অন্নপূর্ণার পর্বতগুলোর উপর সূর্যকিরণ (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৭)

অন্নপূর্ণার পর্বতগুলোর উপর সূর্যকিরণ (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৭)
অন্নপূর্ণার পর্বতগুলোর উপর সূর্যকিরণ (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৭)
অন্নপূর্ণার পর্বতগুলোর উপর সূর্যকিরণ (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৭)

রাত তিনটা বিশে এলার্ম শুনে উঠলাম; বাকিদেরও জাগালাম। মেয়েদের রুমে ওদের ডাকতে গেল সম্ভবতঃ জাবির; আশ্চর্যজনকভাবে, সবাই রাত চারটার আগে পুরো রেডি হয়ে গেল! আমি ওযু করে নিলাম বা তায়াম্মুম করে নিলাম ফজর পড়ব বলে; শরীরে গতকাল জ্বর ছিল, তবে এখন ভালো লাগছে।

ভেবেছিলাম, পোর্টাররা আমাদের সাথে যাবে না, কিন্তু তারাও ফুল রেডি এবং আমরা ঠিক চারটাতেই রওনা দিলাম এবং অন্যতম সঠিক একটি সিদ্ধান্ত নিলাম। তবে, দুঃখজনকভাবে পিছনে রয়ে গেল কম ট্রেক করতে পারা মেয়েটি। ওর জন্যই আসলে গত তিনদিন বাকিদের দেরি হয়েছে; ফলে, আজকেও ওর জন্য এবিসি দেখা পন্ড হোক, এটা কোনপক্ষই চাইল না।

আমরা গতরাতের তুষার ভেজা ট্রেইলে হাঁটতে শুরু করলাম; এ সময় হেডল্যাম্প খুবই জরুরী, নইলে ট্রেইল চেনা যায় না। এবার ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়লাম; গত তিনদিন যেমন এগিয়ে ছিলাম, এবার আর পারলাম না! এমনিতেই আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, শর্ট ব্রেদ ছিল, তার উপর এমন জিরো বা মাইনাস ঠান্ডায় উপর উঠতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল। একটা প্রোভেয়ার ১০ মিগা ট্যাবলেট খেয়ে নিলাম।

আমরা মোট তিনজন পিছিয়ে গেলাম, ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে; হেড ল্যাম্প আর লাগছে না, তবে সূর্য তখনো ওঠেনি। আমি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে নিলাম এবং সাথে থাকা ফক্স চকলেট চুষতে চুষতে উপরে উঠতে লাগলাম।

অবশেষে এসে গেল সেই মহেন্দ্রক্ষণ! দেখলাম, সবাই বিখ্যাত সেই সাইনবোর্ডের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে আর ছবি তুলছে। আমরা ওদের ১৫ মিনিট পরে পৌঁছালাম। সূর্য তখনো মেঘের সাথে পুরো পেরে ওঠেনি কিন্তু তাতে অন্নপূর্না রেঞ্জের সৌন্দের্যের কিছু কমতি ঘটেনি!

৬ঃ২০ এর দিকে সূর্য উঠলো, পুরো অঞ্চল আলোকিত হতে লাগলো, আমরা প্রাণভরে অন্নপূর্ণার পুরো রেঞ্জের পর্বতগুলোর উপর সূর্যকিরণ উপভোগ করতে লাগলাম; মেঘের কিছু মিছিল তখন আমাদের চাইতেও নীচে অবস্থান করছে। তবে, এ সুখ বেশীক্ষণ সইলো না!

সকাল সাতটার দিকে হটাত করে ৫ মিনিটের মধ্যে চতুর্দিক ঘন মেঘে ঢেকে গেল! গেল তো গেল, আর সূর্যের কোন দেখা নেই; পরিস্থিতি দেখে বোঝা গেল, আজ আর এই সূর্যের দেখা মিলবে না! সাতটার পরে যারা এসেছে তারা মেঘ ছাড়া আর কেউ কিছু দেখতে পারেনি!

এই তীব্র ঠান্ডা আর মেঘের চোখ রাংগানির মধ্যেই আমাদের সাথের মেয়ে দুজন লাল শাড়ি পরে ছবি তুলতে পোজ দিয়েছে। আরাফাত তার ড্রোন দিয়ে ছবি তুলে দিচ্ছে ও ভিডিও করে দিচ্ছে। পোর্টাররা জানালো, এবিসি ক্যাম্পে নাস্তার ব্যবস্থা আছে; আমি মানা করে দিলাম, ক্যাম্পে যেতে আবার ১৫ মিনিট হাঁটতে হবে, যদিও তা দেখা যাচ্ছে। আমি ফিরে গিয়ে এমবিসিতে নাস্তা করার সিদ্ধান্ত নিলাম, তবে এই সিদ্ধান্ত অন্যদের উপর চাপিয়ে দিলাম না।

আমি সবাইকে জিগ্যেস করলাম, আপনারা নাস্তা উপরে উঠে এবিসি ক্যাম্পে খেতে চান নাকি এমবিসিতে গিয়ে খেতে চান। সবাই বলল, তারা এমবিসিতে গিয়ে খেতে চায়। আমি তখন তাদের আহ্বান জানালাম রওনা দেবার জন্য; তারা ছবি তুলতে মশগুল, বিদায় নিয়ে আমি একাই এমবিসি’র পথে পা বাড়ালাম।

Scroll to Top