নিঝুমদ্বীপের নিঝুম রাত – ৩

নিঝুমদ্বীপের নিঝুম রাত - ৩

গতরাতে দুটি জিনিস মিস করেছি; এক, মহিষের দুধের দই আর দুই, একটি গান যার শিরোনাম কুত্তার বাচ্চা ফুটফুটে সুন্দর!

শুক্রবার এত পর্যটক এসেছে যে, মহিষের দুধের দই সন্ধ্যাবেলায়ই শেষ হয়ে গেছে; আমি সকালে খাব এই অভিপ্রায় নিয়ে ঘুমাতে গেলাম।

ঘুম ভাংগল ভোর সাড়ে ৫ টায়; ভালোই হয়েছে, একটা মাত্র টয়লেট, এই সময়ে ফাঁকা পাওয়া যায়, একেবারেই কম্পিটিশন নেই।

এখানকার নেতা হলো, হাসান; তার কাছ থেকে চাবি নিয়ে গিয়ে ওযু করে ফিরলাম। ফজরের নামাজ পড়ে হাঁটতে বের হলাম। সবাই গভীর ঘুমে পড়ে রয়েছে, অনেক রাত অব্দি তারা ক্যাম্পফায়ার আর বারবিকিউ খেলেছে আর বাজিয়েছে কুত্তার বাচ্চা ফুটফুটে সুন্দর! 

হাঁটতে হাঁটতেই সূর্যোদয়ের সাক্ষী হলাম; সে এক মোহনীয় পরিবেশ, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত আমার বরাবর ভালো লাগে। নিঝুমদ্বীপ নিয়ে ট্যুর অর্গানাইজাররা বরাবর মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে; তারা তাদের এডে বিখ্যাত ৮/৯ টি খেজুর গাছের ছবি আজও দেয় অথচ এগুলো ঝড়ে ভেংগে গেছে কত আগে!

তারা এখনো হরিণের পিছনে দৌড়াবার লোভ দেখায় অথচ হরিণের দেখা মেলা ভার। ক্যাম্পিং করতে হয় খোলা আকাশের নীচে, ন্যুনতম বন জংগল নেই, গতকাল রাত্তিরে নাকি জোয়ারের পানি এসেছিল কিন্তু আমার কাছে তা অধরাই থেকে গেল।

অনেকদূর ঘুরে ফেরার পথেই দেখলাম মহিষের পাল; খাবারের সন্ধানে বেরিয়েছে। ফিরে এসে হ্যামকে শুয়ে পড়লাম, ক্যাম্পাররা একে একে উঠতে শুরু করেছে, কেউ আজ ফিরে যাবে, কেউ বা এখন ঘুরতে বেরোবে। ঠিক তখনই আবার গানটা বেজে উঠলো আমি ভাবতেও পারিনি এই শিরোনামে একটা গান হতে পারে!

যাই হোক, বেলা বাড়ার সাথে সাথে আমাদেরও তাঁবু গুছিয়ে রওনা হতে হলো; মাস্টার হাসানের কাছ থেকে বিদায় নিলাম, আরো আরো বাচ্চারা এসেছিল, তাদের কাছ থেকেও বিদায় নিলাম। একজন বাচ্চাকে পোর্টার হিসেবে নিলাম নামার বাজার পর্যন্ত। 

এরপর নাস্তা করে ট্রলারে রওনা হলাম মনপুরার দিকে; কিন্তু কবিরাজের চরের কাছে গিয়ে ট্রলার নষ্ট হয়ে গেল। ট্রলার থেকে মালিককে ফোন দেয়া হলো, এই মালিকের ৫ টি ট্রলার, তিনি সাথে সাথেই আরেকটি ট্রলার নিয়ে রওনা হলেন।

এই ফাঁকে আমরা দেখি, কবিরাজের চরে এক মাঝি ভাত রান্না করছে। নেমে দেখতে গেলাম তার কাজ। ফারুক ভাই দেখি ইতোমধ্যেই তার পারমিশন নিয়ে রান্না করা মাছ খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন। আমিও শামিল হলাম।

তার সংগীরা জালে ধরা পড়া মাছ বাছাই করছে, আমাদের এডমিন মাসুম কিছু বড় সাইজের গুলশা মাছ কেটে ভেজে দিতে বললে সে রাজি হয়ে গেল; কথায় কথায় জানলাম তার নাম সামীর, বাড়ি কুমিল্লা শহরে, এখানে ৬/৭ বছর হলো থাকছে এবং এখানেই বিয়ে করেছে।

কবিরাজের চরের এই সময়খানিতে বিরক্তি লাগার কথা ছিল কিন্তু মাছ ভেজে খেতে খেতে সময় কোনদিক দিয়ে চলে গেছে টেরই পাইনি। অত:পর আমাদের ট্রলার এলে আবার তাতে চড়ে বসলাম, পেছনে পড়ে রইল সংগীসমেত সামীর আর তার ভাত তরকারির পাতিল।

ট্রলার মনপুরার পানে চলতে শুরু করেছে; ভালোই যাচ্ছিল কিছু সময়, কিন্তু এ কি! বোট এভাবে দোলে কেন? মেঘনার মূল স্রোতে পড়ার সাথে সাথে ট্রলার ব্যাটারি দেয়া পুতুলের মত দুলতে লাগল!

নতুন ট্যুরিস্ট হলে ভয় পাবার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। আমার ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাবার অভিজ্ঞতা থাকায় ভয় পেলাম না; একসময় পৌঁছে গেলাম মনপুরা, যেটি হতে যাচ্ছে নতুন পর্যটন আকর্ষণ! 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top