লাচুং – (নয়নাভিরাম দার্জিলিং-সিক্কিম: ৫)

লাচুং - (নয়নাভিরাম দার্জিলিং-সিক্কিম: ৫)
লাচুং - (নয়নাভিরাম দার্জিলিং-সিক্কিম: ৫)
লাচুং - (নয়নাভিরাম দার্জিলিং-সিক্কিম: ৫)

কল্পনায় এঁকেছিলাম লাচুং হবে এমন একটি জায়গা, যেখানে গেলেই দেখব এমন তুষারপাত, যে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে হোটেলে যেতে হচ্ছে, রাতে টেম্পারেচার মাইনাস ১০ ডিগ্রি হবে, শীতে আমরা কাঁপতে থাকব, হিটার নেই বলে কষ্ট হবে, ছোট বাচ্চা নিয়ে কেন আসলাম-কেন আসলাম বারবার এমন মনে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি; সে কারনেই আজ লাচুং যাব বলে সকাল থেকেই উত্তেজিত ছিলাম!

গাইড খবর দিল, পারমিশন পেতে সময় লাগছে, পারমিশন পেলেই সে এসে আমাদের নিয়ে যাবে, গাড়ি রেডি আছে। গাইডের নাম বীরেন্দ্র, অতি ভদ্র ও প্রফেশনাল কন্ঠ; লাচুং বা ছাংগু লেক যেতে গাইড বাধ্যতামূলক। এই ফাঁকে আমরা বেরোলাম কর্পূর কিনতে, হাঁটতে হাঁটতে এক জায়গায় পেলাম বটে তবে দাম অত্যধিক বেশী মনে হলো, ছোট একটা কৌটো চাইল ১৫০ রুপি। গাইডকে ফোন দিলে সে জানালো, কর্পূর ও অক্সিজেন ক্যান কেনার আলাদা জায়গা আছে, সে আমাদেরকে সেখানে নিয়ে যাবে।

কর্পূর না কিনে হোটেলে ফিরে এলাম, বড় লাগেজ হোটেলের রিসেপশনে রেখে ছোট ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এলাম; আজ রাত লাচুং-এ থাকলেও কাল রাতে আবার এই হোটেলেই থাকব। ড্রাইভার রোশন দা, কথা কম বলেন কিন্তু মিটিমিটি হাসেন; ওনার প্রিয় খাবার স্টিং এনার্জি ড্রিংক, আমি যতবার ওনাকে খাবার অফার করেছি ততবারই উনি একটি করে এনার্জি ড্রিংক নিয়েছেন।

গ্যাংটক ছাড়িয়ে গাড়ি লাচুং এর দিকে অগ্রসর হলো, আজ গাড়িতে গাইডসহ মোট আটজন আছি, সাথে আছে ড্রাইভার। আজ আমরা লাচুং যাবার পথে তিনটি ঝর্ণা দেখব, সেটি প্যাকেজেই উল্লেখ ছিল। কিছূদূর যাবার পরই বিস্ময়ের পালা শুরু; আমি জীবনে বেশ কিছু পাহাড়ি রাস্তা দেখেছি, এমন সুন্দর রাস্তা আর প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী আমি আগে কখনো পাইনি।

প্রায় ১২০ কিমি রাস্তা যেন সারাটিক্ষণ মুগ্ধ করে রেখেছিল। চলতে চলতে একসময় পেয়ে গেলাম সেভেন সিস্টার্স ওয়াটারফল; এটি আকারে বৃহৎ, গর্জনে তীব্র এবং দৃষ্টিনন্দন। শীতের শেষ বলে একটি মাত্র ফোয়ারা এখন দেখা যাচ্ছে। এখানে সবাই একবার করে থামে, বাথরুম সারে, চা-কফি-ড্রিংক্স এসব খায় আবার যাত্রা শুরু করে।

এরপর পেলাম নাগা ওয়াটার ফলস; এটিও একটি অনিন্দ্য সুন্দর ঝর্ণা। নাগাকে পেরিয়ে সামনে এগোচ্ছি, হটাত আমার ছোট ছেলে বলল, বাবা, উপরে এটা কি?! তাকিয়ে দেখি, এ কি কান্ড? এ যে কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ, একেবারে যেন মাথার উপর এসে রয়েছে। বিস্ময়ে আমরা হতবাক হয়ে গেলাম। গাড়ি থামানো হলো, জয়া ও ফাতেমা উত্তেজনার চোটে একেবারে পাহাড়ের কিনারায় গিয়ে ছবি তুলতে লাগল। প্রাথমিক উত্তেজনার রেশ কমে এলে আমরা আবার গাড়ি ছেড়ে দিলাম।

সর্বশেষে পেলাম ভীম নালা ওয়াটার ফলস, এটার আরেক নাম অমিতাভ বচ্চন ওয়াটার ফলস! এটার সৌন্দর্য বর্ণনাতীত; প্রায় ৪০০ ফুট উপর থেকে বিপুল বিক্রমে এটি গড়িয়ে পড়ছে, এখানে দাঁড়িয়ে একটি শর্ট ভিডিও শুট করলাম। এই ঝর্ণার পাদদেশে একদল ছেলেমেয়ে আগুন জ্বালিয়েছে আর তার পাশে নাচানাচি করছে, সাথে সাউন্ডবক্সে বেজে চলেছে ‘আই এম এ ডিস্কো ড্যান্সার”!

তুষারাবৃত পাহাড় দেখতে দেখতে এতক্ষণে চোখে সয়ে এসেছে, বিস্ময়ের মাত্রা কমে গেছে; তবে এগুলো যে এত সুন্দর লাগে দেখতে, ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। হোটেল হিডেন ভ্যালিতে থিতু হলাম। আসার আগেই বীরেন্দ্রকে বলেছিলাম, তুমি যে মুরগী কিনবে, সেই মুরগী আমি জবাই করব। সেই মোতাবেক এক জায়গায় গাড়ি রেখে মুরগীর দোকানে গেলাম আমি আর বীরেন্দ্র। মুরগীর দাম ঠিক হলে আমিই জবাই করলাম, দোকানদার সেই মুরগী কেটে সাইজ করে দিলে নিয়ে এলাম। সেই মুরগীই রাতে রান্না হলো, খেয়ে শুয়ে পড়লাম; দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসতে সময় লাগল না, আগামীকাল হাতছানি দিয়ে ডাকছে ইয়ুমথাং ভ্যালি!

8 thoughts on “লাচুং – (নয়নাভিরাম দার্জিলিং-সিক্কিম: ৫)”

  1. I don’t think the title of your article matches the content lol. Just kidding, mainly because I had some doubts after reading the article.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top