টপকাপি মিউজিয়াম – (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-১৩)

টপকাপি মিউজিয়াম - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-১৩)
টপকাপি মিউজিয়াম - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-১৩)
টপকাপি মিউজিয়াম - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-১৩)
টপকাপি মিউজিয়াম - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-১৩)

আয়া সোফিয়া থেকে যখন বেরিয়েছি তখন ঘড়িতে দুইটা বাজে; সন্ধ্যে হবে ৫ঃ৪৫ এ, সেই হিসেবে হাতে সময় কম। এখানকার অধিকাংশ ট্যুরিস্ট স্পট ৬ঃ০০ টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। অতএব, খাবারের পিছনে সময় ব্যয় না করে যত পারা যায় দেখে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

আয়া সোফিয়া থেকে বেরিয়ে দেখি লোকেরা সব হাতের বাঁয়ে যাচ্ছে; এক চাইনিজ মহিলাকে দেখলাম সেদিকেই যাচ্ছে, জিগ্যেস করলাম, ওটা কি? বলল, জানি না। আরেকজনকে জিগ্যেস করে জানতে পারলাম, এটাই টপকাপি প্যালেস; দ্রুত সামনে এগোলাম, আমি তো এটাকেই খুঁজছিলাম!

একেবারে প্রবেশপথে যারা সিকিউরিটির দায়িত্বে আছে, তাদের একজন এসে আমাকে বলল, প্রাইভেট ট্যুর? প্রাইভেট ট্যুর? আমি কিছু না বুঝে বললাম, ইয়েস! দেখি সে এর পরপরই আরেকজনকে ডাক দিয়ে টার্কিশে বলল, আমি প্রাইভেট ট্যুর চাই!

মূহুর্তেই বুঝে নিলাম, একজন গাইড কেবল আমাকেই টপকাপি প্যালেস বা টপকাপি মিউজিয়াম ঘুরিয়ে দেখাবে! এও বুঝলাম, শীঘ্রই মুরগী হতে যাচ্ছি, একেবারে ছিলে দিবে আমাকে; দ্রুত তাকে স্যরি বলে গেটের দিকে এগিয়ে জনতার স্রোতে মিশে গেলাম। মুরগী হারিয়ে তার চেহারা কেমন হলো, দেখার জন্য আর পিছনে চাইলাম না।

প্রথম ফটক আসলে সিকিউরিটি ফটক; এখানে চেকিং শেষ সামনে এগোলেই চোখে পড়ে একটি চত্তর, সেই চত্তরের এক পাশে টিকেট কাউন্টার। কাউন্টারে বেজায় ভিড়, আজকে সব লোক আয়া সোফিয়া আর টপকাপি দেখতে এসেছে মনে হচ্ছে! যাদের আয়া সোফিয়া দেখা শেষ হচ্ছে, তারাই এসে টপকাপিতে লাইন দিচ্ছে।

কি করব যখন ভাবছিলাম, তখন দেখি, ব্যরিকেডের সীমানার বাইরে একটা কাউন্টার আছে একেবারে খালি, সেখানে কেউ যাচ্ছে না। এই কাউন্টারে এক অতি সুন্দরী অফিসার বসে আছেন; আমি এর আগে মিউজিয়াম কার্ডের কথা শুনেছিলাম, এ সম্বন্ধে তাকে জিগ্যেস করতে গেলাম।

চমৎকার ইংরেজি বলেন তিনি; বললেন, টপকাপিতে প্রবেশ করতে লাগবে ৩২০ লিরা, আর হারেমসহ দেখতে হলে লাগবে ৪২০ লিরা; তবে কেউ যদি ৭০০ লিরা দিয়ে মিউজিয়াম কার্ড কেনে তাহলে এই হারেম ও টপকাপি প্যালেসসহ মোট ১৩ টি মিউজিয়াম দেখতে পারবে যার মধ্যে গালাতা টাওয়ারও আছে। আমি কিছুক্ষণ ভেবে ৭০০ লিরা দিয়ে মিউজিয়াম কার্ড নিয়ে নিলাম।

এখানে টিকেট কিনলে ফ্রি অডিও গাইড পাওয়া যায়, সেখানেও লাইন। আমি সময় বাঁচাবার জন্য দ্রুত প্রবেশ পথের দিকে এগিয়ে গেলাম; বন্ধুরা বলে দিয়েছিল, টপকাপি দেখতে একদিন পুরো লাগে, আমার হাতে আছে সাড়ে তিন ঘন্টা! সামনে এগোতেই দেখি সেই বিখ্যাত ফটক, যার ছবি ইস্তাম্বুলের সমস্ত প্রমোশনাল আইটেমগুলিতে দেখা যায়; বড় সুন্দর এটি দেখতে!

