হিমালয়া (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৮)

হিমালয়া (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৮)
হিমালয়া (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৮)
হিমালয়া (অন্নপূর্ণার পথ ধরে- ০৮)

সকালেই মনে মনে ধরে নিয়েছিলাম, গতকাল যে শান্টিং এডমিন খেয়েছে, তাতে আক্কেল থাকলে তার আজকে ভোর ছয়টায় হিমালয়া থেকে রওনা দিয়ে সকাল ১০ঃ০০ টায় এমবিসিতে বা মাছাপুছারে বেজক্যাম্পে এসে আমাদের সাথে যোগ দেয়ার কথা; তিনদিন তার দেখা নেই!

হলোও তাই; সকাল ঠিক ১০ঃ০০ টায় এডমিন এসে উপস্থিত হলো; হাঁটতে না পারা মেয়েটি কান্নাকাটি করল, আরেক দফা পারভেজ ভাইয়ের রাগ প্রদর্শন হলো, আমিও বেশ কিছু কথা শুনিয়ে দিলাম, ভবিষ্যৎ ট্যুরিস্টদের জন্য এটার প্রয়োজন ছিল!

তা ছাড়াও, এই যে এত জায়গায় থেকে এবং খেয়ে এসেছি, কোথাও কিন্তু কোন পেমেন্ট হয়নি; সব জায়গায় এডমিনের নাম বলে ব্যবস্থা করে দিয়েছে পোর্টাররা। এডমিন না এলে এসব পেমেন্ট হবে কি করে।

যাই হোক, প্রাথমিক মান অভিমানের পর বরফ আবার গলতে শুরু করল। আগের সিদ্ধান্ত ছিল আমরা দোভানে গিয়ে রাতে থাকব, কিন্তু যেহেতু হাঁটতে না পারা ভদ্রলোক হিমালয়া থেকে পরের দিন চপারে উঠবেন, তাই আমাদেরও হিমালয়াতে থেকে যাবার ডিসিশান হলো; একেবারে খারাপ হলো না।

সকালেই একটি এজিথ্রোমাইসিন ৫০০ ট্যাবলেট ও নাপা ১ গ্রাম ট্যাবলেট খেয়ে নিয়েছি; কোন রিস্ক আমি নিতে চাই না। তবু বিকেলে যখন হিমালয়াতে পৌঁছলাম, তখন শরীর একেবারে ভেংগেচুরে এলো। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম এলো; জাবিরের ভাষায় আমি নাকি ঘুমের মধ্যে জ্বরের ঘোরে বিড়বিড় করছিলাম!

যাই হোক, আমার জন্য অর্ডার করেছিলাম স্যুপ নুডুলস; দুই দিন ধরে এই-ই চলছে, জ্বরের মধ্যে আর কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। ঘুম ভেংগে উঠলাম যখন সাতটা বাজে। আমার জন্য স্যুপ নুডুলস তথা স্যুডুলস রুমে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে; তারা কখনোই রুমে খাবার দেয় না, আমাকে দয়া করেছে।

নাপা ১ গ্রাম আজ দুটি খেয়েছি; আরেকটি খেতে হবে! প্রোভেয়ার ১০ একটি খেয়েছি ভোরেই, আরেকটি রাতে খেতে হবে এবং এজিথ্রোমাইসিনও আরেকটি খেতে হবে; সব ওষুধ ডাবল ডোজে নিচ্ছি যাতে অন্ততঃ হেলিকপ্টারে পোখারা ফিরতে না হয়!

আমি তায়াম্মুম করে মাগরিব আর এশার নামাজ পড়ে স্যুডুলস খেয়ে নিলাম; এরপর আয়েশ করে ওষুধ খেতে বসলাম। এডমিনকে বলতেই তিনি ফ্লাস্কে এক লিটার গরম পানি এনে দিলেন; এই ইনফেকশনে ঠান্ডা পানি পান করা কোন কাজের কথা না।

ভোর হবার আগেই ঘুম ভেংগে গেল; ফজরের এলার্ম দেয়াই ছিল। উঠে দেখি, ফ্লাস্কের পানি ঠান্ডা হয়ে গেছে; ভুয়া ফ্লাস্ক! এরপর পোর্টারের কাছে চেয়ে এক মগ গরম পানি পেলাম, তাই দিয়ে মুখ ধোয়ার কাজটা সারলাম।

শরীর একটু ভালো লাগতে শুরু করেছে। হিমালয়ার রেস্টুরেন্টেই সকালের নাস্তার ব্যবস্থা হয়েছে; আজ আবার চারদিন পর দশজনের একসাথে দেখা। এর মধ্যে আমরা সাতজন ট্রেক করে আজ চমরং গিয়ে নাইট স্টে করব আর বাকি তিনজন হেলিকপ্টারে করে প্রথমে এবিসি যাবে, পরে সেখান থেকে পোখারা যাবে।

Scroll to Top