
কৃষ্ণ রাধার প্রেমের শহর হলো উত্তর প্রদেশের মথুরার বৃন্দাবন, সেই নামে যখন বাংলাদেশে গাজীপুরের শ্রীপুরে রিসোর্ট হয়, তখন মনে প্রশ্ন না এলেও সেখানে গেলে এর উত্তর কিছুটা পাওয়া যায় বৈকি! তবে এখানে সন্ধ্যার পর যখন ভজন শুরু হয়, তখন এর মর্মার্থ কিছুটা উপলব্ধি করা যায়, সেই আলোচনায় পরে আসছি।
শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে পৌঁছলাম সেখানে; ভাওয়ালের জংগলে শ্রীপুর শিশুপল্লীর পাশে এর অবস্থান। ঢুকতেই ডানপাশে চমৎকার সবুজ গালিচা, তার পাশে নামাজের জায়গা, তারও পিছনে আধুনিক রিসোর্ট এবং তার বামে একটি স্লাইড ও দোলনা।
আর গেটের বামপাশে শালগাছের বন, সেখানে জায়গায় জায়গায় বসার ও শোয়ার জন্য বেঞ্চি ও মাচা করে দেয়া আছে। সবুজ গালিচার শেষ মাথায় গাড়ি পার্কিং এর জায়গা, আর তারপর আছে এখানকার পরিচালকের আস্তানা!
শালবনের শেষ মাথায় আমাদের ক্যাম্পিং সাইট, তার শেষ মাথায় একটি গেইট আছে, সেটা দিয়ে শালবনের মাঝখান দিয়ে সুন্দর হাঁটা রাস্তা চলে গেছে; সেটি গিয়ে দুদিকে ভাগ হয়ে দুটি পুকুরের দিকে চলে গেছে, বাম পাশেরটিতে মাছ চাষ হয় আর ডান পাশেরটিতে চাইলে গোসল করা যায়।
ক্যাম্পে ধীরে ধীরে ক্যাম্পাররা জড়ো হচ্ছে, এসেই সবাই যার যার ক্যাম্প সেট করে ফেলছে। সা’দ ইতস্ততঃ ঘোরাফেরা করছে, সে সাথে ফুটবল ও ফ্রিজবি নিয়ে এসেছে, খেলার সাথী খুঁজছে। ধীরে ধীরে খেলার সাথী হিসেবে আরবী ও প্রকৃতি যোগাড় হয়ে গেছে, পরবর্তীতে আরো যোগ হয়েছে আরিয়া ও লাবীবা; বাবুজ ও নিহাদকে খেলায় আগ্রহী করা গেল না কিছুতেই।
দুপুরের খাবারের জন্য লাইন ধরছি, বাসা থেকে নিয়ে গেছি প্লেট ও মগ; মূলতঃ এই ক্যাম্পিংটি ছিল Outdoors BD Anniversary Camping 2.0 যেটি আউটডোর বিডি’র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। আমরা সবাই এই অনলাইন শপ থেকে জিনিসপত্র কিনি, এটা তাদেরই মিলনমেলা। আমরা সাইট ওনার থেকে খাবার নেইনি, নিজেরা বাবুর্চি দিয়ে রান্না করিয়েছি, তাই সবকিছু নিজেদের নিতে হয়েছে।
দুপুরের খাবারের মেন্যুতে ছিল সাদা ভাত, গরুর গোস্ত, চিংড়ি মাছ, আলু ভর্তা, ডাল ও সালাদ; প্লেটার সিস্টেমে খাবার নিয়ে আমি আর সা’দ তাবুতে বসেই খেলাম তৃপ্তি সহকারে। এখানে পানির যেসব কল বসানো আছে, সে পানি পান করা যায়; আমরা ফ্লাস্ক ভরে ভরে সে পানিই পান করেছি।
বিকেলে ছোটদের মধ্যে আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল খেলা হয়েছে, আর্জেন্টিনা দুই গোলে জিতেছে; সা’দ ব্রাজিল দলে ছিল, দুই গোল খাওয়ায় তার মন খারাপ। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই নানান ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে; আমি মাগরিবের নামাজ পড়ে বেরিয়ে দেখি, এই সাইটের মালিক, জনাব আমীর হামজা মৃধা সাহেব গানের আসর বসিয়েছেন। তিনি নিজ আসনে সমাসীন হয়েছেন, একজন হারমোনিয়াম নিয়ে গান ধরেছেন, সাথে আছে তবলচী আর আছেন মৃধা সাহেব তথা বাবার দুই চারজন ভক্ত। বুঝলাম, এই ঘটনা প্রায়ই ঘটে এখানে।
