এক ঘন্টার কষ্টকর সিরিয়াল মেইনটেইন করে মুসলিমদের জন্য বিশেষভাবে স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী সংগ্রহশালার গ্যালারিতে সাড়ে পাঁচটার দিকে ঢুকতে পারলাম; আল্লাহু আকবার, এ যে দেখছি এলাহি কান্ড কারখানা!
এখানে রয়েছে, আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ব্যবহৃত পানির পাত্র, তরবারি ও অন্যান্য জিনিস, রয়েছে তাঁর পায়ের ছাপ! আমার মনে আছে, আমাদের ছোটবেলায় এটি বাংলাদেশে আনা হয়েছিল, সম্ভবতঃ বায়তুশ শরফের তত্তাবধানে এটি করা হয়েছিল; আমরা বিপুল উৎসাহ নিয়ে তা দেখতে গিয়েছিলাম।
এখানে আরো রয়েছে, মুসা (আঃ) এর বিখ্যাত লাঠি, রয়েছে হযরত আবুবকর (রাঃ), হযরত ওমর (রাঃ), হযরত আলী ও ওসমান (রাঃ), খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)সহ অনেক সাহাবীর ব্যবহৃত তরবারি। এখানে আরো রয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দাঁড়ি মোবারক।
এখানকার সিস্টেম হলো, দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। ধীরে ধীরে চলতে হয়, পিছনের জনকে দেখার জায়গা করে দিতে হয়। আমি এক পাক দেখা শেষ করে আবার সিকিউরিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রথম থেকে দেখা শুরু করেছি, কেবলই মনে হচ্ছিল আমি প্রথমবার ভালো করে দেখতে পারিনি।
এখানে কন্টিনিউয়াসলি একজন ক্বারী কোরআন তিলাওয়াত করতে থাকেন, বড় সুমধুর সে সুর। তা শুনতে শুনতে দ্বিতীয়বার ভালো করে পুরো গ্যালারিট দেখে, মনে এক পরিপূর্ণ তৃপিত নিয়ে এক্সিট গেট দিয়ে বের হলাম! ততক্ষণে সময় বিকেল ৫ঃ৪৫।
ছয়টার সময় এটি এমনিই বন্ধ হয়ে যাবার কথা, হাতে সময়ও নেই, মোবাইল এরোপ্লেন মোডে রেখেছিলাম চার্জ বাঁচানোর জন্য। এবার ইন্টারনেট ডাটা অন করতেই দেখি অসংখ্য কল, হোয়াটসএপ ম্যাসেজ এসে বসে আছে। ড্রাইভার এবং ট্রেনিং সেন্টারের লোকজন টেনশন করছিল আমাকে ফোনে না পেয়ে।
ড্রাইভারকে ম্যাসেজ দিলাম, আমি আসছি ৫ মিনিটের ভিতর। সকালের নাস্তার পর সারাদিন কিছু খাইনি, বিভিন্ন স্থাপনা দেখাতে এত মগ্ন ছিলাম, খাওয়ার কথা মনেও হয়নি; ভুঁড়িতে চর্বি যথেষ্ট সেটাও একটা কারণ।
মাগরিবের আযান হয়ে গেছে, ঘড়ির কাঁটা ধীরে ধীরে ছয়টার দিকে যাচ্ছে। অর্থাৎ, আমি মোটামুটি সোয়া তিন ঘন্টায় দৌড় ঝাঁপ করে টপকাপি প্যালেস দেখা কমপ্লিট করেছি। হাতে ৫ ঘন্টা সময় থাকলে ভালো; ধীরে সুস্থে দেখা যায়।
যখন মূল ফটক থেকে বেরিয়ে এসেছি, তখন সেদিকে তাকিয়ে দেখি, রাতের আলোয় টপকাপি প্যালেস তার আপন মহিমায় দ্যুতি ছড়াচ্ছে। সেদিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। ড্রাইভারকে ৫ মিনিট টাইম দিয়েছিলাম, ৫ মিনিট এর মধ্যেই পেরিয়ে গেছে। পিছন ঘুরে হাঁটা দিলাম, কিছুদূর গিয়ে আবারো পিছন ফিরে শক্তিশালী অটোমান সম্রাটদের স্বাগত জানানো গেটের পানে চেয়ে রইলাম।