সোনাদিয়া দ্বীপের স্মরণীয় ক্যাম্পিং – ১

সোনাদিয়া দ্বীপের স্মরণীয় ক্যাম্পিং - ১

রাতের স্লিপার কোচে কক্সবাজার নেমে নাজিরারটেক বাজারে গিয়ে সকালের নাস্তা সারলাম। সোনাদিয়া যাবার প্ল্যান অনেকদিনের; ব্যাটে বলে মিলছিল না। এবার পূর্ণিমা দেখে পথে নেমে পড়লাম একটা ট্যুর গ্রুপের সাথে। বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে ইঞ্জিনচালিত বোট প্রায় ৫০ জন যাত্রী নিয়ে তিরতির করে এগিয়ে চলেছে মহেশখালির কোল ঘেঁষে মায়াময় লাল কাঁকড়ার সাম্রাজ্য সোনাদিয়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে। 

যেতে কিছুটা দেরি হওয়ায় ভাটা পেলাম, আমি জানি এখন কি করতে হবে; এই কাহিনী একবার আমার সাথে ঘটেছিল সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ ফেরার সময়। অতএব, কোন কথা না বলে স্যান্ডেল পায়ে নিয়ে কাদা মাড়িয়ে হাঁটা দিলাম। অতঃপর তীরে উঠে কিলোখানেক পথ পায়ে হেঁটে ক্যাম্পসাইটে পৌঁছলাম; ঝাউগাছের নীচে সারি করে সাজানো তাঁবু দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল।

সাগর তীরে যাব আমি আর সেথায় গোসল করব না, তা হবার নয়; প্রয়োজনীয় উপাদান নিয়ে রওনা হলাম সোনাদিয়া বীচে গোসল করার উদ্দেশ্যে। এই অঞ্চলের পানি এত লবণাক্ত যে মুখে দেয়া যায় না। নানান কসরত করে গায়ে তো সাবান মাখাই গেল না। যাই হোক, কোনরকমে গোসল সেরে এসে জোহরের নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খেলাম আর অপেক্ষা করতে লাগলাম সূর্যাস্ত দেখবার আশায়।

সোনাদিয়ার সূর্যাস্ত বড় সুন্দর; বাধাহীন বিস্তীর্ণ সৈকত রয়েছে এখানে। দুপুরের খাবারের পর হ্যামকেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, বিকেলে উঠে ধীরে ধীরে বীচের দিকে গেলাম, এমন মনোহরি সূর্যাস্ত দেখার জন্য বালুতেই বসে পড়লাম।

এরপর বাজার দেখতে বের হলাম, বাজার তেমন কিছু নয়, কয়েকটা দোকান আছে; সব জিনিসেরই দাম বেশী, হবারই কথা। তবে, এখানকার ছোট বাচ্চারা যখন জিনিসপত্র নিয়ে আসে, তখন সেটির দাম আরো বেড়ে যায়। এক লিটার পানি দোকানে ৩০ টাকা, কিন্তু বাচ্চাদের কাছ থেকে নিলে ৪০ টাকা।

ফেরার সময় দেখলাম, অন্য ক্যাম্পসাইটের তাঁবুগুলো বীচের কাছে এনে রাখছে, আরো কাছে এসে দেখলাম, আমাদেরগুলোও বীচে নিয়ে আসছে; দেখে মনটা আরো ভালো হয়ে গেল। বার-বি-কিউ হতে আরো দেরি, আমি তাঁবুর ভিতরে নিজেকে চালান করে দিলাম; আকাশ পানে তাকিয়ে দেখি জ্বলজ্বলে চাঁদ, তার আলোয় পুরো এলাকা আলোকিত! 

কেউ একজন সাইন্ডবক্সে গান ছেড়েছে লো ভলিউমে, তা ছাপিয়েও আমার কানে ডান পাশ থেকে ভেসে আসছে ঢেউয়ের গর্জন, উপরে ঝলমলে চাঁদ, বামে ঝাউবন; এমন করে প্রকৃতি এর আগে কখনো আমার কাছে ধরা দিয়েছিল কি? সম্ভবতঃ না।

ঘুমিয়েই পড়েছিলাম, খাবারের জন্য ডাকাডাকিতে ঘুম ভাংগল। খাবার খেয়ে এবার পূর্ণ প্রস্ততিতে ঘুমাতে গেলাম, নামাজ আগেই পড়ে নিয়েছিলাম, তাঁবুতে সংগী স্কুলফ্রেন্ড বাশার; ফজরের নামাজ পড়ার নিয়ত করে, নিজেকে প্রকৃতির কোলে সঁপে দিলাম।

1 thought on “সোনাদিয়া দ্বীপের স্মরণীয় ক্যাম্পিং – ১”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top