লোয়ার সিনওয়া (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৩)

লোয়ার সিনওয়া (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৩)
লোয়ার সিনওয়া (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৩)
লোয়ার সিনওয়া (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৩)
লোয়ার সিনওয়া (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৩)

সকালের নাস্তা শেষ করে ৮ঃ০০ টার দিকে ছোট ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিয়ে রওনা হলাম লোয়ার সিনওয়ার দিকে; বড় ব্যাকপ্যাক পোর্টারের কাছে। সবে মাত্র বর্ষাকাল গেল, প্রকৃতি চারিদিকে সবুজে ভরে রয়েছে। টিমমেটদের সাথে ধীরে ধীরে খাতির জমে উঠছে; আমি পল দা’কে সাথে নিয়ে নীচে নামতে শুরু করলাম।

নীচে নামতে হয় বলেই পরের স্টেশনকে বলা হয় লোয়ার সিনওয়া এবং সেখান থেকে আবার উপরে উঠে যে স্টেশন পাওয়া যায়, সেটার নাম আপার সিনওয়া। তবে, সাধারণভাবে সিনওয়া বলতে আপার সিনওয়াকেই বোঝায়। এমন সমস্ত রেস্ট প্লেসেই থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এখানে থাকার চার্জ কম কিন্তু খাওয়ার চার্জ বেশী।

খাবারের ক্ষেত্রে একটি নিয়ম দেখলাম একেবারে শেষ মাথা পর্যন্ত ফলো করে; সবারই একটি মেন্যু লিস্ট আছে এবং সেসব লিস্টে ঢাকার বড় বড় রেস্টুরেন্টের মতোই সব আইটেম পাওয়া যায়। আমরা ভেতো বাংগালী সাধারণত ভাত-ডাল-সবজি-চিকেন কিংবা ভাত-ডাল-সবজি-পাপড় এর মধ্যেই থাকি। তবে আমি বেশীরভাগ এগ-ভেজ-ফ্রাইড রাইস খেয়েছি আর জ্বরে আক্রান্ত হবার পর কেবল স্যুপ নুডুলস খেয়েছি।

এই খাবারগুলোর খরচ ৬০০-৭৫০ রুপির মধ্যে; সব জায়গায় মোটামুটি একই রেট আর থাকার খরচ ৩০০-৫০০ রুপির মধ্যে। এসব জায়গায় এক মগ কফি খেতে হয় ১৭০ রুপি দিয়ে, একটি ফুজি আপেলের দাম ১৫০ রুপি, ওয়াইফাই ৩০০ রুপি, হট শাওয়ার ২৫০-৩০০ রুপি, ৫ পিসের একটি ওরিও বিস্কুট ১৫০ রুপি!

লোয়ার সিনওয়াতে নামার সময় আরেকটা ছোট সাসপেনশন ব্রীজ পড়ে; খুব সুন্দর এটি দেখতে। এর নীচ দিয়ে তীব্র বেগে গর্জন তুলে প্রবাহিত হচ্ছে ঝর্ণার পানি। আমরা বেশ কিছু ছবি তুললাম এখানে; আমাদের ছবি তুলে দিলো ঢাকা চারুকলার প্রাক্তন ছাত্র জাবির।

এই সাসপেনশন ব্রীজ থেকে যেদিকেই তাকাই না কেন কেবল সবুজ আর সবুজ; থেকে থেকে কিছু জায়গায় দেখা যায় হলুদ, ওগুলো আসলে ধানক্ষেত। পাহাড়িরা জুম চাষ করে ধানগাছ লাগিয়েছে; ক্ষেতগুলো হলুদে ভরে আছে। বড় সুন্দর লাগে সে দৃশ্য।

আমরা লোয়ার সিনওয়াতে থামলাম না এমনকি আপার সিনওয়াতেও থামলাম না; একেবারে থামলাম ব্যাম্বুতে গিয়ে। তবে, ফাঁকে আপেল ও কফি খেয়ে নিয়েছি; এখানে এগুলো ছাড়া চলা কঠিন। ব্যাম্বুতে লাঞ্চ সেরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। এরপর আরো টিমমেটরা এলে তাদের লাঞ্চে বসিয়ে আমরা চারজন দোভানের দিকে হাঁটা দিলাম এবং বিকেল ৪ঃ০০ টা বাজে দোভান পৌঁছে গেলাম।

এক রুমে আমি, পল দা ও পারভেজ ভাই উঠলাম। এরপর হট শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে মাগরিব ও এশা’র প্রস্ততি নিলাম; জোহর ও আসর ব্যাম্বুতে পড়েছি। আর ফজর তো পড়েছি চমরং-এ; আলহামদুলিল্লাহ। সন্ধ্যার পরে দোভান গেস্ট হাউজের মালিক অনিমেষকে আমরা খাবারের অর্ডার করলাম; ৭ঃ০০ টার দিকে ডাক পড়ল। খাবার যখন শেষ করলাম তখন ৭ঃ৪৫ বাজে। আমাদের বাকি টিমমেটদের কেউ তখনো এসে পৌঁছায়নি; আমরা সেই চারজনই আছি।

রাত যখন প্রায় ৯ঃ০০ টা, তখন মেয়ে তিনজন ও আরাফাত এসে দোভানের আংগিনায় উঠলো, সে কি আনন্দ তাদের। আসলে যে মেয়েটি জীবনে প্রথম ট্রেকে এসেছে, তার জন্যই দেরি হয়েছে; বাকিরা বাস্তবে অনেক ফাস্ট।

এরই ফাঁকে খবর এলো, এডমিন একজনকে নিয়ে সিনওয়া বা ব্যাম্বুতে রয়ে গেছেন; ওনার আর হাঁটার ক্ষমতা নেই। উনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চপারে করে চলে যাবেন। ফলে, এডমিন আর আমাদের সাথে মিট করতে পারলেন না। নবাগত চারজনের খাবারের পর সবাই ঘুমাতে গেল নতুন ভোর দেখবার আশায়।

Scroll to Top