ঘটনা কি আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য ভিতরে ঢুকলাম, দেখি ব্যানারে লেখা তিনি সেই এলাকার নূরু পাগলার ভক্ত; বর্তমানে তিনি নূরু পাগলার আদর্শ চর্চা করে যাচ্ছেন। এই আমীর হামজা সাহেব সেখানকার নামাজের জায়গাসহ নানান জায়গায় নিজের নামে বাণীসহ ফেস্টুন টানিয়ে রেখেছেন। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন আনসারের এসিস্ট্যান্ট এডজুটেন্ট, দেখতে অতি হ্যান্ডসাম, প্রায় ছয় ফুট লম্বা, ভরাট কন্ঠ আর সফেদ শ্মশ্রুমণ্ডিত। তাঁর দুই ছেলে ব্যক্তিগত জীবনে খুবই সফল, একজন সচিব বলেও শোনা গেছে! মৃধা সাহেব তাঁর আস্তানার সামনে নিজের কবরের জায়গা প্রস্তত রেখেছেন বলে ওনার এক ভক্ত জানিয়েছে; দেখলাম, সেই জায়গাটি বেড়া দিয়ে ঘেরা।
সেখান থেকে বেরিয়ে দেখি সবাই শালবন পেরিয়ে রাতের আঁধারে পুকুরপাড়ের দিকে যাচ্ছে। আমি সা’দকে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে তাঁবুতে রেখে ওদের পিছু নিলাম৷ গিয়ে দেখি ঝলমলে চাঁদ সবে ওপাশের গাঁয়ের উপর দিয়ে উঠতে শুরু করেছে আর পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে মাহি ভাই, যিনি এভারেস্টের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মিটার এবার জয় করেছেন, তিনি সবাইকে তারা চেনাচ্ছেন। আশা করছি, মাহি ভাই পরেরবার এভারেস্ট জয় করে ফিরবেন।
আমি ফিরে এসে মৃধা সাহেবের ডেরায় উঁকি দিলাম; যাব্বাবা, এবার তিনি নিজে হারমোনিয়াম নিয়ে দরাজ কন্ঠে ভাবসংগীত গাইছেন আর একজন সেটা ভিডিও করছেন। আমি সেখান থেকে বেরিয়ে সবুজ গালিচার উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে জোছনা উপভোগ করছিলাম। ইতোমধ্যেই শিশির পড়ে ঘাসগুলো ভিজে গেছে, আলো আঁধারিতে এক মোহময় পরিবেশ বিরাজ করছে চতুর্দিকে।
এশার নামাজ পড়ে রাতের খাবার খাওয়ার পর আমি সোজা তাঁবুতে ফিরে গেলাম, এমন একটি রাত মিস করা কিছুতেই ঠিক হবে না, আমি তাঁবুর এক পাশের পর্দা উঠিয়ে চাঁদের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলাম। ধীরে ধীরে চোখ বুঁজে এলো, শেষ মূহুর্তে পর্দা নামিয়ে ঘুমের গভীরে চলে গেলাম।
ঘুম ভাংগল গভীর রাতে, এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম; একদিকে আমাদের সাথীরা ক্যাম্প-ফায়ার জ্বালিয়ে কোরাসে গান গাইছে, অন্যদিকে অসংখ্য শেয়ালের ডাক আর এর ঠিক মাঝখানে কাছের কোন তাঁবু থেকে বিকট নাক ডাকার শব্দ মিলেমিশে একাকার। আমি আবার ঘুমাতে চেষ্টা করলাম এবং অর্ধেক সফল হলাম।
রাত সোয়া চারটায় ঘুম থেকে উঠেছি তাড়াতাড়ি ফিরব বলে, অফিস ধরার তাড়া আছে। বের হয়ে দেখি আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ তার জোছনা একাকি বিলিয়ে যাচ্ছে। আমি তাতে অবগাহন করলাম।
এখানে থাকার জন্য তাঁবু ও এসি রুমের পাশাপাশি মাটির ঘরও আছে। গতকাল দেখেছি, মাটির ঘরের কাছে একদল ছেলেমেয়ে টিকটক করছিল। মেয়েরা নাচছিল আর ছেলেরা ভিডিও করছিল; এই রংগলীলার কারনেই বোধকরি কবি এর নাম রেখেছেন বৃন্দাবন।
Thanks for sharing. I read many of your blog posts, cool, your blog is very good.
Can you be more specific about the content of your article? After reading it, I still have some doubts. Hope you can help me.