম, এটা হচ্ছে তার দুলাভাইয়ের বাড়ী। দুটি মুরগী, ধরেছে সে, জবাই করছি আমি। তার দা’য়ে ধার ছিল না এবং সে তাড়াহুড়া করায় একটা মুরগীর গলা কাটা গেল না। অতঃপর আমার চাকুই ভরসা; সেটাকে দ্বিতীয়বার জবাই করলাম। এরপর ওযু করে নামাজ আদায় করে নিলাম আর অপেক্ষা করতে লাগলাম খাবারের। পাচক যথারীতি রুদ্র; আজকের মেন্যু খিচুড়ি, মুরগী এবং রসুনের আচার। আলুভর্তা হবার কথা ছিল, কিন্তু আলু যে কার ব্যাগে, এটিই আর উদ্ধার করা সম্ভব হলো না।

ইতোমধ্যেই সবাই আপন হয়ে গেছে, সবাই সবার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, আমার বন্ধু সাজ্জাদ মজার মজার কথা বলে আসর জমিয়ে দিয়েছে। একটা গ্রুপ উনো খেলতে বসেছে, আমি নীরবে দেখছি। সাধারণত আমি প্রচুর কথা বলি, কিন্তু এবার সাজ্জাদের জন্য সে সুযোগ পেলাম না। যথারীতি অতি সুস্বাদু খাবার এসে গেলে, আমরা তুলনামূলক বয়স্করা খেয়ে শুয়ে পড়ার আয়োজন করলাম। আমাদের ঘুম পাড়িয়ে তরুণ-তরুণীরা চুপিসারে পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় চলে গেল মাচায় বসে গান-বাজনা করতে; আমরা টেরও পেলাম না কিন্তু আকাশের চাঁদ আর তারারা তাদের সে আসরের সাক্ষী হয়ে রইল।

(চলবে)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top