র‍্যাডিসন ব্লু – (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-১০)

র‍্যাডিসন ব্লু - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-১০)

আমার হোটেল ঠিক করেছি সিসলি এরিয়াতে আর ট্রেনিং হবে এই সিসলিরই র‍্যাডিসন ব্লুতে; ৫ দিনের প্রোগ্রাম, সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ২ টা। মূলতঃ দুপুর একটা পর্যন্ত ট্রেনিং, এরপর লাঞ্চ, তারপর ছুটি।

উঠেছি হোটেল ফেভরিতে, চমৎকার ছিমছাম গুছানো হোটেল। স্টাফদের আন্তরিকতা চমৎকার, ভাষাগত সমস্যা তো আছেই, তবে এর মধ্যে প্রথমদিন আমাকে যিনি রিসিভ করেছেন, তার ইংরেজি চমৎকার।

আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, প্রতিদিন হোটেল থেকে ট্রেনিং সেন্টার হেঁটে যাওয়া আসা করব; রাস্তা মাত্র ৯০০ মিটার। এই হাঁটাটুকু এনজয় করতে চাই।

হোটেলে বুফে ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা আছে; প্রথমদিন ধরা খেয়েছি, এরা প্রায় সব খাবারেই টক দেয়; টক ছাড়া এদের চলে না। টমেটো তাদের যে কোন রান্নার অন্যতম উপাদান।

প্রথমদিন বুঝে নিয়েছি প্লেটে কি নেয়া যাবে আর কি যাবে না। চার পাঁচ ধরনের স্যুপ থাকে, আমি টকের ভয়ে ভুলেও টাচ করিনি। তবে এখানে ভুট্রার একটা সালাদ করে খুব সুস্বাদু, প্রতিদিন মাশরুম থাকে, এটাও দারুন, সিদ্ধ ডিম আর ৪/৫ ধরনের ব্রেড থাকে। চা, জুস, এসব মিলে দারুণ ব্রেকফাস্ট হয়।

প্রথমদিন নাস্তা সেরে র‍্যাডিসন ব্লুর দিকে হাঁটা দিতেই দেখলাম গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর তীব্র বাতাস; উইন্ডব্রেকারটা জ্যাকেটের উপর পরে নিলাম। দুটি সমস্যারই সমাধান হয়ে গেল। এরপর গুগল ম্যাপ দেখে হাঁটা দিলাম।

৯ঃ০০ টা বাজার তিন মিনিট আগে আমি পৌঁছে গেলাম আমার নির্ধারিত রুমে; এটি আন্ডারগ্রাউন্ডে, এখানে ডাইনিং রুম আছে। এই হোটেলের ডেকোরেশন শহজেই নজর কাড়ে আর ইস্তাম্বুলের প্রথাগত আলোর ঝলকানি তো আছেই।

আমাকে রিসিভ করেছে আবদেল লতিফ, লেবানিজ যুবক, দেখতে টার্কিশদের মতই সুন্দর এবং হ্যান্ডসাম, অত্যন্ত চমৎকার ইংরেজি বলে, অসম্ভব জেন্টেল এবং মৃদুভাষী একটা ছেলে।

নয়টা পেরিয়ে সোয়া নয়টা বাজতে চলল, ধীরে ধীরে আবদেল লতিফের মুখ কালো হতে শুরু করেছে। সাড়ে নয়টা নাগাদ আবদেল লতিফ শুকনা মুখে রুমে ঢুকে বলল, স্যার আমরা অত্যন্ত দুঃখিত, আমাদের ট্রেইনার সাহেব মারাত্মক এক্সিডেন্ট করেছেন, তিনি আজকে আসতে পারবেন না।

আবদেল লতিফ এই কোম্পানির সমস্ত ট্রেনিং এর কোঅর্ডিনেটর, সে দিশেহারা হয়ে গেছে, কারণ, অনেক টাকা খরচ করে আমি সুদূর বাংলাদেশ থেকে এসেছি, একটা দায়বদ্ধতা তাদের রয়েছে।

প্রথমে আমাকে অফার করা হলো, স্যার, পাশের রুমেই আমাদের একইরকম একটা ট্রেনিং চলছে, সেখানে তিনজন নাইজেরিয়ান ট্রেনিং করছে, আপনি চাইলে সেখানে জয়েন করতে পারেন। আমি বললাম, না; আমি যে প্রোগ্রামটা করতে এসেছি, সেটাই করতে চাই, আপনি এনশিওর করুন ট্রেইনার কালকে আসবে।

আবদেল লতিফ বলল, স্যার ট্রেইনার অবশ্যই কালকে আসবে, আজকের বিষয়টার জন্য আমরা খুবই দুঃখিত, ইত্যাদি ইত্যাদি।

এরপরই সে প্রস্তাব দিল, স্যার আমাদের ট্রেনিং এর একটা পার্ট আছে, সেটা হলো, আমরা একদিন ট্রেইনিদের ইস্তাম্বুলের কিছু মেজর ট্যুরিস্ট প্লেস ঘুরিয়ে দেখাই, আপনি চাইলে আপনার জন্য সে ব্যবস্থা করতে পারি। যাব্বাবা, এ যে দেখছি, মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। বললাম, তাহলে তো খুব ভালো হয়।

আধাঘন্টার মধ্যে গাড়ির ব্যবস্থা হয়ে গেল, ড্রাইভার আমাকে ট্যুরিস্ট প্লেসগুলো ঘুরিয়ে দেখাবে এবং দুপুরে লাঞ্চ করাবে। মোট দশ ঘন্টার প্যাকেজ! মনের আনন্দে রওনা দিলাম।

ম্যাপে দেখা যায়, ইস্তাম্বুল শহরের দুই পাস দিয়ে দুটি সাগর চলে গেছে; দক্ষিণ-পূর্বদিকে মারমারা সাগর এবং উত্তরে কৃষন সাগর। এই দুটি সাগর গিয়ে একসাথে মিশে হয়েছে বসফরাস প্রণালী যেটি ইউরোপ এবং এশিয়াকে পৃথক করেছে। অর্থাৎ, বসফরাস প্রণালীর এক পাশে ইউরোপ এবং অপর পাশে এশিয়া।

ড্রাইভার সোয়াদ আমাকে মারমারা সাগরের পাড়ে নামিয়ে দিয়ে বলল, সামনে গিয়ে ডানে গেলে তুমি পাবা আয়া সোফিয়া, তার পাশে টপকাপি মিউজিয়াম আর আছে সুলতান আহমেদ; তখনো সুলতান আহমেদ কি এটা জানি না। ড্রাইভার আরো বলল, তুমি এখানে আসার দশ মিনিট আগে আমাকে কল দিও। আমি হ্যাঁ বলে আয়া সোফিয়ার পানে পা বাড়ালাম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top