এবিসি ট্রেক নেপাল (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০১)

এবিসি ট্রেক নেপাল (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০১)
এবিসি ট্রেক নেপাল (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০১)
এবিসি ট্রেক নেপাল (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০১)

আজ তিনদিন হলো এবিসি ট্রেক থেকে ফিরে এসেছি; কিন্তু শয়নে, স্বপনে, জাগরণে মনের মাঝে অনুরণিত হচ্ছে কয়েকটি নাম; ঝিনু, চমরং, সিনওয়া, ব্যাম্বু, হিমালয়া, দেউরালি, এমবিসি ও এবিসি! মনে হচ্ছে, এই বুঝি ঘন্টির শব্দ এলো আর আমরা ঘোড়া-গাধাগুলোকে সাইড দেয়ার জন্য সরে দাঁড়াচ্ছি!

সপ্তাহব্যাপী এই ট্যুরে কিছু ব্যর্থতার পাশাপাশি অর্জন অনেক; হৃদয় প্রশান্ত হয়েছে, সৃষ্টির বিশালতা আরো কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে, অনুভব করেছি মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিন কেন বলেছেন-“আমি জমিনের ওপর সুদৃঢ় পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি, যাতে তাদের নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে।”

১০ জনের গ্রুপ; একজন এডমিন নয়জন ট্রাভেলার, নানান সময়ে ঢাকা থেকে ফ্লাই করে গিয়ে কাঠামান্ডুতে জড়ো হয়েছে ১৩ অক্টোবর শুক্রবারে। লাঞ্চ সেরে এবং প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে সেখান থেকে একটা ১৩ সিটের এসি গাড়িতে করে পোখারার দিকে রওনা দেয়া গেল!

আগামী ডিসেম্বরে ফ্যামিলি নিয়ে এভাবেই পোখারা যাব ভেবেছিলাম; সেই ভাবনায় ইতি টানলাম। কাঠমান্ডু থেকে পোখারা বা পোখারা থেকে কাঠমান্ডু এখন কিছুতেই ১০ ঘন্টার কমে যাওয়া আসা করা যায় না, যদিও রাস্তা মাত্র ২০০ কিমি। আমাদের সময় লেগেছে ১১ ঘন্টা এবং পোখারায় পৌঁছেছি রাত তিনটায়।

পরদিন সকালে আবার ১০ জন মিলে রওনা দিয়ে পোখারার অফিস থেকে পারমিশন নিয়ে আমরা ১১ঃ০০ টার দিকে টাটা সুমো গাড়িতে রওনা দিলাম ঝিনুর দিকে এবং ঝিনুতে পৌঁছালাম দুপুর ০১:০০ টায়। এই ঝিনু থেকেই ট্রেকিং শুরু হবে; ঝিনুতে গাড়ি থেকে নামলেই ১৩৫ মিটার লম্বা সাসপেনশন ব্রীজটি চোখে পড়ে এবং এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে।

আমরা ঝিনুর একটি রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করে ধীরে ধীরে এগোলাম; এই ফাঁকে আমি জোহর আর আসরের নামাজ একসাথে পড়ে নিয়েছি। টিমের মধ্যে একমাত্র আমিই বেমানান; সাদা-কালো দাঁড়ি আছে, মেয়েদের সাথে ছবি তুলছি না, আবার নামাজও পড়ছি! এসব ট্যুরে একটু আউলা না হলে হয় না!

অতি আনন্দের সাথে ঝিনু ব্রীজটি পার হলাম; এর মাঝে একটু ভিডিও করলাম, এবং এর পরপরই ইপ্সিত ‘অন্নুপূর্ণা বেজ ক্যাম্প ট্রেক’ তথা এবিসি ট্রেকের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম। হাজার হাজার সিঁড়ি, মাটির ট্রেইল ও পাথুরে ট্রেইল পেরিয়ে তবে এবিসিতে যেতে হয়; সে পথ বন্দুর, তীব্র মানসিক শক্তি থাকলেই কেবল তা পাড়ি দেয়া যায়।

তবে, আগে মানুষ পোখারা থেকে ঘান্দ্রুক এসে সেখান থেকে ট্রেক শুরু করত, ফলে একদিন বেশী লাগতো; এখন অনেকেই ঘান্দ্রুক থেকে ৩০ কিলো গাড়িতে পাড়ি দিয়ে ঝিনু এসে সেখান থেকে শুরু করে, ফলে একটা দিন স্ট্রেইট বাঁচিয়ে ফেলা যায়।

এখানে বলে রাখা ভালো, সমতল থেকে ঝিনু ১,৭৮০ মিটার উঁচু এবং আমাদের টার্গেট এবিসি হলো ৪,১৩০ মিটার; অর্থাৎ, আমাদের উঠতে হবে মোট ২,৩৫০ মিটার তথা ৭,৭১০ ফুট! এই হিসেব অবশ্য রওনা দেবার সময় জানা ছিল না; তাতে কি? না জেনেই এক অজানার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।

Scroll to Top