![তুরষ্কের মানুষ - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-৪) 1 তুরষ্কের মানুষ - (ইস্তাম্বুলের অভিযাত্রী-৪)](https://shaheenstravelstory.com/wp-content/uploads/2023/09/319323030_116590321284094_2550109652747166392_n-1.jpg)
তুরষ্কের মানুষের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র জাতিগত বৈশিষ্ট রয়েছে; সেটি তাদের চেহারায় ও আচরণে ফুটে ওঠে। এদের চেহারা অত্যন্ত ধারালো, চামড়া সাদা হলেও তা টিপিক্যাল ইউরোপীয়দের মত না, বরং মিল আছে অন্যান্য আরব রাস্ট্রগুলোর সাথে।
এরা প্রায় প্রত্যেকেই অত্যন্ত হ্যান্ডসাম, সবারই নাক লম্বাটে এবং কিছু কিছু মানুষের নাক একেবারে তরবারির আগার মত। এর পাশেই গ্রীস হবার কারনে গ্রীক চেহারার একটা ভাব এদের মধ্যে প্রবল। এখানকার মেয়েদের চেহারা অতুলনীয়; অত্যন্ত শার্প তাদের চেহারা এবং রয়েছে তীব্র আকর্ষণ। যুবক-যুবতিদের চেহারা যেন গ্রীক দেব-দেবি; এরা নির্ঘাত বেহেস্তী চেহারা পেয়েছে!
এদের চেহারায় একটা ব্যাপার আছে, সেটা না কোমল না রুক্ষ, তবে এরা যে লড়াকু এবং জাতিসত্তা প্রবল তা তাদের চেহারার রেখায় আছে। এদের পক্ষেই সম্ভব এরদোয়ানের বিরুদ্ধে সেনা ক্যু ঠেকিয়ে দেয়া। শুধু তাই নয়, এরা আরো অনেক বড় বড় অঘটনও ঘটিয়ে দিতে পারে।
ছেলেমেয়েরা ওপেন মেলামেশা করে এখানে, যেখানে সেখানে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে, চুমু খায়, ঢলাঢলি করে; এগুলি এখানে জায়েজ! নারী পুরুষের একটা বড় অংশ সিগারেট খায় দুধভাতের মত। ৫০-৬০ বছর বয়সী মহিলারাও বোরখা পরে রাস্তায় সিগারেট টানতে টানতে হাটছে কিংবা পার্কে বসে সিগারেট খাচ্ছে আর হুক্কুর হুক্কুর কাশছে!
মেয়ে বা মহিলারা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে, এমন দৃশ্য অহরহ। বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড একসাথে দাঁড়িয়ে বা হাঁটতে হাঁটতে সিগারেট খাচ্ছে। স্বামী-স্ত্রী পরষ্পর পার্কে বসে গল্প করতে করতে সিগারেট খাচ্ছে; এই তালিকা থেকে কিশোর তরুনীরাও বাদ যাচ্ছে না। তবে এদের সিগারেট চিকন দেখতে, ইদানিং আমাদের দেশেও এমন সিগারেট চোখে পড়ে।
এখানে দেখলাম, মেয়েরা মেয়েদের কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় গালের সাথে গাল মিলায় এবং মাঝে মাঝে চুমু খায়। বান্ধবীরা একসাথে পথ চলতে বা মেট্রোতে গল্প করতে করতে একজন আরেকজনের গায়ে ঢলে পড়ে। প্রেমিক প্রেকিকারা একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় পাবলিক প্লেসে ফ্রেঞ্চ কিস খায়; সম্পর্কগুলোকে এরা প্রাণবন্ত রাখার চেষ্টা করে।
মানুষের মধ্যে যুবক এবং যুবতী শ্রেণিই বেশী। বাচ্চা কাচ্চা খুব একটা চোখে পড়ল না। এরা স্কুল করে কোথায় কে জানে। গাড়ী চলে রাস্তার ডান পাশ দিয়ে। আমি তো কয়েকবার গাড়ির নীচে পড়তে নিয়েছি। গাড়ি যেদিক থেকে আসবে বলে সতর্ক হয়েছি গাড়ি আসছে তার উল্টোদিক থেকে; অভ্যস্ত হতে তিনদিন সময় লেগেছে।
এখানে পুলিশ এবং কুরিয়ার রাইডার ছাড়া সাধারণত আর কেউ মটর সাইকেল চালায় না, এটা আমাকে যার পর নাই বিস্মিত করেছে। ইন ফ্যাক্ট এত চমৎকার বাস, ট্রাম আর মেট্রো সার্ভিস আছে যে মটর সাইকেল চালানোর প্রয়োজনই পড়ে না। যথারীতি সবচেয়ে বেয়াদব কুরিয়ার রাইডাররা, এদের পক্ষেই সম্ভব সিগন্যল পড়লে ফুটিপাত দিয়ে উল্টোদিক থেকে মটর সাইকেল চালানো; এই জায়গাটায় তাদের সাথে আমাদের কোন পার্থক্য চোখে পড়ল না।