হিমালয়া পার হয়ে দেউরালি (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৪)

হিমালয়া পার হয়ে দেউরালি (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৪)
হিমালয়া পার হয়ে দেউরালি (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৪)
হিমালয়া পার হয়ে দেউরালি (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৪)

এডমিনের অনুপস্থিতিতে আমি আর পারভেজ ভাই নেতৃত্বের দায়িত্ব আংশিক পালন করতে লাগলাম। এডমিন গতকাল বলেছিলেন, সকাল ৮ঃ০০টায় বের হতে এবং হিমালয়া পার হয়ে দেউরালিতে গিয়ে অপেক্ষা করতে। সেখানেই আমরা লাঞ্চ করব, এডমিন এসে আমাদের সাথে জয়েন করবেন এবং এরপর আমরা এমবিসি তথা মাছাপুছারে বেজ ক্যাম্পের দিকে আগাবো। আর যিনি হাঁটতে পারছেন না, তিনি দোভান থেকে রেসকিউ হেলিকপ্টারে ফ্লাই করবেন।

সেই মোতাবেক আমরা ৮ জন নাস্তা করে একসাথেই রওনা হলাম; হাঁটার গতির কারনে আমাদের মধ্যে কিছু আগ-পিছ হলো, প্রতিদিনই হয়! তবে, আমাদের সবার আবার দেখা হলো দোভান থেকে বেশ খানিকটা আসার পর একটা ঝর্ণার সামনে এসে। সে কি ঝর্ণা! এক দৃষ্টিতে পুরোটা ধরা পড়ে না, এত তার প্রশস্ততা! বিশাল এক পাহাড় জুড়ে শত সহস্র ধারায় সে ঝরে পড়ছে।

এখানকার পাহাড়ুগুলো এত উঁচু আর এসব পাহাড় থেকে গড়িয়ে আসা ঝর্ণাগুলো এত সুন্দর আর বৈচিত্র্যময় যে, সব দেখার ফুরসতই পেলাম না। অথচ এমন কত ঝর্না দেখার আশায় আমরা আমাদের দেশে ২/৩ দিনের ট্যুর করি।

নাম না জানা ঝর্ণার সেই স্পট পেরিয়ে হাঁটা শুরু করলাম এবং সবার আগে আমি আর পল দা দেউরালি গিয়ে পৌঁছালাম। মাঝে হিমালয়াতে থেমে চা পান করে নিয়েছিলাম; এখানে চা ১৩০ রুপি, এক্সপ্রেসো কফি ২০০ রুপি আর আমেরিকানো ৩০০ রুপি।

হিমালয়া থেকে দোভান এই দুই/আড়াই ঘন্টার রাস্তাখানির মত কঠিন ট্রেইল গোটা ট্রেকে নেই। এখানে এত লম্বা ও খাড়া সিঁড়ি আছে যে, রীতিমত পা ধরে আসে। তবু, এক ধরনের উত্তেজনায় এই পথও পাড়ি দিয়ে দেউরালি গিয়ে লাঞ্চ অর্ডার করলাম।

এডমিন সাথে না থাকলেও আমাদের পোর্টার চারজন সবসময়ই আগে আগে পৌঁছে আমাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে; তাদের কথাতেই রিসোর্ট মালিকরা আমাদের খাবার পরিবেশন করে। দেউরালিতেও ঠান্ডা পানি দিয়ে ওযু করে নিলাম এবং নামাজ পড়ে নিলাম। এরপর লাঞ্চ যখন শেষ হলো, তখন সময় দুপুর সোয়া দুইটা।

রওনা দিব, এমন সময় পারভেজ ভাই ও শাকেরা এসে উপস্থিত হলো। বাকি চারজন পিছনে পড়ে রইল। নতুন মেয়েটার যে হিমালয়া থেকে দেউরালিতে আসতে ভীষণ কষ্ট হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে; এর মধ্যে রওনা দিব কিনা বুঝতে পারছি না। এডমিন সাথে থাকলে আজ রাত এখানেই থেকে যেতাম, পা আর চলছে না।

এই কথা পোর্টারদের বলতেই তারা জানালো, এমবিসিতে রুম বুকিং আর খাবার অর্ডার দেয়া আছে; ওখানে না গেলেও এসব টাকা জরিমানা দিতে হবে। ভয়ের কথা; এডমিন ছাড়া ডিসিশান নেইই বা কি করে? তাছাড়া, আজকে যদি দেউরালিতে ১০ জন থাকার সিদ্ধান্ত নেই, পর্যাপ্ত রুম পাওয়া যাবে, এমন গ্যারান্টি নেই; এটা পিক সিজন বলে ট্রাভেলারের অভাব নেই, সবাই বুকিং করে এসেছে।

পারভেজ ভাই আর শাকেরাকে লাঞ্চে বসিয়ে আমি আর পল দা টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে পড়লাম এমবিসি’র উদ্দেশ্যে। এই পথ যে কত কঠিন আর বিপদসংকুল হবে, তা তখনো বুঝতে পারিনি!

Scroll to Top