
অপার্থিব দেবতাখুম! ঢাকা থেকে বান্দরবান গিয়ে সেখান থেকে নানান কসরত করে চান্দের গাড়িতে কচ্ছপতলী পৌঁছে, সেখান থেকে দেড় ঘন্টা পাহাড়ে ট্রেকিং করে তবেই এই জলাশয়ের সন্ধান পাওয়া গেল; তার আগে খুমের সমপরিমাণ স্বচ্ছ পানির জলাশয় নৌকায় আসতে হয়েছে। নৌকা থেকে নামলেই ছোট্ট পাথুরে পথে পেরুতে হয়, সেই পথে আপনার পাশ দিয়েই কলকল ধ্বনিতে গড়িয়ে পড়বে ঝর্ণার পানি; আপনার মন চাইবে কান পেতে সেখানে ঝিম মরে বসে থাকতে!
দেবতাখুমের দৈর্ঘ্য হবে তিন’শ গজের মত। এই পথটুকু বাঁশের তৈরি ভেলায় চড়ে নিজেকেই চালিয়ে নিতে হয়; সবচেয়ে বড় রোমাঞ্চ এটাই। সংগী সাথীরা নীরব থাকলে, সেখানে এক অদ্ভুত দ্যোতনার সৃষ্টি হয়! মাঝে মাঝে সূর্যের হাসি উঁকি দেয় উচুঁ পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত গাছ গাছালির ফাঁক দিয়ে!
অজস্র পর্যটকে ভরপুর দেবতাখুম; কি এক নেশায় দূর দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছে নানান বয়সী মানুষ। কোথাও জলাশয় থাকবে আর আমি তাতে ডুব দিব না, তা হতে পারে না। খুমের বরফশীতল স্বচ্ছ পানিতে যতক্ষন পারলাম ডুবিয়ে নিলাম; আর কাউকে কাজটি সাহস করে করতে দেখলাম না!
খুমের শেষ প্রান্তে, যেখানে তীব্র বেগে ঝর্ণার পানি পাথরের ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে এসে খুমে পড়ছে, সেখানে খুব কম পর্যটকই যাচ্ছে; সবাই ছবি তোলায় ব্যস্ত! আমি সেই ঝর্ণার স্রোতে গা-টা এলিয়ে দিলাম। কষ্ট করে দেবতাখুম যাওয়া পর্যটকরা এই আনন্দের সন্ধান জানে না!
কচ্ছপতলী থেকে খুমে গিয়েছি পাহাড় ডিঙ্গিয়ে, ফিরে এসেছি ঝিরি পথে! সে এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা! অন্ততঃ দশটি ঝিরি পেরিয়ে আসতে হয়। আসতে আসতে দেখেছি পাহাড়ীদের তামাক ক্ষেত, ভুট্রা ক্ষেত ইত্যাদি। শরীর ততক্ষণে ক্লান্ত হয়ে এসেছিল; ঝিরির স্বচ্ছ পানিতে হাঁটতে হাঁটতে চোখে ভাসছিল ছোট্ট পাহাড়ী বাচ্চার দোলনায় শুয়ে ঘুমানোর দৃশ্য আর কানে বাজছিল ঝর্ণার কলকল ধ্বনি।
এটি ফেব্রুয়ারির ঘটনা, তবে এখন নাকি পর্যটকরা এর পরিবেশ নষ্ট করে ফেলছে; আমরা যেখানেই যাব সর্বোচ্চ সতর্ক থাকব পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে। হ্যাপি ট্রাভেলিং।




