সিলেট ভ্রমণ – শেষ পর্ব (মাধবপুর লেক)

সিলেট ভ্রমণ - শেষ পর্ব (মাধবপুর লেক)

দেখতে পারেন: 

মাধবপুর লেক দেখার জন্য ঢাকায় ফেরার পথে সিলেট ত্যাগ করে শ্রীমঙ্গলের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম এবং বড় দুটি ভুল করলাম; প্রথমটি হলো, শেরপুর হয়ে মৌলভিবাজার দিয়ে শ্রীমঙ্গল না ঢুকে বাধ্য হয়ে ২৫ কিমি রাস্তা বেশী ঘুরে মিরপুর বাজার হয়ে ঢাকার রাস্তা দিয়ে শ্রীমঙ্গল ঢুকেছি!

কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা কেউ জানে না; এই রাস্তা দিয়ে ঢুকেছি বলেই শ্রীমঙ্গলের রাস্তার চোখজুড়ানো সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারলাম, যেটি ফিরতি পথে অনুভব করা যায় না। এই রাস্তাখানির সৌন্দর্যের বর্ণনা কেবল সাহিত্যেই মেলে, এ আমার কর্ম নয় বলে এড়িয়ে গেলাম।

শ্রীমঙ্গলের পানসী রেস্টুরেন্টে নাস্তা করে কোথায় যাব এই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে দ্বিতীয় ভুলটি করলাম; করোনার কারনে লাউয়াছড়া বন্ধ থাকায় প্রথমেই মাধবপুর লেকে না গিয়ে হাইল হাওড়ের অন্তর্গত নামকরা ‘বাইক্কা বিলে’ গেলাম এবং মৈনট ঘাটের মত ধরা খেলাম। শীতকালে হয়ত এখানে কিছু পাখি আসে, কিন্তু এই সিজনে এটি আর দশটি বিলের মত, মাঝখানে কেবল একটি পদ্মফুলের বাগান আছে, যেটি নৌকা ছাড়া ভালোভাবে দেখা যায় না। হতাশ হয়ে ফিরতি পথ ধরলাম।

শ্রীমঙ্গল শহরে ফিরে রওনা হলাম মাধবপুর লেকের উদ্দেশ্যে; লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান পেরিয়ে এই লেকটি, মূলতঃ এটি পড়েছে একটি চা বাগানের ভিতর। বাগান কর্তৃপক্ষ ঢুকতে না দিলে কিছু করার নেই, করোনার কারনে এখানে টিকেট বন্ধ থাকলেও গার্ডরা হতাশ করছে না কাউকেই; ভিতরে প্রবেশের সময় না চাইতেই সাথে জুটে গেল গাইড রাজকুমার।

প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই লেকটি এবং গভীরতা ৬০ ফুটেরও বেশী, এসব তথ্য রাজকুমারের দেয়া। এই লেকের পাড়ে যে টিলা আছে সেসব টিলার চা গাছ থেকে পাতা তুলছেন অনেক মহিলা, তাদের মধ্যে রাজকুমারের স্ত্রীও আছে। ২৩ কেজি পাতা তুললে ১০২ টাকা পাওয়া যায়, তাও সেটি হতে হবে কচি পাতা যেমন রাজকুমারের ছবিতে দেখা যাচ্ছে; পাতা কচি না হলে সেটি ফেলে দিয়ে ওজন করা হয়। অনেকেই আছে দিনে ১৭/১৮ কেজির বেশি পাতা তুলতে পারে না। এখানেই প্রথম দেখলাম লম্বা চা গাছ!

সমতল ভূমি থেকে কিংবা টিলার উপর থেকে, মাধবপুর লেক একইরকম শান্ত ও স্নিগ্ধ, কোন বাহুল্য এতে চোখে পড়ে না। একে ঠিক পর্যটন স্পষ্ট বলা চলে না, কিন্তু লেক, পাহাড়, চা বাগান সব মিলিয়ে একটা সুন্দর অনুভূতি হয়। লেকের গভীরতা বেশী থাকায় এখানে নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়নি, নেই কোন দোকানপাটও।

ফেরার পথে রাজকুমার লেক থেকে তুলে একটি বেগুনি শাপলা আমার ছোট ছেলেকে উপহার দিল এবং আমাদের বলল, এই ফুলের গন্ধ লাক্স সাবানের মত! আমরা গন্ধ শুঁকে আশ্চর্য হয়ে গেলাম, মনে হলো বেগুনি রঙের লাক্স সাবান হাতে হেঁটে চলেছি। 

শ্রীমঙ্গল থেকে বিদায় নেবার আগে পানসীতে দুপুরের খাবার খেয়ে আদি নীলকন্ঠ টি কেবিনে গেলাম সাত রঙের চা পান করতে; এটি এখন আট রঙেও পাওয়া যায়, তা-ই টেস্ট করলাম এবং সেখান থেকেই ঢাকার উদ্দেশ্যে শ্রীমঙ্গলকে বিদায় জানালাম।

ছোট ছেলেকে কোনভাবেই ঢাকায় আনা যাচ্ছিল না, সে সিলেটের হোটেলের বাসায় যাবে; তাকে বলা হলো, গাড়ি সিলেটেই যাচ্ছে! কিছুক্ষণের মধ্যেই সে ঘুমিয়ে গেল; এইটুকুন একটা বাচ্চাকে মিথ্যে বলে ফাঁকি দেয়া গেলেও সিলেট আর শ্রীমঙ্গলের স্মৃতিকে কিছুতেই ফাঁকি দেয়া গেল না, বারংবার তা নানান রূপে মনের মাঝে উঁকিঝুঁকি মারতে লাগল।

পরিশেষঃ মাধবপুর লেকের কোথাও কোন ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখিনি, এটি আনন্দের বিষয় ছিল; আমরা সবসময় ট্যুরিস্ট স্পটগুলো পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করব, এই হোক আমাদের প্রত্যয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top