![সান্দাকফু’র সূর্যোদয় - ৫ (শেষ পর্ব) 1 সান্দাকফু’র সূর্যোদয় - ৫ (শেষ পর্ব)](https://shaheenstravelstory.com/wp-content/uploads/2023/09/সানরাইজ-হোটেল-1024x576.jpg)
যাবার দিন পিছনে বসেছিলাম বলে টের পাইনি কি ডেঞ্জারাস এই রোড; আজ নামার কালে দেখে আত্মা হিম হয়ে এলো! বিশেষ করে শেষ কয়েক কিলোমিটার উঠতে ড্রাইভারের যেমন মুন্সীয়ানা লাগে, যাত্রীদেরও তেমনই কলিজা লাগে।
এই সান্দাকফু থেকে কত জায়গায় যে পাসপোর্ট কপি আর ভিসার কপি জমা দিতে হয়, তার ইয়ত্তা নেই। আপনারা যদি এদিকে আসেন, তবে অবশ্যই ১০ কপি করে এ দুটি কাগজ নিয়ে আসবেন আর অবশ্যই অন্ততঃ ৬ টি টিকার সনদ। এই তিন কাগজ ছাড়া আর কোন কাগজ লাগেনি আমাদের।
এই চেকপোস্টেরই একটির কাছে আছে ম্যাগনোলিয়া নামক রেস্টুরেন্ট; এখানকার খাবারগুলো খুব সুস্বাদু। যাবার সময় ভেজিটেবল মমো খেয়েছিলাম, ফেরার পথে চা। অতঃপর ফের নামতে শুরু করলাম।
দুপুর ১ঃ০০ টা নাগাদ মানেভঞ্জন পৌঁছানো গেল, সেখান থেকেই সাথে সাথে শিলিগুড়ির গাড়ি ধরলাম। ভেবেছিলাম, আজ রাতটা মানেভঞ্জন থাকব, কিন্তু সময় যেহেতু পাওয়া গেল, একটু এগিয়ে থাকি।
বিকেল সাড়ে চারটায় শিলিগুড়ি’র হোটল স্কয়ারে ইন করলাম; এদের ছোটলোকি’র শেষ নাই। এডভান্স টাকা দিতে হলো, দুইজনের বেশী থাকব না বলে প্রমিজ করতে হলো, গিজারের সুইচ টা নিজেদের কাছে রাখে, ফোন করলে কেবল ছাড়ে, পরে আবার বন্ধ করে দেয়। টাকা জমা দেয়ার রিসিট চাইলাম, দিল না।
আমি শিলিগুড়িতে একবারই গিয়েছিলাম ২০০১ সালে; হোটে খানা খাজানাতে লাঞ্চ করেছিলাম, এটুকু মনে আছে। কিন্তু এই ২০২৩ সালে এসে এর রুগ্ন অবস্থা দেখে হতাশ হলাম। এমন একটা ট্রানজিট শহর, আমাদের দেশের প্রান্তীয় একটা উপজেলার মত শ্রীহীন হয়ে থাকবে, এটা অপ্রত্যাশিত।
বিকেলে আমি আর আহসান ভাই হংকং মার্কেটে গেলাম, তেমন কিছুই পাওয়া গেল না। এরপর গেলাম শিলিগুড়ি সিটি সেন্টারে; এটার অবস্থা আমাদের দেশের যমুনা ফিউচার পার্কের মত। দেখতে সুন্দর কিন্তু কাস্টমার নেই। এমন জাঁকজমকপূর্ণ মার্কেট এখানে চলবে না, এখানকার লোকদের সেভাবে তৈরি করা হয়নি।
তবে, আর যাই হোক, গেল ভ্যালেন্টাইন উপলক্ষে একটি লাভ সাইন তারা বসিয়েছে ঠিকঠাকমতো; নারী পুরুষরা দেদারসে ছবি তুলছে এর সামনে। খানিক এগোতেই বাচ্চাদের চড়ার একটা ট্রেন পাওয়া গেল; এটা গ্রাউন্ড ফ্লোর জুড়ে চক্কর দেয়। সেখানেও বাচ্চা কম; এর ড্রাইভার সবসময় একটা দুঃখী দুঃখী চেহারা করে রাখে!
ডিনার সারলাম পরিমল হোটেলে; ছোট মাছ দিয়ে। গোস্ত খেতে পারছি না, আশেপাশে কোন মুসলিম হোটেল নেই, গোস্ত খেতে হবে একেবারে বাসায় গিয়ে। পরদিন রাস্তার কোনায় দাঁড়িয়ে অন্যদের সাথে পুরি, সবজি আর ডিম কারি খেলাম; এ এক বিরল অভিজ্ঞতা। মাটির ছোট কাপে চা’ও খেয়েছি।
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার থেকে যখন ভলভো বাসটি ছেড়ে দিল, ততোক্ষণে দুপুর ১ঃ৪৫। বর্ডারে এসে বর্ডার ফর্মালিটিজ শেষ করে, যা রুপি ছিল তা ভাংগিয়ে গিয়ে আবার সেই জিরো পয়েন্ট মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়লাম। এরপর শ্যামলীর হুন্দাইতে করে ভোর সাড়ে ছয়টায় ঢাকা। ৫ রাত চারদিনের এই ট্যুরটি নানান কারনেই স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে; এর একটি হলো, এই প্রথম স্বচক্ষে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেহে সজোরে চিৎকার দিয়ে উঠেছিলাম!