বড়হিল ফলস / পান্থমাই ঝর্ণা – মেঘের আলয়ে নিমন্ত্রণ – ২

বড়হিল ফলস / পান্থমাই ঝর্ণা - মেঘের আলয়ে নিমন্ত্রণ - ২

উমক্রেম ফলসের কাছেই এক বৃদ্ধা মহিলা নানান ধরনের খাবার বিক্রি করেন; তার এখানে ছোট সাইজের পেয়াজুটা অবশ্যই ট্রাই করবেন তবে কাঁচা ছোলাটা এভয়েড করা বেটার, এতএ এত লেবু দেয় যে, টকের জন্য খাওয়া যায় না। গোটা মেঘালয়জুড়েই এসব খাবারের পাশাপাশি নানান ধরনের সফট ড্রিংকস, জুস, পানি, বিস্কুট, কেক ইত্যাদি পাওয়া যায়। অবশ্যই গায়ের দামের চাইতে বেশী দিয়ে কিনতে হবে। ১০ রুপিরটা ১৫ দিয়ে, ২০ রুপিরটা ৩০ দিয়ে; সেখানে এটাকেই তারা সিস্টেম বানিয়ে নিয়েছে।

উমক্রেম ফলসের বিস্ময় কাটিয়ে ১৫ মিনিট যাবার পর আরেক বিস্ময় হয়ে ধরা দিল ‘বড়হিল ফলস’ যেটাকে আমরা বাংলাদেশ প্রান্তে বলি ‘পান্থমাই ঝর্ণা’! এটি বিছানাকান্দির কাছাকাছি এবং দূর থেকে দেখতে হয়; কিন্তু এর রূপ যে কি দানবীয়, তা এতটা কাছ থেকে না দেখলে বোঝার উপায় ছিল না।

বড়হিল ফলসের গর্জনকে পিছনে ফেলে আমরা চলে গেলাম এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম খ্যাত ‘মাওলিনং ভিলেজে’; পরিকল্পিতভাবে বানানো হয়েছে এই গ্রামটি এবং এটি সত্যিই পরিচ্ছন্ন। এখানে অসংখ্য হোম-স্টে আছে; বাংলাদেশের ৪০ জনের একটি দলকে দেখলাম এখানেই রাতে থাকার প্ল্যান করে এসেছে।

মাওলিনং ভিলেজ ঘুরে দেখতে বেরোবার আগেই আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিয়েছিলাম। ভিলেজে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট আছে, প্যাকেজ হিসেবে খাবার; রুই মাছ, চিকেন, ডিম, নানান ধরনের প্যাকেজ। গোটা মেঘালয়ে এমন প্যাকেজ সিস্টেমে খাবার সার্ভ হয় এবং এটাকে তারা বলে থালি যেটাকে আমরা আমাদের দেশে ইংরেজিতে বলি ‘প্ল্যাটার’। একটি থালিতে ভাত, মাছ, ডাল, সবজি, চাটনি ও সালাদ, রেট ১০০ থেকে ২০০ রুপি।

মাওলিনং ভিলেজটি হাফ আর্টিফিসিয়াল, হাফ ন্যাচারাল; কারণ, এটি সাজানো হয়েছে পরিকল্পিতভাবে আবার এখানে রয়েছে মানুষের বসবাস; এমন নয় যে, এটিকে কেবল শোকেসে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সর্বক্ষণ সুনসান নীরবতা বজায় থাকে এখানে, বাচ্চারাও দেখলাম কথা বলে আস্তে। এখানে বাঁশের একাধিক স্কাই ভিউ পয়েন্ট আছে; উঠে দেখতে ৩০-৪০ রুপি লাগে। একটি বাঁশের সাঁকো আছে আর আছে নানান ধরনের দৃষ্টিনন্দন গাছা-গাছালি। একটি গাছে এমনভাবে জাম্বুরা ধরে আছে যে, এটি পেড়ে খাওয়ার লোভ সামলানো কঠিন হয়েছে।

গোটা ট্যুরে মেঘের খেলা এখানেই প্রথম দেখেছি; গোটা মেঘালয়ে এই এক অদ্ভুত বিষয়, হটাত দেখা যাবে একটা জায়গা একেবারে ফকফকা কিন্তু কিছুক্ষণ পরই দেখা যাবে তা পুরোপুরি মেঘে ঢেকে গেছে! এ ঘটনা একবার নয়, বারবার ঘটেছে এবং অনেকবারই আমরা নিজেরাই মেঘের মধ্যে ঢাকা পড়ে গেছি; সহসা মনে হয়, আমরা বোধকরি মেঘের আলয়ে আমন্ত্রণে গিয়েছি আর মেঘ আমাদেরকে আপন মহিমায় জড়িয়ে ধরেছে!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top