সৌদি আরবে কেনাকাটা – (হজ্জের দিনগুলি-৫)

সৌদি আরবে কেনাকাটা - (হজ্জের দিনগুলি-৫)

শুনতে ভালো না লাগলেও এটাই সত্যি যে সৌদি আরবে বাংলাদেশীদের কোন দাম নেই! দুঃখ সেটা নয়, দুঃখ হলো এই দামটা মক্কার দোকানদারদের কাছেও পাওয়া যায় না! মক্কার অধিকাংশ দোকান বাংলাদেশীদের দখলে, সেই দোকানগুলোর আবার ৮০% চট্রগ্রামবাসীদের দখলে। এই দোকানগুলোর মালিক কর্মচারীরা এতই প্রফেশনাল যে বাংলাদেশী দেখলে তাদের মুখে স্বাভাবিক হাসিটুকুও আসেনা। এক দোকানদার আমার কাছে স্বীকারই করেছে, বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের কাস্টমাররা দোকানে আসুক এটা তারা চায় না। কারণ, এই তিন দেশের কাস্টমারেরা ঘাটাঘাটি করে বেশী, কেনে কম। তার চেয়ে অন্য দেশের কাস্টমারেরা ঘাটাঘাটি, দামাদামি করে কম, কেনে বেশী। বিষয়টা কিছুটা সত্যি, যেহেতু একটা প্রচলিত বিষয় আছে যে, মদিনায় জিনিসপত্রের দাম মক্কার চেয়ে কম, সেহেতু বাংলাদেশীরা মক্কা থেকে বেশীরভাগ টাকা বাঁচিয়ে নিয়ে মদিনায় গিয়ে কেনাকাটা করে, ফলে মদিনার দোকানদারদের কাছে তারা খুব প্রিয় বা দেশী ভাই! তাই বলে মক্কায় দেশী লোকদের সাথে এমনসব আচরণ মাঝেমাঝে করে ফেলে, এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

সৌদি আরবে অধিকাংশ জিনিসপত্রের দাম বেশী; যে কোন ওষুধের দাম বাংলাদেশের তুলনায় চার/পাঁচ গুন বেশী। আমি প্যারাসিটামল + ক্যাফেইন ট্যাবলেট (প্যানাডল প্লাস) কিনেছি প্রায় ৯ টাকা করে। আমাদের দেশে অ্যাজমার যে ওষুধ মন্টিলুকাস্ট ১০ মি. পাওয়া যায় ১৫ টাকা করে, সৌদির তাবুক কোম্পানির সে ওষুধ সেখানে বিক্রি হয় ৮৫ টাকা করে। সর্দিতে ব্যবহৃত ফেক্সোফেনাডিন বিক্রি হয় ২৪ টাকা করে (আমাদের দেশে ৬-৭ টাকা।) আপনাদের যার যে ওষুধ লাগে, সেগুলো বেশী করে কিনে নিবেন; বিশেষ করে জ্বর, ব্যথা, হাইপারএসিডিটি, কাশি, সর্দি এসবের ওষুধ বেশী করে নিতে হবে। আর অবশ্যই একটি ক্লোফেনাক জেল (ব্যথানাশক) ও নেবানল পাউডার নিবেন (এন্টিসেপটিক পাউডার; কোথাও ক্ষত হয়ে গেলে শুকাতে সাহায্য করে)

মোবাইলের কল রেট অত্যন্ত বেশী; মিনিট ১২ টাকার মত পড়ে! সেজন্য সেখানে গিয়ে যেই সিমই কিনেন, লোকাল এবং ইন্টারন্যাশনাল কল এক মাসের জন্য ১০০ মিনিট বা ২০০ মিনিট ফ্রি যেই সিমে থাকবে সেটা কিনবেন, দাম একটু বেশী হলেও। ৬৫ থেকে ১০০ রিয়াল দিয়ে সিম কিনলে দেখা যাবে ইন্টারনেট প্যাকসহ মাস চলে যাচ্ছে, কিন্তু ৩০ রিয়াল দিয়ে সিম কিনলে দেখা যাবে টাকা রিচার্জ করতে করতে ১৫০ রিয়াল খরচ হয়ে গেছে (উল্লেখ্য, ১ রিয়াল সমান ২৩ টাকা।)

কলা বিক্রি হয় সেখানে কেজি দরে, জাবালে নূর পর্বতের নীচে যে কলা ৫ রিয়াল, সেই কলা কাবা’র আশেপাশে ৮ রিয়াল। মোট কথা কলা একটা ১ রিয়াল, পরোটা ১ রিয়াল, আপেল ১০ রিয়াল, খেজুরের দাম বেশ ভালই। বাঙ্গালী এলাকা খ্যাত মিসফালায় বাংলাদেশী হোটেল আছে, সেখানে অনেক ধরনের মাছ, গোস্ত পাওয়া যায়। সারা মক্কায় অজস্র দোকান আছে যেগুলো ২ রিয়াল, ৩ রিয়াল বা ১০ রিয়াল দোকান নামে পরিচিত অর্থাৎ, এসব দোকান থেকে যাই কিনেন না কেন, এগুলোর দাম যথাক্রমে ২ রিয়াল, ৩ রিয়াল বা ১০ রিয়াল করে; এসব দোকানে ভিড় লক্ষ্যনীয়।

কাপড় ইস্ত্রি করতে লাগে ৩ রিয়াল অর্থাৎ বাংলাদেশী ৭০ টাকার মত! সেজন্য যাদের ইস্ত্রি ছাড়া কাপড় পরার ব্যাপারে খুতখুতি আছে, তারা একটা ইস্ত্রি নিয়ে গেলে ভালো হয়; আর নয়ত প্রতি কাপড় প্রতিবার ৩ রিয়াল! আমাদের দেশের প্রাণ ফ্রুটোর ছোট বোতলটা পাওয়া যায় ১ রিয়ালে, স্বাদও ভালো; একমাত্র এটাই সবচেয়ে কমদামে পাওয়া যায়। একটা কাঁচা ডিম ১ রিয়াল।

হজ্জ সংক্রান্ত যেসব বই বাজারে পাওয়া যায় সেগুলোতে যেসব জিনিস নিয়ে যেতে বলা হয় তা অবশ্যই নিয়ে যাবেন। সাথে আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি অতিরিক্ত কয়েকটা জিনিস নিয়ে যেতে –

  • ট্রলি ব্যাকপ্যাক (হজ্জের দিনগুলিতে হাঁটার সময় ট্রলি টেনে নিয়ে যেতে সুবিধা)
  • ইস্ত্রি
  • ভ্যাসলিন
  • ক্লোফেনাক জেল ও নেবানল পাউডার (আগেও বলেছি)
  • পাওয়ার ব্যাংক
  • পর্যাপ্ত কাপড়চোপড় (অনেক বইতে দুই সেট করে কাপড় নেয়ার কথা লিখা থাকে; এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়, ফকিরের মত থাকতে হবে।)
  • সাবানের কেস (সম্ভব হলে একটি লিকুইড সাবানের টিউব) ৮। দস্তরখান ইত্যাদি।

(২০১৮ সালের লেখা; একেবারেই ব্যক্তিগত অনুভূতি, কাউকে আঘাত উদ্দেশ্য নয়। এবার বা ভবিষ্যতে যারা হজ্জ করবেন, তাদের উপকারে আসতে পারে ভেবে পুনঃপ্রকাশ। আল্লাহ আমাকে সকল প্রকার রিয়া থেকে মুক্ত রাখুন; আমীন।)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top