ঝিনু থেকে চমরং (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০২)

ঝিনু থেকে চমরং (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০২)

ঝিনু থেকে চমরং দুই ঘন্টার পথ; দুই ঘন্টাই লাগলো। সাধারণত আমার ডান হাঁটু ঝামেলা করে ট্রেকিং এর সময়; এবার এখনো সেরকম কিছু হলো না, এক সপ্তাহ আগে থেকে নি-গার্ড পরে হাঁটছি। সারা পৃথিবীর সব দেশ থেকে এই ট্রেকে ট্রাভেলাররা আসেন; তাদের বয়স ৬-৮০ পর্যন্ত হয়, অন্ততঃ এবার তাই দেখেছি!

আমরা যখন ভাবছি, বুড়িয়ে গেছি, দাঁড়ি সাদা হতে শুরু করেছে; তখন দেখি হাফপ্যান্ট পরে সাদা চামড়ার বুড়া-বুড়ি দুই হাতে দুই ট্রেকিং পোল নিয়ে দিব্যি ট্রেক করে চলেছেন; গালের চামড়া এমনভাবে ঝুলে গেছে, ওয়াকিং ডেড ম্যান বলেও ভ্রম হয় বৈকি।

আরেকটা বিষয় আছে; সাদা চামড়ারা বেশীরভাগই নিজেদের ব্যাকপ্যাক নিজেরা বহন করছে। আমাদের যেমন ১০ জনের টিমে শেষ পর্যন্ত নয়জনই পোর্টারের হেল্প নিয়েছি, তারা এমন নয়। বিশেষ করে যারা জোয়ান, তাদের মধ্যে তো প্রায় সবাই-ই নিজের ব্যাকপ্যাক নিজেরা ক্যারি করেছে।

এই ঝিনু থেকে চমরং এর পথখানিতে ঘোড়া-গাধা-মানুষ একসাথে চলাফেরা করে। এসব ঘোড়া আর গাধার পিঠে চড়েই সমস্ত সরঞ্জাম উপরে ওঠে, সেই সাথে জিনিসপত্রের দামও বাড়তে থাকে। পুরো রাস্তাতেই ঘোড়া আর গাধার মলে বোঝাই, তবু কোন অভিযোগ ছাড়াই সমস্ত জাতির ট্রেকাররা তরতর করে ওঠা-নামা করে চলেছে।

উত্তেজনা তো ছিলই, সেই সাথে ছিল চ্যালেঞ্জ; ফলে একেবারে প্রথম গ্রুপে সন্ধ্যার আগে আগেই চমরং এর প্যানারোমা গেস্ট হাউজে হাজির হলাম। আমাদের পোর্টার চারজন, তারা আগেই এসে পৌঁছেছে। তাদের সহযোগিতায় আমি আর পল দা একটা রুম পেলাম। পল দা বাংলাদেশী তবে থাকেন নেপালে; একজন নেপালীকে তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছেন এবং ললিতপুরে 29Eleven নামে একটি সুন্দর হোটেল চালাচ্ছেন।

চমরং-এ ফ্রি ওয়াইফাই পাওয়া যায়; তবে, এটাই শেষ, এর পর ওয়াইফাই নিতে হবে ৩০০ নেপালি রুপি দিয়ে। এখানে গোসলের জন্য গরম পানি পাওয়া যায় বিনে পয়সায়, উপরের দিকে গোসলের জন্য ২৫০-৩০০ রুপি দিতে হয়।

আমরা মোট ছয়জন হয়েছি; চারজন এখনো বাকি। এই টিমে একজন পুরুষ আছেন, যার ট্রেকে খুব কষ্ট হচ্ছে আর একজন মহিলা আছেন যার জীবনে এটাই প্রথম ট্রেকিং! হরিবল অবস্থা তাদের; এডমিনের ঘাম ছুটে যাচ্ছে তাদের নিয়ে। আমরা এসেছিলাম চমরং-এ বিকেল ৫ঃ০০ টায় আর তারা এলেন রাত ০৮ঃ৩০ -এ। তারা এসে যখন আমাকে ডাকতে গেলেন, আমি তখন রাতের খাবার খেয়ে গভীর ঘুমে!

ভোরে অন্নপূর্না রেঞ্জের ফিশ টেইল এমনভাবে ধরা দিল, যাতে চোখ ধাঁধিয়ে যায়; বড় সুন্দর সে দৃশ্য, এবিসি ট্রেকের দৃশ্যমান প্রথম সৌন্দর্য দিয়ে ট্রেকের দ্বিতীয় দিন শুরু হলো।

Scroll to Top