ড্রাইভারের হেঁয়ালির কারনে শেষ পর্যন্ত ডাউকি বাজার ছেড়ে বেরোতে বেরোতে দুপুর সাড়ে বারোটা বেজেই গেল; কিছুটা বিরক্তি ও শংকা ছিল, সব দেখে শেষ করতে পারব কিনা!
কিন্তু ১৫ মিনিট এগিয়ে যখন উমক্রেম ফলস (Umkrem Falls) নজরে এলো তখন মন থেকে সকল দুশ্চিন্তা মূহুর্তে উধাও হয়ে গেল; এই অনিন্দ্যসুন্দর ঝর্ণার কোন বর্ণনা হয় না, এটি আকারে বৃহৎ, পতনের ছন্দে অপূর্ব, গর্জনে মায়াবতী, দৃষ্টিতে নয়ন জুড়ানো।
উমক্রেম ফলস (Umkrem Falls)
বৃহস্পতিবার রাতের গাড়িতে সিলেটের উদ্দেশ্য রওনা করেছিলাম; নানান কারনে পেছাতে পেছাতে এই ট্যুর সেপ্টেম্বরে এসে ঠেকেছে। ভোর ৫ঃ১০ এ সিলেট নেমে জামাতের সাথে ফজর আদায় করলাম। হোটেল পানশিতে নাস্তা খেয়ে লেগুনাতে করে জাফলং সংলগ্ন ডাউকি স্থলবন্দরের দিকে এগোলাম।
এবার সিলেটের হাওড়গুলোতে পানি কম, আগের মত বিশালাকার হাওড়ের পানির মত টলটল এবার আর করছে না। সারারাত অঝর ধারায় বৃষ্টি হয়েছে, তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল, ভোরের দিকে বৃষ্টির বেগ কমে তা গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে রুপ নিয়েছিল।
৯ঃ০০ টায় আমরা বর্ডারের প্রসেসিং শুরু করলাম; এখানে বাংলাদেশ প্রান্তে তিনটি চেকপয়েন্ট আছে আর ভারতীয় প্রান্তে দুটি, উভয় জায়গাতেই স্পিডমানি লাগে বেশ; এটাকে এরা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, সে আলাপ আরেকদিন।
টোটাল কাজ শেষ হয়ে গেছে ১০ঃ৩০ টায় কিন্তু ড্রাইভার সাহেব তখনো আসেননি; আমরা টিমে আটজন, অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। এই বর্ডার দিয়ে কি পরিমাণ ট্রাক বাংলাদেশে ঢোকে তা গুনেও শেষ করা যাবে না; বিশাল লম্বা লাইন তাই ভারতীয় প্রান্তে লেগেই থাকে।
এগারোটার দিকে আমরা তিনজন দলছুট হয়ে হাঁটা শুরু করলাম; ২০ মিনিট হেঁটে ডাউকি বাজার পৌঁছে গেলাম। সেখানে গিয়ে লাল আটার রুটি আর সবজি খেয়ে বাংলা টাকা ভাংগিয়ে নিলাম; একশ’তে ৭২.৫ টাকা করে পাওয়া গেছে। ডাউকি বাজার মোটেই উন্নত কিছু নয়, একেবারে পুরোনো ধাঁচের বাড়ি-ঘর। ১১ঃ৪৫ এ যখন রুটি খাচ্ছিলাম, তখনই অত্যন্ত সুমধুর কন্ঠের আজান কানে ভেসে আসছিল; এটি জুম্মার আহবান জানাচ্ছিল।
খাওয়া শেষ করে জিগ্যেস করতেই জানলাম, পাশের বিল্ডিংটিই মসজিদ! দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি মসজিদের গেট; যাই হোক, এখানেই জোহরের কসর নামাজ আদায় করে নিলাম।
ড্রাইভারকে ধামকি দিব বলে মনে মনে ঠিক করেই রেখেছিলাম, কিন্তু ডাউকি বাজারে তাকে প্রথম দেখায় ভয় পেয়ে গেছি; মাথা টাক, দুই কানে দুই রিং, আকারে আমাদের বাংলা সিনেমার জাম্বুর ছোটভাই! আর যাই হোক, এই লোককে ঘাঁটানো চলে না!
ডাউকি বাজার ছেড়ে সামনে এগোচ্ছি, বামে রয়েছে আমাদের জাফলং। শুক্রবার বলে পর্যটকের আনাগোনাও বেশ দেখা যাচ্ছে সেখানে। খানিকবাদেই সামনে এলো সেই বিখ্যাত ঝুলন্ত ব্রীজ যেটি আমাদের জাফলং থেকে দেখা যায়। পিয়াইন নদীতে পানি নেই তেমন, বৃষ্টিপাত এবার সব জায়গাতেই কম হয়েছে; তবে গত চার-পাঁচদিনের বৃষ্টিতে যে বেশ পানি পাব ঝর্ণায় তা বেশ বোঝা যাচ্ছিল।
ছোটখাটো সাইজের ঝর্ণা মেঘালয়ে একটা দুধভাত টাইপের ব্যাপার। অজস্র অগণিত ঝর্ণা পাহাড়ের গা বেয়ে বিনা নোটিশে এদিক দিয়ে ওদিকে দিয়ে নেমে এসেছে, গন্তব্য এদের অজানা। মেঘালয়ের অনেকদূর পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রান্ত দেখা যায়, পিয়াইন নদীর ওপারে বাংলাদেশ দেখতে বেশ লাগে। উমক্রেম ফলসের মোহনীয়তা কাটিয়ে ধীরে ধীরে গাড়িতে উঠে বসলাম, বামে পিয়াইন নদীর চর দেখতে দেখতে সামনে এগোলাম।
Your point of view caught my eye and was very interesting. Thanks. I have a question for you.
I don’t think the title of your article matches the content lol. Just kidding, mainly because I had some doubts after reading the article.