গ্রুপে থাকার কথা ৮ জন, দুই দিন ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছি কেবল নিজের পরিবারের ৪ জন; বাকি ৪ জন বর্ডার ক্রস করতে পারে নি! সে এক করুন ইতিহাস; ঢাকা থেকে আমার পরিবার বুড়িমারি এক্সপ্রেসের স্লিপারে রওনা দিয়েছিলাম ২০ এপ্রিল রাত ৮ঃ০০ টায় আর তারা চারজন রওনা দিয়েছিল, বরকত ট্রাভেলস-এ; আমার সাড়ে ২০ ঘন্টা লেগেছে আর তাদের সাড়ে ২২ ঘন্টা লেগেছে বুড়িমারি বর্ডারে পৌঁছাতে। তারা সেদিন আর বর্ডার ক্রস করতে পারে নি!
দুঃসংবাদ এখানেই শেষ নয়; এই চারজনের মধ্যে একটি কাপল আছে আর এক চাকরিজীবী মেয়ে আর তার বাবা আছেন, এর মধ্যে বাবা ইন্ডিয়ায় ঢুকতে পারেননি, ওনার পাসপোর্টে নাকি আরেকজনের ভিসা লাগানো।
যাই হোক, ২৩ তারিখ সকাল বেলা প্রথমবারের মত তাদেরকে দেখলাম এবং ৭ জন এক গাড়িতে করে গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম দুপুর ১২ঃ০০ টায়। র্যাংপো চেক পোস্টে পৌঁছে গাড়ি পার্ক করল একেবারে তিস্তার পাড়ে। মনে পড়ল, ২০০১ এ কালিম্পং যাবার পথে এমন তিস্তার পাড়ে গাড়ি পার্ক করার সাথে সাথে দৌড়ে নেমে গিয়েছিলাম মরা সবাই এবং অনেকখানি নদীর দিকে এগিয়ে পাথরের উপরে বসে ছবি তুলেছিলাম।
আজও তাই করলাম; সঞ্জু ও জয়া দম্পতির সঞ্জুকে ৭ টি পাসপোর্ট দিয়ে তিস্তার দিকে এগোলাম। বড় খরস্রোতা নদী, শীতের শেষ বলে পানি কমে এসেছে কিন্তু বেগ কমে নি। এই তিস্তার পানি না পেয়ে আমার দেশের একাংশ বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে ফি বছর! তিস্তার পাড়ে ছেলেদের নিয়ে সময় কাটাতে কাটাতেই পারমিশনের কাজ শেষ হলো; আবার টাটা সুমো গাড়িতে চড়ে বসলাম।
ও হ্যাঁ, এই তিস্তার পাড়েই ২০০১ সালে জীবনে প্রথম ভেজিটেবল মম খেয়েছিলাম এবং এর প্রেমে পড়েছিলাম; সংখ্যায় ছিল ১১ টি। গ্যাংটকে হোটেল ঠিক করা হয়েছে ‘Lotus Inn Samphel’, এর সুপরিসর জানালা দিয়ে একবার দৃষ্টি দিয়ে মন ভালো হয়ে গেছে; হোটেল যে এমজি মার্গ থেকে ৩ কিলো দূরে পড়েছে, এই দুঃখ নিমেষেই ভুলে গেলাম।
খাবারের ব্যবস্থা এখানেই; যদিও বাফেট বলে, আসলে ফিক্সড আইটেম নিজে নিজে নিয়ে নেওয়ার নাম বাফেট এখানে। সুন্দর গুছানো হোটেল, বোঝা গেল, এটি একটি জনপ্রিয় হোটেল; লোকজন বোঝাই, তবে আজ বেশীরভাগই ভারতীয়, বাংলাদেশীরা এখনো এসে পৌঁছায়নি।
সন্ধ্যার পর এক অভাবনীয় দৃশ্যের অবতারনা হলো; জানালা দিয়ে যতদূর দৃষ্টি গেল, পাহাড়ের গায়ে বাতির ঝলকানিতে মন-প্রাণ ভালো হয়ে গেল, দৃষ্টি তার স্বার্থকতা খুঁজে পেল। এত সুন্দর লাগছিল, বলে বোঝানো যাবে না; অন্তত ১২০ ডিগ্রি স্পেস তো দেখা যাচ্ছিলই। দিনের আলোয় যেমন দেখেছি আর রাতের আঁধারে যেমন দেখছি, তার তুলনা করতে করতে অপলক চেয়ে রইলাম এই মনকাড়া বিস্ময়কর সৌন্দর্যের দিকে।