![ট্রানপোর্টেশন সিস্টেম - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-৮) 1 ট্রানপোর্টেশন সিস্টেম - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-৮)](https://shaheenstravelstory.com/wp-content/uploads/2023/09/Screenshot-2023-09-06-130849.jpg)
ট্রানপোর্টেশন সিস্টেমকে এরা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে; এত কম খরচে এখানে এত আরামে চলাফেরা করা যায়, কল্পনারও বাইরে। অন্যান্য খরচের তুলনায় পরিবহন সেবা পানির দামে পাওয়া যায়।
একটা কমন কার্ড ৫০ লিরা দিয়ে প্রথমে কিনে নিতে হয়, পরে সেটাতে যে কোন এমাউন্ট রিচার্জ করে চলাফেরা করা যায় শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং একটি কার্ড দিয়েই মেট্রো রেল, ট্রাম, বাস এমনকি জাহাজও চড়া যায়, কেবল কার্ডে টাকা থাকলেই হলো।
আমি প্রথমে ১০০ লিরা দিয়ে ৫ দিন দিব্যি চলেছি এবং পরে আবার ৫০ লিরা রিচার্জ করেছি। রাস্তায় ট্যাক্সি ক্যাব আছে, দামও সীমার মধ্যে তবে ট্যুরিস্ট দেখলে এই দাম চার পাঁচ গুন বেড়ে যায়।
ছাত্র-ছাত্রীদের সুযোগ তো আরো বেশী! তাদের কার্ডের রঙ আলাদা, ১০০ লিরা রিচার্জ করলে মোট ২৫০ বার পাঞ্চ করার সুযোগ পায়, অনেকের ২৫০ বার পুরো পাঞ্চ করাই হয় না। অর্থাৎ, তারা খুবই দ্রুততম সময়ে আন্তর্জাতিক মানের সেবা পাচ্ছে একেবারে বলতে গেলে বিনে পয়সায়।
এখানে গাড়ি চলে রাস্তার ডান পাশ দিয়ে, অর্থাৎ ড্রাইভিং সিট থাকে গাড়ির বাম পাশে, এতে অভ্যস্ত হতে সময় লেগেছে; আমি দুই তিনবার গাড়ির নীচে পড়তে নিয়েছিলাম, আমি যেদিক থেকে গাড়ি আসবে বলে সতর্ক থাকি, হটাত দেখি গাড়ি আসছে তার বিপরীত দিক থেকে! ধীরে ধীরে সামলে নিয়েছি।
এক বুড়োকে দেখেছিলাম তার বাইসাইকেল নিয়ে মেট্রোতে উঠতে এবং তিনি দিব্যি মেট্রোতে করে বাইসাইকেল পার করে নিলেন। এখানকার মেট্রো স্টেশনগুলো মাটির অনেক বেশী নীচে মনে হয়েছে আমার; ৭-১০ তলা সমান তো হবেই। অথচ কলকাতা বা সিঙ্গাপুরের মেট্রো এত নীচে বলে মনে হয়নি। এবার তো মেট্রোতে মারমারা সাগরের নীচে দিয়ে এলাম।
এখানকার দালানগুলো ৬-১০ তলা বেশীরভাগ, হাইরাইজ বিল্ডিং বলতে গেলে নাই। বিল্ডিংগুলির কিছু পুরোনো ধাঁচের,কিছু নতুন বানানো কিন্তু সবই ঝকঝকে। এখানে সার্বক্ষণিক চলে আলোর খেলা, গোটা শহর আলোময়। ফুটপাতে সাধারণত বড় পাথরের টাইলস থাকে, তবে ছোট পাথরেরও হয়ে থাকে।
এখানকার লোকজনের হাঁটার প্রবণতা বেশী, সেটা প্রথমদিনেই টের পেয়েছি। তারা চাইলেই কিন্তু বাস-ট্রাম বা মেট্রোয় চড়তে পারে, কিন্তু অনেকেই অল্প দূরত্ব বা দেড় দুই কিলোমিটার দিব্যি হেঁটে যায়। আমাদের ট্যুর অর্গানাইজার বলছিল, ইস্তাম্বুল হলো হাঁটার শহর; এখানে রাস্তায় বেরোলেই দেখবেন, সবাই কেবল হাঁটছে।
ইস্তাম্বুলের লোকজন পোশাকে আশাকে একেবারে কেতাদুরস্ত; অধিকাংশই সুন্দর এবং দামী পোশাক পরিধান করে, সেসব পোশাকে রয়েছে নানান বৈচিত্র। এরা চিল্লাপাল্লা করে কথা বলে না, কথা বলে নিজেদের মধ্যে এবং আগ্রহ ভরে।
আমরা যেমন কথাবার্তায় বিস্ময় প্রকাশ করতে বলে থাকি, ‘তাই নাকি’? ‘আরে বলেন কি’? তেমনি সৌদি আরবে বলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লা’ আর ইস্তাম্বুলে বলে ‘ওয়াল্লাহ’! কথায় কথায় ওয়াল্লাহ!