চামলিজা মসজিদ – (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-২৯)

চামলিজা মসজিদ - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-২৯)
চামলিজা মসজিদ - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-২৯)
চামলিজা মসজিদ - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-২৯)
চামলিজা মসজিদ - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-২৯)
চামলিজা মসজিদ - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-২৯)
চামলিজা মসজিদ - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-২৯)
চামলিজা মসজিদ - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-২৯)
চামলিজা মসজিদ - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-২৯)

রুস্তম পাশা মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে বেরিয়ে এসে খোলা চত্তরে দাঁড়ালাম। ইস্তাম্বুলের বিখ্যাত আলোর খেলা শুরু হয়ে গেছে। দুটি মসজিদ থেকে ঠিকরে আলো বেরিয়ে আসছে; একটি রুস্তম পাশা মসজিদ, অপরটি সুলেমানিয়া মসজিদ।

এ-ই যখন দেখছি, তখনই মেহেদীর কল এলো, সে কাছাকাছিই আছে। অতঃপর মেহেদীর সাথে দেখা হলে আমরা দুজন মিলে জাহাজ ঘাট খুঁজতে লাগলাম। মেট্রোর যে কার্ড, সেই একই কার্ড দিয়ে মেট্রো, ট্রাম, বাস, জাহাজ সব চড়া যায়। সেই কার্ড দিয়েই এন্ট্রি নিয়ে গিয়ে জাহাজে উঠলাম উস্কুদারের উদ্দেশ্যে।

জাহাজে লোকসংখ্যা কম; ৫ মিনিটের মধ্যেই জাহাজ ছেড়ে দিল, ২০ মিনিটের রাইড, তরতর করে জাহাজ এগিয়ে চলেছে বসফরাস প্রণালী ধরে। জাহাজ থেকেই দেখা যাচ্ছে বিখ্যাত গোল্ডেন হর্ন ব্রীজ আর বসফরাস ব্রীজ। এই বসফরাস ব্রীজেই জনগণ কয়েকবছর আগে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে হওয়া সেনা ক্যু ঠেকিয়ে দিয়েছিল; তখন থেকে এই ব্রীজের গুরুত্ব আরো বেড়ে গেছে।

গোল্ডেন হর্ণ ব্রীজটি রাতের বেলা সাজানো হয় গোল্ডেন কালারের আলো দিয়ে আর বসফরাস ব্রীজটি উজ্জ্বল থাকে নীল-গোলাপি আলোয়। এগুলোর দিয়ে অপলক নেত্রে তাকিয়ে থাকা যায়। ২০ মিনিটের এই জার্নিতে চতুর্দিকে কেবল দেখতেই লাগলাম রাতের ইস্তাম্বুলের সৌন্দর্য। বুঝে ওঠার আগেই একসময় উস্কুদার পৌঁছে গেলাম।

উস্কুদার নেমে এবারে বাসে ওঠার পালা; বাসে করে আমরা যাব চামলিজা, যেখানে রয়েছে তুরষ্কের সবচেয়ে বড় মসজিদ, ‘চামলিজা মসজিদ’ তথা এরদোয়ান মসজিদ। এই মসজিদে ৬৩ হাজার লোক একসাথে নামাজ পড়তে পারে।

ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের নিয়ম ফলো করা হয়; এখানে আউয়াল ওয়াক্তে তথা আযানের সাথে সাথেই নামাজ হয়ে যায়, কেবল সুন্নাত থাকলে সেটি পড়ার সুযোগ দেয়া হয়। ফলে বাস জার্নি করে যেতে যেতে এশা’র জামাত আর পেলাম না।

চামলিজা নেমে অবাক নেত্রে তাকিয়ে রইলাম চামলিজা মসজিদের দিকে; কত সুন্দর হতে পারে একটি মসজিদ! ধীরে ধীরে এগোলাম; এলাহি কান্ড কারখান! এখানে একটি আর্ট গ্যালারি আছে, একটি মিউজিয়াম আছে, অতি সুন্দর একটি লাইব্রেরি আছে যেখানে সবসময় পিন ড্রপ সাইলেন্স থাকে, আছে একটি ভূ-গর্ভস্থ পার্কিং যেখানে ৩,৫০০ গাড়ি একসাথে রাখা যায়।

অনেকক্ষন ধরে মসজিদ প্রাংগণ ঘুরে, তার ভিতরটা দেখে বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে যখন বেরিয়ে আসছিলাম, দেখি আকাশে পূর্ণ চাঁদ ফিক করে হেসে উঠেছে। সহসা মনে পড়ল, আজ তো পূর্ণিমা! বাহ, চামলিজা মসজিদের এত উপর থেকে আকাশে পূর্ণচন্দ্রের আলো, নীচের দিকে বসফরাস প্রণালীতে চলমান জাহাজসমূহ আর আলো ঝলমলে ইস্তাম্বুল শহর; সব মিলে এক মোহময় পরিবেশ তৈরি করেছে।

ফিরে আসতে মন চাইছিল না; তবু একসময় চামলিজাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলাম। বাসে করে উস্কুদার এসে দেখি জাহাজ বন্ধ হয়ে গেছে। কোন অসুবিধা নেই, সাগরের নীচ দিয়ে মেট্রো চলাচল করে, সেই মেট্রোতে আমরা হালিজ চলে এলাম। ছোটভাই মেহেদীকে সাথে নিয়ে এক রেস্টুরেন্টে চিকেন বিরিয়ানি খেলাম।

এবার মেহেদীর কাছ থেকে বিদায় নেবার পালা; যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখিয়েছে সে, এই মসজিদ দেখা হতো না মেহেদী না থাকলে। যাবার আগে এটার সন্ধানই পাইনি। কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হোটেল পানে রওনা দিলাম। আজ ইস্তাম্বুলে আমার শেষ রাত; ফিরে গিয়ে ব্যাগ গুছাতে হবে।

2 thoughts on “চামলিজা মসজিদ – (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-২৯)”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top