আয়া সোফিয়া – (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-১১)

আয়া সোফিয়া - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-১১)
আয়া সোফিয়া - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-১১)
আয়া সোফিয়া - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-১১)
আয়া সোফিয়া - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-১১)

ইস্তাম্বুল শহরটি পুরোপুরিই একটি পাহাড়ি শহর; গোটা শহর জুড়েই নানান স্থাপনা ও বাসাবাড়িগুলো উঁচু নিচু স্থানে অবস্থিত। আমি মাইক্রো থেকে নেমে সামনে এগিয়ে ডানে টার্ন নিলাম; বেশ খাড়া একটি রাস্তা সোজা চলে গেছে। জনস্রোত দেখে সেদিকেই হাঁটা দিলাম।

রাস্তার মাথায় গিয়ে দেখলাম লাইন, এই লাইনের মাথা দেখা যাচ্ছে না। লাইনের শেষজনকে জিগ্যেস করলাম, এটা কি আয়া সোফিয়ার লাইন? সে বলল হ্যাঁ; দাঁড়িয়ে পড়লাম, নতুন জায়গা, বেশী না বুঝাই ভালো!

লাইন ধীরে ধীরে এগোচ্ছে; সেদিন ছিল শনিবার, শনি-রবি তাদের সাপ্তাহিক ছুটি বলেই কিনা, সেদিন উপচে পড়া ভিড় ছিল। ধীরে ধীরে দেখা দিতে লাগলো আয়া সোফিয়ার অবয়ব, এক ধরনের উত্তেজনা কাজ করছিল বিশেষ এই স্থাপনা নিয়ে।

প্রথমেই একটি মিনার চোখে এলো; আরো ভালোভাবে দেখবার আশায় লাইনে দাঁড়িয়েই থাকলাম। অবশেষে পুরো আয়া সোফিয়ার বাহিরের অংশ দৃষ্টিগোচর হলো; এ এক অনিন্দ্যসুন্দর স্থাপনা। এর সামনে বিরাট খোলা জায়গা রয়েছে, আমি এই মূহুর্তে সেই খোলা জায়গাতেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।

আয়া সোফিয়ার উল্টোদিকে রয়েছে একটি পানির ফোয়ারা, অনেকগুলো বসার বেঞ্চ এবং তার পরে দেখা যাচ্ছে সুদৃশ্য দুটি মসজিদ; তখনো এগুলোর নাম জানি না। আসলে এর মধ্যে একটিই হচ্ছে সুলতান আহমেদ মস্ক বা ব্লু মস্ক! ইস্তাম্বুলের প্রধান তিনটি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সবার তালিকাতেই থাকে আয়া সোফিয়া, টপকাপি প্যালেস বা মিউজিয়াম ও ব্লু মস্ক।

ধীরে ধীরে আঁকাবাঁকা লাইন এগিয়ে চলছে; ইতোমধ্যে প্রায় ৪৫ মিনিট চলে গেছে। লোকজন লাইন থেকে বেরিয়ে ছবি তুলে, ভিডিও করে আবার লাইনে ফিরে আসছে; নানান দেশের লোকজনের কলকাকলিতে মুখর এই চত্তর। দুই একটা টং দোকান আছে, টার্কিশ খাবার বিক্রি করছে, কাছেই কোথাও আইসক্রিম বিক্রি করছে তবে জায়গাটা ঠাহর করা গেল না।

ইস্তাম্বুলের বাচ্চাদের সাধারণত স্ট্রলারে চড়ানো হয়, যেহেতু উঁচুনিচু রাস্তা, স্ট্রলারে চড়ালে বাবা-মায়ের কষ্ট কিছু কম হয়। স্ট্রলারের বাচ্চাগুলোকে দেখেছি পুতুলের চেয়েও সুন্দর। হলুদ ড্রেস পরা এক ছোট মেয়েকে দেখলাম আয়া সোফিয়ার বিশাল চত্তরে কাকের পিছনে ছুটছে; দেখে মনে হলো একটা হামিং বার্ড উড়ে বেড়াচ্ছে!

অবশেষে প্রায় ঘন্টাখানেক পরে প্রবেশ করার সুযোগ হলো আয়া সোফিয়ার গেট দিয়ে; তার খানিক আগেই যোহরের আজান দিয়েছে, সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখানেই যোহর পড়ব। আমি মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করার আগে ওযু করে নিতে চাইলাম; চমৎকার ওযুখানা রয়েছে মূল স্থাপনার বাইরে। ওযুখানার পাশেই মূর্তি সম্বলিত একটি পাথরের ফলক একটি গর্তে রাখা আছে, সম্ভবতঃ অতীত স্মৃতি স্মরণ করাতেই এই আয়োজন।

ওযু করে ভিতরে প্রবেশ করলাম; আল্লাহু আকবার, কি সুন্দর এটি দেখতে! ভাবছিলাম, কেমন করে মানুষ ১,৫০০ বছর আগে এমন অনিন্দ্যসুন্দর স্থাপনা তৈরি করেছিল! আয়তনে এটি বিশাল, উচ্চতায় আকাশসম, সৌন্দর্যে অবর্ণনীয়, আলোকসজ্জায় চোখ ধাঁধানো এবং আগ্রহে মানুষের মনের কেন্দ্রবিন্দুতে!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top