দেউরালি থেকে এমবিসি (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৫)

দেউরালি থেকে এমবিসি (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৫)
দেউরালি থেকে এমবিসি (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৫)
দেউরালি থেকে এমবিসি (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৫)

দেউরালি থেকে টিপ টিপ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বের হলেও, মাথা ঢাকিনি; এটিই বড় ভুল হয়েছে! যখন মাথা ঢাকার জন্য পঞ্চো বের করতে থেমেছি, ততক্ষণে ছোট ব্যাকপ্যাক প্রায় ভিজে গেছে। যাই হোক, এর মধ্যেই প্রথমে উইন্ড ব্রেকার পরে তার উপর পঞ্চো চাপিয়ে দিলাম। এর কিছুক্ষণ পরেই শুরু হলো ছোট ছোট হোমিওপ্যাথির বড়ির মত শিলাবৃষ্টি!

এর মধ্যে দেউরালিতেই একটি ঘটনা ঘটেছে; এদের খোলা কলে আমি ওযু করে এসে যখন বসেছি, তখনই বুক একটু ভারী লাগছিল! শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল; আমার যেহেতু ছোট বেলায় এজমা ছিল, তাই আমি সিম্পটমগুলো বুঝি। এর আগের তিনরাতই আমি হট শাওয়ার নিয়েছি, তবে এই গরম এই ঠান্ডা করে মনে হলো ইনফেকশনটা হয়েই গেছে!

আমি এই সময়ে রিস্ক নিতে চাইলাম না; সবার অগোচরে Odaz-500 ট্যাবলেট তথা এজিথ্রোমাইসিন একটি খেয়ে নিলাম এবং এটি ছিল আমার একটি সঠিক সিদ্ধান্ত। সেই অবস্থায় বেরিয়ে বৃষ্টির মধ্যে এগোলাম। আমি আর পল দা আছি; পারভেজ ভাই আর শাকেরা তখনো বের হয়নি।

পল দা আগে আগে চলে যাচ্ছেন, ওনার রেইনকোটও দুই নাম্বার, জুতাও দুই নাম্বার; ওনার পা থেকে মাথা পর্যন্ত সারা শরীর ভিজে গেছে, অথচ এগুলো উনি নেপাল থেকে কিনেছেন ঢাকার ডাবল দামে। ফলে, উনি রিস্ক নিতে চাইলেন না, যত তাড়াতাড়ি এমবিসি’র রিসোর্টে যাওয়া যায় ততই মংগল; দোকানদারদের গালি দিতে দিতে উনি দ্রুত এগোলেন।

পথিমধ্যে এক জায়গায় একটি বিশাল পাথরের শেড আছে; কমবেশী সবাই এখানে বিশ্রাম করে; আমিও করলাম। দেউরালি থেকে এমবিসি’র এই রাস্তাখানি অনেকটাই মেঠো পথ; এতে বিপদ বেড়েছে, বৃষ্টির পানিতে তা কাদা’র সৃষ্টি করেছে, হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে, পাথুরে সিঁড়ি হলে ঝামেলা কম হতো।

এই পথটুকু যেন শেষ হতে চাইছিল না! ঘন্টা তিনেক পর এমবিসি’র রিসোর্টের দেখা পাওয়া গেল; তবে সেটুকু যেতেও যে আরো মিনিমাম ২০ মিনিট লাগবে, তা বেশ বোঝা গেল। অবশেষে গুরুং রিসোর্টে গিয়ে উঠলাম পোর্টারের কথা মতো, তবে পরে জানা গেছে, আমাদের জন্য বুক করা ছিল অন্য রিসোর্ট কিন্তু এডমিনের গাইডলাইন না পাওয়ায় সেখানে না উঠে এখানে উঠতে হয়েছে; খুবই ছোট একটা রুমে ৫ জনের থাকার ব্যবস্থা এখানে!

আমি আজকেও চতুর্থদিনের মত আবার হট শাওয়ার নিতে গেলাম এবং ভুলটা এখানেই করলাম। পল দা ইতোমধ্যেই ফ্রেশ হয়ে গেছেন। আমিও ফ্রেশ হয়ে এসে এখন হিটারের কাছে বসতে গেছি, তখনই পারভেজ ভাই এসে উপস্থিত।

এত ছোট রুমে ৫ জনের আয়োজন দেখে ওনার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে! এর মধ্যে বাকি ৫ জনের কোন খবর নেই, ইতোমধ্যে সন্ধ্যা নেমে গেছে; পারভেজ ভাই বললেন, কতগুলো বাজে ছেলের সাথে ওনার সাক্ষাৎ হয়েছে, এতে করে ভয় আরো বেড়ে গেলো, কারণ, সেই টিমে ৩ জন মেয়ে আছে।

বড় বিপত্তি বাঁধল তখন, যখন পল দা’র মোবাইলে এডমিনের সাথে কথা বলে জানা গেল, তিনি কথা মোতাবেক দেউরালিতে আসতে পারেননি; কারণ, যিনি দোভান থেকে হেলিকপ্টার নিবেন বলেছিলেন, উনি তা নেননি কারণ সেখান থেকে টাকা বেশী চাচ্ছে। ফলে, উনি এক স্টেশন এগিয়ে হিমালয়াতে রয়ে গেছেন এবং এখান থেকে খরচ কম হবে।

আর যায় কোথা! একজন লোকের হেলিকপ্টারের টাকা বাঁচাতে এডমিন দুই দিন ধরে এই আটজন লোকের কাছে থেকে আলাদা! এটি বিস্ফোরণের মত আগুন ছড়িয়ে দিল উপস্থিত তিনজনের মনে; পারভেজ ভাইয়ের শাউটিং-এ রিসোর্ট যেন কেঁপে উঠল। আমিও ঠান্ডা কন্ঠে এডমিনকে জানালাম, কাজটি কিছুতেই ঠিক হয়নি, তিনজন মেয়ে এই বৃষ্টি আর শিলা’র মাঝে কোথায় আছে, কি করছে, কে জানে?!

Scroll to Top