মূল ফটক দিয়ে ঢুকে আরেকটি চত্তর দেখা যায়। তার বামে একটি স্থাপনা, ডানে একটি এবং সোজা একটি স্থাপনা রয়েছে। ডানে বামে না গিয়ে সোজা এগিয়ে গেলাম এবং সিঁড়ি দিয়ে উঠে প্রথমেই দেখা পেলাম অটোমান সাম্রাজ্যের রাজকীয় চেয়ার ও পালং এর। এই রুমের অপর পাশ দিয়ে আরেকটি দরজা আছে; সেটা দিয়ে বেরিয়ে আর বুঝতে পারছি না, কোনদিকে যাব?!

এই প্যালেস বা মিউজিয়াম এত বড় যে কোন পূর্ব ধারণা ছাড়া এর কোথায় কি আছে, খুঁজে খুঁজে দেখা মুশকিল। টার্কিশ যাদের পেয়েছি, তাদের জিগ্যেস করে কিছু জানতে পারিনি ভাষাগত সমস্যার কারনে। যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখান থেকে বামে দেখা যাচ্ছে একটি বিশেষ স্থাপনার সামনে বিরাট লম্বা লাইন, আর কোথাও কোন লাইন নেই। একজনকে জিগ্যেস করলাম, এখানে এত বড় লাইন কেন? সে বলল, এটা মুসলিমদের জন্য। ব্যাটায় আর কিছু জানে না!

মাত্রই প্যালেসে ঢুকলাম, এখনই লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না; দিশা না পেয়ে ডানে এগিয়ে গেলাম। সেখানে যে স্থাপনা আছে তার রিনোভেশন চলছে, এটা সাদা পর্দা দিয়ে ঘেরা। এবার সামনে এগিয়ে ডানে গিয়ে দেখলাম, এই প্যালেসটি দাঁড়িয়ে আছে মারমারা সাগরের পাড়ে।

আমি রেলিং এর কাছে এগিয়ে গেলাম, অনেক দর্শণার্থী আছেন সেখানে; নীলাভ সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করছে, নিজেদের মত এনজয় করছে আর ছবি তুলছে। আমি দেখলাম, সাগরের ঐ পাড়ে এক ঘন বসতি, অজস্র বিল্ডিং পাহাড়ের গা বেয়ে একের পর এক উঁকি দিচ্ছে। রাত নেমে এলে এই বিল্ডিংগুলোই বর্ণিল আলো দিয়ে নিজের জৌলুশ জানান দেয়।

কয়েকজন টার্কিশ কিশোরকে সামনে পেলাম, জিগ্যেস করলাম ঐ পাড়ের শহরটার নাম কি? আমার প্রশ্ন আমি তাদের বোঝাতে পারলাম না। নানান কসরত করে শেষতক বোঝাতে পারলে একজন বলল, এমিনোনু; ছেলেটা যখন আমার সাথে ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করছিল, তখন তার বন্ধুরা হাসছিল!

একই ঘটনা ঘটেছিল, গালাতা ব্রীজের পাশে। আমি এক লোককে জিগ্যেস করলাম, গালাতা ব্রীজটা কি হেঁটে যাওয়া যাবে? তিনি নানান কসরত করে ইংরেজিতে যখন বোঝাচ্ছিলেন যে, প্রথমে আমাকে রাস্তা পার হতে হবে তারপর সামনে এগোলেই আমি ব্রীজে হাঁটার রাস্তা পেয়ে যাব, তখন সাথে থাকা তার মেয়ে (ধারণা করেছি মেয়েই হবে) হেঁসে খুন! যাই হোক, সেই কিশোরকে থ্যাংক্স বলে আগে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top