নিঝুমদ্বীপের নিঝুম রাত – পর্ব ২

নিঝুমদ্বীপের নিঝুম রাত - পর্ব ২

নিঝুমদ্বীপ নামার বাজারে পৌঁছলাম বেলা ১১ঃ০০ টার দিকে, হোটেল আমেনাতে ফ্রেশ হয়ে আর্লি লাঞ্চ করে বেরিয়ে গেলাম ঘুরতে; সময় নষ্ট করতে চাইলাম না। ঘাটে গিয়ে ট্রলার ধরে প্রথমেই গেলাম কমলার দীঘিতে, এখানে নাকি হরিণরা পানি খেতে আসে।

সেখান থেকে হরিণ দেখবার আশায় সংযুক্ত বনের ভিতর চলে গেলাম, ঘন্টা খানেক হেঁটে বেড়ালাম, হরিণের দেখা মিলল না। মাঝি বলছিল, সিত্রাং এ অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখানে প্লাস একবার এমন হলো যে, অজস্র হরিণ নাকি অজানা কারনে মরে পড়েছিল এখানে।

বনে ঘোরাঘুরি করে, চৌধুরি খাল পেরিয়ে কবিরাজের চর সংলগ্ন একটা চরে ট্রলার নোংগর করলাম। সেখানে মেঘনার পানিতে ইচ্ছেমতো গোসল করলাম আর ডুবালাম, পথিমধ্যে দেখা মিলল অনেক মহিষের, পাখ পাখালির আর বকের। অত:পর নামার বাজার ফিরে এসে আবার হোটেল আমেনায় রেস্ট নিলাম

এরপরই বের হলাম খেজুরের রস খেতে; অসংখ্য গাছ এখানে, যখন খুশি চাইলেই খাওয়া যায়, খোঁজ করলেই সবাই দেখিয়ে দেয় কারা বিক্রি করবে। আমরা প্রায় ৬/৭ গ্লাস খেলাম ১০০ টাকা দিয়ে, আমি নিজে খেলাম ৪ গ্লাস।

বিকেলের দিকে নিজের তাঁবু আর ব্যাকপ্যাক নিয়ে চলে গেলাম ক্যাম্প সাইটে, সেখানে রয়েছে কিশোর হাসান, যে ইতোমধ্যেই তাবু পিচ করাতে এবং বারবিকিউ প্রস্তত করাতে ওস্তাদ হয়ে গেছে। সে আমাকে হেল্প করল। হ্যামকে শুয়ে সূর্যাস্ত দেখতে সেই লাগছিল, এখানে নেই কোন শহুরে টেনশন।

সূর্যাস্তের আগে আগে বীচ ধরে লম্বা পথে হেঁটে আসলাম আমরা ৫ জন। সন্ধ্যা নামতেই আকাশের তারারা আমাদের শুভেচ্ছা জানাতে এলো। এরপর আবার নামার বাজারে গেলাম, সেখানে গিয়েছিলাম পেয়াজু খেতে, কিন্তু খেজুরের রসে ভাজা এক জিলাপি দেখে গপাগপ খেয়ে নিলাম তিন পিস, এরপর খেলাম পেয়াজু, মুড়ি ও ছোলামাখা।

দুপুরেই এখানে মহিষের দুধের তৈরি মিষ্টি খেয়েছি, অতুলনীয় তার স্বাদ। মহিষ এখানে খুবই এভেইলেবল, মুড়িমাখা খেয়ে গিয়ে মহিষের দুধের তৈরি দই খুঁজলাম, পেলাম না। সকালে একবার ট্রাই করব ভেবে আবার ক্যাম্পসাইটের দিকে হাঁটা দিলাম, যেতে সময় লাগে ৮-১০ মিনিট।

রাতে বারবিকিউর আয়োজন চলছে, আমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। অন্যান্যরা ক্যাম্প-ফায়ারের ব্যবস্থা করেছে, গান বাজনা চলছে, আমার এসব ভালো লাগে না বলে দূরে রইলাম। বারবিকিউ রেডি হলে খেয়ে শোয়ার আয়োজন করলাম।

আমাদের পুরো ঘটনাধারার সাক্ষী হয়ে রইল কেবল আকাশের তারারা, এরই মধ্যে একবার তাকিয়ে দেখলাম, একসাথে অনেক তারা জড়ো হয়েছে আমাদের দেখবার জন্য। নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত এই প্রান্তীয় অঞ্চলে রাত সাড়ে দশটার নিঝুম নিস্তব্দ রাতে আকাশের তারারা আমাদের পুরো রাত ধরে আগলে রইল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top